করোনা থেকে পরিত্রাণে বিশেষজ্ঞের নয়টি সতর্কতা

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২০, ০৮:৩৪ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০, ১৫:৩৯

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বাংলাদেশেও প্রাণ সংহারক এই ভাইরাসে আক্রান্ত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৭ জন। অবশ্য এদের মধ্যে পাঁচজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।

এই অবস্থায় সব শ্রেণির নাগরিকদের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সচেতনতাই যথেষ্ট নয় আরো কিছু আবশ্যিক বিষয় রয়েছে যা মেনে চললে করোনার প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মো. আলিমুল ইসলাম নয়টি বিষয় উল্লেখ করেছেন, যা মেনে চললে করোনা থেকে পরিত্রাণ মিলতে পারে। মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের এই অধ্যাপক গতবছরে ডেঙ্গু ভাইরাসের সিরোটাইপ নির্ণয়ের প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছিলেন।

ড. আলিমুলের মতে করোনাভাইরাস উচ্চ তাপমাত্রায় (৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) টিকে থাকতে পারে। গরমে এই ভাইরাস কাজ করবে না কেউ কেউ এমন কথা বললেও দেশের বর্তমান তাপমাত্রায় করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে বলেও তিনি দাবি করেছেন। তার পরামর্শ, কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর যদি সুস্থ হন তবুও তাকে দুই সপ্তাহ অর্থাৎ ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

ড. আলিমুলের গবেষণা তথ্য অনুযায়ী করোনা থেকে রক্ষা পেতে যা যা করতে হবে তা তুলে ধরা হলো। প্রথমত, রোগের জীবাণু অর্থাৎ সার্স করোনা ভাইরাস-২ এর বিস্তৃতি রোধ করা। এজন্য শনাক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। সে সুস্থ হওয়ার পরেও কমপক্ষে আরও দুই সপ্তাহ হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে নিয়োমিত নমুনা পরীক্ষা করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, অসুস্থ রোগীর কফ-থুথুসহ অন্যান্য তরল পদার্থ যা করোনাভাইরাস বহন করে তা ভালোভাবে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক ধ্বংস করতে হবে। আক্রান্ত রোগির চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লোবস, টিস্যু ও অন্যান্য বস্তু ডুবিয়ে রাখতে হবে। অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

তৃতীয়ত, করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে প্রবাসী বাংলাদেশি বা বিদেশি নাগরিকদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় অথবা সরকারি তত্ত্বাবধানে নিজস্ব কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

চতুর্থত, হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীদের ক্ষেত্রে দ্রুত সুস্থতার জন্য অন্যান্য দেশে ব্যবহৃত ওষুধ (রেমডিসিভার অথবা এভিগ্যান বা টামিফ্লু) ক্ষেত্রবিশেষে ইন্টারফেরন আলফা-২ বি অথবা রিকোভার্ড পেসেন্ট প্লাজমা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে যে কোন বয়সের জটিল রোগিদের জন্য ব্যবহার করা যাবে।

পঞ্চমত, করোনার বিস্তৃতি রোধে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, ধর্মীয় উপাসানালয় সাময়িক বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও এ মহামারি চলাবস্থায় সব ধরণের সভা-সমাবেশ সরকারিভাবে বন্ধ করতে হবে। কর্মজীবী ও ব্যবসায়ীদের বাসায় বসে কাজ করতে হবে।

এছাড়া সিনেমা হলও সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। নজরদারি বাড়াতে হবে বস্তিবাসী ও যৌন পল্লীতে চলাফেরায়। এইসময় নিম্ন আয়ের মানুষদের খাবার ও চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে নিতে হবে। না হলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ক্ষুধার তাড়নায় বিভিন্ন জায়গায় ছুটবে। এতে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।

ষষ্ঠত, সুস্থ ব্যক্তিরা নিজ ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরে বের হওয়ার নির্দেশ দিতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি। বিরত থাকতে হবে চুমু খাওয়া। যদি ভুল করে কেউ কাউকে স্পর্শ করে অথবা অন্যের ব্যবহৃত জিনিস যেমন- কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ল্যান্ডফোন, মোবাইল, চশমা, ঘড়ি, ঘরের চাবি, দরজা ও টয়লেটের হ্যান্ডেল স্পর্শ করে তা সঙ্গে সঙ্গে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।

হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে ড. আলিমুলের পরামর্শ যে কোনো ধরনের হ্যান্ডওয়াশ/সাবান বা ছাই দিয়ে হাত কনুই পর্যন্ত ভালভাবে কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ড ধৌত করতে হবে। এছাড়াও দিনে কমপক্ষে পাঁচবার প্রয়োজনে তারও বেশিবার হাত, চোখ, মুখ, নাক হ্যান্ডওয়াশ/সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

সপ্তমত, করোনা একটি সিঙ্গেল স্ট্র্যান্ডেড পজিটিভ সেন্স আরএনএ ইনভেলপ্ড ভাইরাস। তাই এই ভাইরাস সাধারণ সাবান বা ডিটারজেন্ট বা ছাই বা ৭০% ইথানল দ্বারা খুব সহজেই  নিষ্ক্রিয় হয়।

অষ্টমত, আরএনএ ইনভেলপড ভাইরাসসমূহ উচ্চ তাপমাত্রায় (৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসি) টিকে থাকতে পারে। তাই দেশের বর্তমান তাপমাত্রায় করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করতে সক্ষম।

সবশেষ তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যেকোনো রোগে আক্রান্ত পশু-পাখি থেকে সবসময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। যদিও এখনো করোনাভাইরাস দ্বারা গৃহপালিত পশু-পাখি (গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, কুকুর, বিড়াল) ও মাছ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নেই। এবং যারা ধূমপায়ী তাদের অবশ্যই এখনই ধূমপান বন্ধ করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/বিইউ/ডিএম)