যেসব উপসর্গে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাবেন

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২০, ১৯:৫১ | প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২০, ১২:০৮

সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারি ঘোষণা করেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী কী পরীক্ষা করাবেন। এই পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য কোনও একটি পরীক্ষায় চিহ্নিত করা যায় না। একাধিক পরীক্ষার পর তবেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে জানা যায়। তার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পরীক্ষাগারেই করা সম্ভব।

বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. দেবী শেঠি বলেছেন, যদি জ্বর হলেই সবাই করোনা টেস্ট করান তবে এই স্বল্প পরিমাণ করোনাভাইরাস কিট শেষ হয়ে যাবে এবং প্রকৃত সংক্রমিত রোগীকে পরীক্ষা করা যাবে না। কখন করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার প্রয়োজন তার সম্পর্কেও বলেছেন।

ড. শেঠি দেবী আরো জানান, গলা বা বুকে অস্বস্তিসহ জ্বর হলে প্রথমেই নিজেকে পরিবার থেকে একটি ঘরে আলাদা করে নেওয়া উচিত। তারপর দিন অনুযায়ী যে সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে নিম্নরূপ:

প্রথম যেদিন আপনি করোনাভাইরাসে সংস্পর্শে আসবেন সেদিন আপনি একটু অস্বস্তি অনুভব করবেন।

তৃতীয় দিনে আপনার সামান্য জ্বর এবং গলায় অস্বস্তি দেখা যাবে।

চতুর্থ দিনে আপনার সামান্য মাথা ব্যথার উপসর্গ দেখা যাবে।

পঞ্চম দিনে আপনার পেটের গন্ডগোল দেখা দিতে পারে, যেমন ডায়রিয়া, পেট কামড়ানো এই ধরনের উপসর্গ ,মাথা ব্যথা থাকবে। জ্বর একই থাকবে বা বাড়তে পারে।

ষষ্ঠ-সপ্তম দিনে আপনার শরীরে ব্যথা হবে এবং মাথা ব্যথা বাড়তে পারে বা কমলেও পেটের অস্বস্তি বজায় থাকবে এর সঙ্গে খাবারের ইচ্ছা চলে যাবে।

অষ্টম-নবম দিনে বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে আগের উপসর্গগুলো কমতে থাকবে, জ্বর, পেট ব্যথা কমবে, শরীরে শক্তি ফিরে আসতে শুরু করবে কিন্তু সর্দি ও নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো উপসর্গগুলো থাকবে।

ড. দেবী শেঠির মতে, এই ধরনের ঘটনার অর্থ আপনার দেহের মধ্যে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। আপনার দেহের মধ্যে করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু হয়েছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে আপনার করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আপনি সুস্থ হতে শুরু করেছেন। আপনার জ্বর, সর্দি সাধারণ ফ্লু’র কারণে হয়েছে।

অষ্টম-নবম দিনে আপনি যদি শরীরের অবস্থার উন্নতি অনুভব না করেন তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সাধারণভাবে সবাই জানে সাধারণ ফ্লু’র ক্ষেত্রে কী কী উপসর্গ হতে পারে বা উপসর্গগুলো কমলে কি ধরনের অনুভব হয়, সেই অনুভব না হলে, যদি আপনার উপসর্গ না কমে বাড়ছে বলে মনে হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের হটলাইন ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০৯১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ ও ০১৯২৭৭১১৭৮৫ এ যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ড. দেবী শেঠির মতে, যদি জ্বর শুরুর দ্বিতীয় কি তৃতীয় দিনের মাথায় সবাই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করানো হয় তবে এই পরীক্ষার কিট ফুরিয়ে যাবে। তখন দেশে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই সবার কাছে ড. দেবী শেঠির অনুরোধ দয়া করে তাড়াহুড়ো করে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করাবেন না, অপেক্ষা করুন যদি সাত-আটদিনের মধ্যে জ্বর না কমে তবেই পরীক্ষা করান। বড় বড় হাসপাতাল বা ল্যাবে একাধিক পরীক্ষা করে তবেই করোনাভাইরাস চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। যেমন-

সোয়াব টেস্ট

এই পরীক্ষায় একটি তুলার বল আক্রান্ত রোগীর গলা ও নাকের মধ্যে রেখে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেটা পরীক্ষাগারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হয়।

নাজাল টেস্ট

এর জন্য পরীক্ষক একটি স্যালাইনের মাধ্যমে একটি রাসায়নিক নাকের ভেতরে প্রবেশ করায়, তারপর ইনজেকশনের মাধ্যমে নাকের মধ্য থেকে সেটি বের করে নমুনা সংগ্রহ করেন।

শ্বাসনালী পরীক্ষা

একটি সরু টিউবের মতো নল যার নাম ব্রঞ্চোস্কোপ ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

থুতু পরীক্ষা

আক্রান্ত রোগীর থুতু পরীক্ষার জন্য নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। কারণ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সর্দি-কাশি দুটোই হয়ে থাকে।

রক্ত পরীক্ষা

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রক্ত পরীক্ষা। রক্ত পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের প্রকার সম্পর্কে জানা যায়।

কখন করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাবেন- যদি করোনাভাইরাস প্রভাবিত শহরে খুব সম্প্রতি বেড়াতে গিয়ে থাকেন। অথবা কোভিড-১৯ আক্রান্ত কোনও রোগীর সংস্পর্ষে এসে থাকেন তাহলে অবিলম্বে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করান।

এছাড়া জ্বর, সর্দি-কাশি, থুতু দিয়ে রক্ত বেরোনো, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথার মতো কিছু যদি ঘটে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি। করোনাভাইরাস চিকিৎসার এখন পর্যন্ত কোনও ওষুধ বেরোয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তার দেহে এর চিহ্ন বা লক্ষণ খুঁজে পেতে অনেকদিন সময় লেগে যায়। সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জ্বর বা কাশি নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তার ফুসফুসের ৫০% ফাইব্রোসিস (সূক্ষ্ম অংশসমূহের বৃদ্ধি) তৈরি হয়ে যায়, যার মানে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

তাইওয়ানের বিশেষজ্ঞরা কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কি না, সেটা নিজে নিজেই পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যেটা কেউ প্রতিদিন সকালে উঠেই কয়েক সেকেন্ডে একবার পরীক্ষা করে নিশ্চিন্ত হতে পারেন।

পরীক্ষাটা হলো- পরিচ্ছন্ন পরিবেশে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সেটাকে দশ সেকেন্ডের কিছুটা বেশি সময় ধরে আটকে রাখুন। যদি এই দম ধরে রাখার সময় আপনার কোনও কাশি না আসে, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব না হয়, মানে কোনও প্রকার অস্বস্তি না লাগে, তার মানে আপনার ফুসফুসে কোনও ফাইব্রোসিস তৈরি হয়নি অর্থাৎ কোনও ইনফেকশন হয়নি, আপনি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত আছেন।

যদিও জাপানের ডাক্তাররা আরেকটি অত্যন্ত ভালো উপদেশ দিয়েছেন যে, সবাই চেষ্টা করবেন যেন আপনার গলা ও মুখের ভেতরটা কখনো শুকনো না হয়ে যায়, ভেজা ভেজা থাকে। তাই প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর এক চুমুক হলেও পানি পান করুন। কারণ, কোনোভাবেই ভাইরাসটি আপনার মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলেও সেটি পানির সঙ্গে পাকস্থলীতে চলে যাবে, আর পাকস্থলীর এসিড মুহূর্তেই সেই ভাইরাসকে মেরে ফেলবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :