রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ব্যায়াম করুন

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২০, ১৭:১৯

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। চরম ঝুঁকিতে বাংলাদেশও। এ সময় শরীর, স্বাস্থ্য, মন থেকে শুরু করে সবদিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। বিশেষ করে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়াই ভাল। স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা দরকার। কেননা স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য উপযুক্ত খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। শরীরকে সুস্থ এবং দৈনিক কর্মশক্তি বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যাবশক। ব্যায়াম করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

শরীরচর্চার গুরুত্বকে অস্বীকার করা মানে রোগবালাইকে আমন্ত্রণ জানান। বাচ্চারা শরীরচর্চা না করলে মুটিয়ে যাবে, শারীরিক গঠন ঠিক হবে না, মাঝ বয়সীরা ব্যায়াম না করলে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ তাকে চেপে ধরবে আর যেকোনো বয়সে ভালো থাকার একমাত্র উপায় হল শরীরচর্চা বা ব্যায়াম।

পাঁচ মিনিটের বা এক ঘণ্টার শারীরিক কসরত, সময় যাই হোক না কেন, যে কোন সময়ে, যে কোনও ধরনের শারীরিক কসরতেই প্রকৃত স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।

যদি আপনি কোনো উপায়ে হাঁটতে বা নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হন তবে তাই করুন। আপনার কোন জিম লাগবে না। শারীরিক কসরতের সুযোগ সর্বত্রই রয়েছে। কর্মস্থল থেকে শুরু করে ঘরের মধ্যে বা বাগানে যেখানে যখনই সুযোগ পান ৫ মিনিটের জন্য হোক, ১০ মিনিটের জন্য বা ২০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন।

আপনি যদি সিঁড়িযুক্ত বহুতল কোন ভবনে কাজ করেন তবে সব সময় সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন বা আপনার অফিসে দীর্ঘতর পথ ধরে হেঁটে যান। এর সব কিছুই ব্যায়াম হিসেবে কাজ করবে।

কিন্তু কখন করবেন ব্যায়াম? ব্যায়ামের সঠিক সময় কোনটি? এ নিয়ে অনেকেই বিপত্তিতে পড়েন। অনেকে সময় না বুঝে যখন তখন ব্যায়াম করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। তাই নিয়মিত শরীরচর্চার জন্য ব্যায়াম করতে হবে সময় মতো।

সাধারণত সারা রাত ঘুমের পর সকালে ব্যায়াম করাই উত্তম সময়। সকালে ব্যায়াম করতে পারলে সারা দিন শরীর থাকে ফুরফুরে। কাজকর্মেও বাড়তি এনার্জি পাওয়া যায়।

সকালে যাদের সময় হয় না তারা চাইলে শেষ বিকেলেও ব্যায়াম করতে পারেন। কারণ সকালের মতো শেষ বিকেলেও অর্থাৎ সন্ধ্যার আগের সময়টা থাকে নরম আবহাওয়া। যেহেতু ব্যায়ামে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে তাই ব্যায়ামের জন্য নরম আবহাওয়াই ভালো।

কিন্তু যদি প্রচণ্ড রোদে দুপুর বেলা ব্যায়াম করা হয় তবে দ্রুত শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। শরীর থেকে ঝরে বাড়তি ঘাম।

আবার অনেকেই কর্মব্যস্ততার জন্য সারাদিন সময়ই পান না। তারা চাইলে রাতেও ব্যায়াম করতে পারেন। তাতে কোনও সমস্যা নেই।

আর যারা সকাল-সন্ধ্যা বাসায় থাকেন তারা দিনের যেকোনও সময় ব্যায়াম করতে পারেন।

বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, ব্যায়ামের আগে কিংবা পরে পেট ভরে খাবার খাওয়া যাবে না। তাতে ব্যায়ামের কোনও উপকারিতাই থাকে না। একটা কলা একটু বিস্কিট খেতে পারলেই ভালো। আর ব্যায়ামের আগে কিংবা পরে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা যাবে না। ব্যায়াম শেষে একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর পানি পান করুন। আর যথাসম্ভব মিষ্টি, কোমলপানীয় আর ফাস্টফুড থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, খেলাধুলা করা উত্তম ব্যায়ম। পাশাপাশি ইয়োগা বা যোগব্যায়ামও উত্তম ব্যায়াম হিসেবে বেশি পরিচিত। ইয়োগা বা যোগব্যায়াম শারীর-বিজ্ঞানের সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। দেহকে নীরোগ, সুস্থ, সবল ও কর্মঠ রাখতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এতে অটুট স্বাস্থ্য ও মজবুত দেহ গড়ার পাশাপাশি যোগ-অভ্যাস করে নানা প্রকার অলৌকিক শক্তি অর্জন করা যায়।

যোগ অর্থ নিজের চেতনা বা অস্তিত্বের বোধ। সংযমপূর্বক সাধনা করে আত্মাকে পরমাত্মার সাথে যুক্ত করে প্রশান্তি লাভকেই বলে যোগ। যোগব্যায়ামের প্রতিটি ক্রিয়ার পেছনেই শরীর ও মনের পর্যবেক্ষণ প্রসূত গভীর জ্ঞানের পরিচয় রয়েছে। অল্পসময়ে দেহের প্রতিটি স্নায়ু, শিরা, গ্রন্থি ও পেশীকে মজবুত করে স্বাস্থ্য অটুট রাখার এবং নীরোগ দেহে দীর্ঘায়ু লাভের নির্দোষ ও অব্যর্থ পদ্ধতি যোগব্যায়াম। যোগব্যায়ামের যে সমস্ত আসন দ্বারা ধ্যান, প্রাণায়াম ও যোগের নানা প্রক্রিয়া অভ্যাস করা হয়, সেগুলো হলো ধ্যানাসন বা যোগাসন। যেমন পদ্মাসন, ধনুরাসন, শবাসন, সিদ্ধাসন, বীরাসন ইত্যাদি। নিয়মিত যোগব্যায়ামে দেহ নমনীয় ও কমনীয় হয় এবং দেহের ক্ষিপ্রতা বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু যোগব্যায়াম আছে, যেগুলো যেকোনো পরিবেশে এবং যেকোনো সময়ে করা যায়।

পদ্মাসন বলা হয় মনকে শান্ত করতে পদ্মাসন একমাত্র উপায়। কিন্তু আপনি কি জানেন নিয়মিত পদ্মাসন করলে আপনি হয়ে উঠবেন পদ্মের মতোই সুন্দর আর শরীর থাকবে ব্যথামুক্ত। মন স্থির থাকে। প্রথমে দু’পা সামনের দিকে ছড়িয়ে বসুন। এবার বাঁ হাত দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে হাঁটুর কাছ থেকে ভাঁজ করে বাম পায়ের ঊরুর ওপর ডান পা রাখুন। তারপর বাম পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে একই নিয়মে ডান ঊরুর ওপর রাখুন। দেখবেন যেন দুই পায়ের গোড়ালি দুটো তলপেট স্পর্শ করে। হাত দুটো দুই হাঁটুর ওপর রাখুন। হাতের তালু ওপরের দিকে থাকবে এবং হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ও তর্জনী ধরে রাখুন। মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।

ধনুরাসন এই ব্যায়ামটি করলে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। তার ফলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। শরীরের দুপাশে হাত রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার মাটি থেকে ঊরু ওপরে তুলে হাঁটু ভেঙে খাড়া করুন। পেট মাটিতে লেগে থাকবে। বুক ও গলা ওপরে তুলে দুহাত দিয়ে দু’পায়ের গোড়ালি ধরুন। হাত দুটো টানটান সোজা থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক। হাঁটু যথাসম্ভব মাটি থেকে ওপরে তুলতে চেষ্টা করুন। দু’হাঁটু জোড়া লেগে থাকবে। দৃষ্টি ওপরে থাকবে।

শবাসন শরীরকে সম্পূর্ণ রিল্যাক্স করতে এই ব্যায়াম খুবই উপকারী। শরীরকে রিল্যাক্স করার পাশাপাশি ব্যায়াম আমাদের ত্বকে পুনরুজ্জীবিত করে। শরীর সোজা রেখে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটি সোজা রাখুন শরীর বরাবর। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক।

(ঢাকাটাইমস/২৩ মার্চ/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :