স্লোভেনিয়ায় বাড়ছে করোনা রোগী, বিপাকে বাংলাদেশিরা

রাকিব হাসান, ভিপাভা, (স্লোভেনিয়া) থেকে
 | প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০২০, ২২:১৯

মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে কোভিড-১৯ খ্যাত নোভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। লকডাউনের কারণে দেশটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নেই আমেরিকা, কানাডার মতো নগদ অর্থ সহায়তা। এ অবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় নাগরিকরাসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এ পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে ৪৪৩ জনকে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী আক্রান্তের সংখ্যা স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে এবং এরপর পর্যায়ক্রমে ক্রানিয়ে ও ছেলইয়েতে। করোনায় গত দুই দিনে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো তিনে।

সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর দুইটায় স্লোভেনিয়ার বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী টমাজ গ্যানটারের পক্ষ থেকে এ তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়। এদের মধ্যে একজন স্লোভেনিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ম্যাটলিকায় বসবাস করতেন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে ওই ৯২ বছরের নারী সম্প্রতি প্যারিস গিয়েছিলেন। অন্যদিকে গতকাল করোনায় স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা ছিলো।

গত ১৯ মার্চ করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রোধে স্লোভেনিয়াকে লক ডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়।

পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে অযথা বাহিরে ঘোরাফেরা করলে চার শ ইউরো জরিমানা করা হবে।

বাস, ট্রেনসহ সকল ধরনের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। লুবলিয়ানাতে অবস্থিত স্লোভেনিয়ার একমাত্র এয়ারপোর্ট ইয়োজে পুচনিক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকেও গত ১৭ই মার্চ থেকে সকল ধরনের ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ইতালির মতো ক্রোয়েশিয়া ও হাঙ্গেরির সাথেও সাময়িকভাবে সীমান্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট পয়েন্ট ছাড়া অন্যান্য সকল জায়গায় প্রতিবেশী অস্ট্রিয়ার সাথেও স্লোভেনিয়ার সীমান্ত যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এশিয়াসহ ইউরোপের বাহিরে বিভিন্ন দেশে প্রায় দুইশোর অধিক স্লোভেনিয়ার নাগরিক আটকা পড়েছেন। তাঁদেরকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিগগির কাজ শুরু করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

স্পার, হফার, লিডল, ফামা ডিএমসহ যে সকল সুপারশপ তাঁরা এ পরিস্থিতিতে তাঁদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে অন্যান্য অনেক দেশের মতো স্লোভেনিয়াতেও অর্থনৈতিক এবং পর্যটন খাতে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটগুলো এখন প্রায় জনশূন্য। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে স্লোভেনিয়ার সরকারের ম্যাক্রোইকোনোমিক অ্যানালাইসিস সেন্টারের পক্ষ থেকে চলতি অর্থ বছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিলও সাড়ে তিন শতাংশ যেটি দেড় শতাংশ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে দেশটির অনেক অর্থনীতিবিদ ধারণা করছেন।

বিশেষ করে বার, রেস্টুরেন্ট কিংবা বিভিন্ন ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকায় দেশটির অনেক মানুষই বিপাকে পড়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতির সামাল দিতে স্লোভেনিয়ার বর্তমান অর্থমন্ত্রী আন্দ্রেই শিরচেলি বিভিন্ন মেয়াদে সহজ শর্তে ঋণ ও বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সাহায্য প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইয়ানেজ ইনশার পক্ষ থেকে এক টুইটার বার্তায় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিকে ১৯৯১ সালে স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতির মোকাবেলায় সকলকে মনোবল ধরে রেখে একযোগে কাজ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

২০১৮ সালের জনগণনা অনুযায়ী স্লোভেনিয়াতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২০ এর কাছাকাছি। এদের মধ্যে পাঁচ জন শিক্ষার্থী। মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষক, যিনি ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানার অধীনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করছেন তাঁর সাথে কথা বলে জানা গেলো যে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো স্লোভেনিয়াতেও করোনা ভাইরাসের এ বিস্তার ঠেকাতে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে যার প্রভাবে শিক্ষার্থীরা বেশ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। কেউই সঠিকভাবে বলতে পারছেন না যে কবে সামগ্রিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো আবার খুলে দেওয়া হবে যদিও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশি মালিকানায় পরিচালিত দুইটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে এবং মাহমুদুল হাসান শুভ যিনি লুবলিয়ানার ট্রুবায়েভা সেস্টায় অবস্থিত "তান্দুরী" নামক একটি বাংলাদেশি ও ইন্ডিয়ান খাবারের রেস্টুরেন্টের মালিক। তিনি জানান, এ পরিস্থিতির কারণে তিনি বেশ বিপাকে পড়েছেন। খুব বেশী দিন হয়নি তিনি এ রেস্টুরেন্টের মালিকানা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এ রকম পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে তাঁকে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে যা তাঁকে ব্যাপক লোকসানের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। স্লোভেনিয়াতে বসবাসরত অন্যান্য বাঙালিদের প্রতিক্রিয়াও একই। সরকার জরুরি অবস্থা জারি করায় নিত্য প্রয়োজনীয় সেবাদানকারী কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন- ফার্মেসি, হাসপাতাল, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, সুপার শপ এবং নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির কিছু খাবারের দোকান ছাড়া সকল কিছু বন্ধ রাখা হয়েছে। যার প্রভাবে তাঁদের অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। ফলে সাময়িকভাবে তাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। সকলেই এ পরিস্থিতির উন্নতি কামনা করছেন।

ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

প্রবাসের খবর এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :