ইতালিতে একদিনে মৃত্যু ৭৪৩ জনের

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২০, ০৯:১৮ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০, ০৯:২২

কমরেড খোন্দকার, ইউরোপ ব্যুরো প্রধান

মৃত্যু যেন ইতালির পিছু ছাড়ছে না। চীনের উহান শহর থেকে আগত করোনাভাইরাসে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ইউরোপের দেশটি। মৃত্যুর সংখ্যা যেমন দিনদিন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুর সংখ্যা আগেই চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী দুদিনেই চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে ইতালির ছয় কোটি মানুষ। শুধু মঙ্গলবার একদিনে ৭৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৬০১ জন।  এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছয় হাজার ৮২০জন। একদিনে নতুন আক্রান্ত পাঁচ হাজার ২৪৯জন।

দেশটিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৩৯৩ জন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আট হাজার ৩২৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮৯৪ জন। চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ৩০ জন।

এনিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ১৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি।

প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে জনগণের সচেতনত বৃদ্ধি করতে মনে সাহস জোগাতে প্রায় প্রতিদিনই জনগণকে সান্ত্বনা দিয়ে টেলিভিশনে ভাষণ দিচ্ছেন। কারও যেন মনোবল এখনই দুর্বল হয়ে না যায় সে কথা বলছেন। করোনা মোকাবেলায় জনগণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ পর্যন্ত ৩২.৫ বিলিয়ন ইউরো দেশের অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য বিশেষ বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে প্রশাসনে আরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে গোটা ইতালিতে।

প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে দেশজুড়ে ‘জরুরি নয়’ এমন সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বাড়ির বাইরে সব ধরনের খেলাধুলা ও ব্যায়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুপারমার্কেট, ফার্মেসি, পোস্ট অফিস ও ব্যাংক খোলা থাকবে এবং গণপরিবহনও সচল থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে বলেন, ‘আমরা দেশের উৎপাদন ইঞ্জিনের গতি ধীর করবো কিন্তু বন্ধ করবো না।’ তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালি বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে। তবে দেশের এই কঠিনতম সময় সহসাই কাঁটিয়ে উঠার আশ্বাস দেন তিনি।

ইতালিতে বর্তমান জরুরি আইন অমান্য করলে ‘৪০০ ইউরো থেকে ৩০০০ ইউরো’ জরিমানা করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে।

ইতালির সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চল লম্বারদিয়ায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভাইরাস যতদিন শেষ না হয় ততদিন ধৈর্য ধরে যেন সবাই চলাফেরা সীমিত করে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান লোম্বারদিয়ার প্রসিডেন্ট আত্তিলিয়ো ফোনতানা।

এদিকে ইতালির ২০ অঞ্চলের মধ্যে লোম্বারদিয়ায় করোনার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত (মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়া ,ক্রেমনাসহ) ১১টি প্রদেশ। আজ এ অঞ্চলে মারা গেছে ৪০২ জন। শুধু এ অঞ্চলেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চার হাজার ১৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে ।

মাক্সসহ অন্যান্য জিনিসের সংকটকালীন সময়ে চীন থেকে ১.৫ মিলিয়ল মাক্সের একটি চালান গতকাল মিলানে এসে পৌঁছেছে বলে জানান লোম্বারদিয়ার প্রসিডেন্ট আত্তিলিয়ো ফোনতানা। এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছে,স্পেন ৪৯৭,জার্মান ৩৪ ফ্রান্স ২৪০,সুইজারল্যান্ড ২,নেদারল্যান্ড ৬৩, অস্ট্রিয়া ৭,বেলজিয়াম ৩৪,নরওয়ে ২,সুইডেন ৯,ডেনমার্ক ৮,গ্রিস ৩, পর্তুগাল ১০ জন।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/কেকে/জেবি)