খালেদার ৭৭৫ দিনের কারাবাসের অবসান

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২০, ১৬:২৭ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০, ১৬:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

৭৭৫ দিন। বছরের হিসেবে দুই বছর ৪৫ দিন। সময়টা কম নয়। দীর্ঘ এই সময় কারান্তরীণ থাকার পর মুক্তি পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সরকার তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আপাতত সাজা স্থগিত রেখে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হলো তাকে।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে রায় দেন ঢাকার জজ মো. আখতারুজ্জামান। রায়ের পর ওই দিনই নাজিমউদ্দিন সড়কের ওই কারাগারে নেওয়া হয় ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে।

করোনা নিয়ে সারাদেশেই আতঙ্ক। এ পর্যন্ত কভিড-১৯ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। সারা পৃথিবীতে মারা গেছেন সাড়ে ১৬ হাজারের বেশি। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ রাখার ঘোষণা এসেছে। মানুষকে বলা হয়েছে, যে যার ঘরে থাকতে। সেই অবস্থায় হঠাৎই বিএনপি নেত্রীকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মঙ্গলবার বিকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ-সংক্রান্ত সুপারিশ করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সুপারিশ অনুমোদন পাওয়ার পর মুক্তি পেলেন তিনি।

তবে এই  সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। অন্য হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে পারবেন না। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বিদেশে পাঠানো মানে তাকে ‘সুইসাইডের’ মুখে ফেলা।

৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার বন্দিজীবন এটাই নতুন নয়। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় এক বছর সাত দিন বন্দি ছিলেন বিএনপির শীর্ষ এই নেতৃত্ব। তখন তাকে রাখা হয়েছিল সংসদ ভবনের একটি বাড়িতে।

স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ এক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। এরপর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ‘৮৪ সালের ৩ মে ও ‘৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিন দফায় বন্দি হয়েছিলেন তিনি। তবে তখন ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাসায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল তাকে।

এক-এগারোর সরকারের সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছিল, তার একটি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা। এতিমদের জন্য আসা দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে করা ওই মামলার রায়ে সাজা ভোগ করছেন তিনি।

২০১৮ সালে কারাগারে যাওয়ার পর তার সহযোগিতার জন্য গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকে কারাগারে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। এটিও নজিরবিহীন ঘটনা।

কারান্তরীণ হওয়ার পর বিএনপি নেতারা মনে করেছিলেন, আইনি লড়াই চালিয়ে দলীয় প্রধানকে মুক্ত করবেন। এজন্য নিম্ন আদালতের রায় নিয়ে আপিল বিভাগেও গিয়েছিলেন তারা। আপিলের কয়েকমাস পর জামিনও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মুক্তি পাননি। তার বিরুদ্ধে করা অন্য মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিএনপি অবশ্য এটিকে বরাবরই সরকারের ষড়যন্ত্র হিসেবেই অভিযোগ করে আসছে।

এর মধ্যে গত ২৯ অক্টোবর জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ওইবারও একই জজ মো. আখতারুজ্জামানই এ রায় দেন।

তার একদিনের পর জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় আপিলের রায় দেন হাইকোর্ট। যেখানে তার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। আদালত এ ব্যাপারে বলে যে, ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে (খালেদা জিয়াকে) সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়াই যুক্তিযুক্ত। কারণ সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করার ক্ষেত্রে যাতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়।’

কারাগারে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও নানা ঘটনা ঘটে। তার অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে বারবার জামিন আবেদন করেও ইতিবাচক সাড়া পাননি তার আইনজীবীরা। পরে তাকে দেশের অভিজাত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য নিতে চাইলেও সেই অনুমতিও পায়নি বিএনপি নেতারা। এ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে বিএসএমএমইউতেই চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তিনি এতদিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।  

তার বিরুদ্ধে আরও যেসব মামলা

দুটি মামলায় রায় হওয়ার পর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও অন্তত ৩৪টি মামলা রয়েছে বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে নাইকো মামলা, গ্যাটকো মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলার বিচার চলছে। এগুলো দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত।

বাকি মামলাগুলো রাষ্ট্রবিরোধী ও অপরাধজনিত মামলা। যানবাহনের আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সহিংসতা, নাশকতা, ভুয়া জন্মদিন পালন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগসংক্রান্ত মামলা। এর মধ্যে ২৬টি মামলা হয়েছে ঢাকায়। এছাড়া কুমিল্লায় তিনটি, পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/এইচএফ/জেবি)