সংকটে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফকে পাশে চান অর্থমন্ত্রী

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২০, ১৭:০৪ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০, ১৭:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনার কারণে পুরো বিশ্ব সম্প্রদায় এখন একটি ক্রান্তিকাল পার করছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল  বলেছেন, আজ মানব সম্প্রদায়ের জীবন ও অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।  তাই এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপকে আমাদের পাশে থাকার অনুরোধ করছি। 

বুধবার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদরদপ্তরের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগিতা নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেরে বাংলনগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই ভিডিও কনফারেন্সে সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. ফজলে কবির নিজ দপ্তর থেকে এ কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং আইএমএফকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব যে বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে তাদের বৃহত্তর সহযোগিতা নিশ্চিত করবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেমন, বিগত তিন বছর ধরে ধারাবাহিক ৭ শতাংশের অধিক হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮.১৫ শতাংশ, যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ। আমরা এই বছর ৮.২ শতাংশ আশা করছিলাম। আমাদের এই ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। দুর্ভাগ্যক্রমে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি জিডিপি-র ১.১ শতাংশ হতে পারে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বিশ্লেষণ এই আশংকা ব্যক্ত করেছে। যখন আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় আছি। এমন একটি সময়ে বাংলাদেশসহ, বিশ্ব অর্থনীতি করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন।

বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই অবগত আছেন যে এই মারাত্মক ভাইরাসের সংক্রমণ অতি দ্রুত ছড়ায়। করোনা সংক্রমণ রোধে এক মরিয়া পদক্ষেপ হচ্ছে অভূতপূর্ব লকডাউন, শাটডাউন এবং যোগাযোগ ব্যাহতকরণ। যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিবার্য়ভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশ্ব শেয়ারবাজার ইতোমধ্যে ২৮-৩৪% হ্রাস পেয়েছে। এই মন্দা দীর্ঘকাল স্থায়ী হলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১.৫% এ নেমে যেতে পারে। বাংলাদেশও এর প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেছে। আমরা উদ্বিগ্ন, COVID-19 সংকটটি আমাদের অর্থনীতিকে বহুমাত্রিক দিক থেকে আঘাত করতে পারে। ইউরোপ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের শাটডাউনের কারণে আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের চাহিদা হ্রাসে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলোতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিকে অনেকটা চাঙ্গা করে রেখেছে। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন যে এই করোনা ভাইরাস মহামারিজনিত কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন বলে রেমিটেন্সের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন। কোন দেশের একার পক্ষে এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সম্ভব নয়। তাই এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপকে আমাদের পাশে থাকার অনুরোধ করব। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং আইএমএফকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব যে বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে তাদের বৃহত্তর সহযোগিতা নিশ্চিত করবে।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ১৪ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক তহবিল গঠন করেছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর সহায়তার জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে আইএমএফ, এই অর্থের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার পাবে স্বল্প আয়ের দেশগুলো। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ থেকে একটি বড় অংশ সহযোগিতা আশা করছে সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায়।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/জেআর/জেবি)