বিদেশফেরতদের জন্য আতঙ্কে ব্যাংকাররা

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২০, ১০:০২ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০, ১২:১৫

রহমান আজিজ
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের প্রভাব বিশ্বের ১৮৩ দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়ছে। গতকাল পর্যন্ত ৩৯ জন আক্রন্ত এবং পাঁচজন মৃত্যুবরণ করেছে এদেশে। সরকার জনসমগম এড়ানো ও বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া বাধ্যতামূলক করলেও অনেকে মানছে না। এতে করে করোনার ঝুঁকিরা মধ্যে রয়েছে এদেশের মানুষ। বিশেষ করে ব্যাংকারদের ঝুঁকি বা আতঙ্ক বেড়েছে। কারণ সরকার সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও ব্যাংক খোলা রেখেছে।

গতকাল বেশকিছু ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. শাহিন হোসেন প্রধান নামে এক কম্পিউটার ব্যবসায়ী গত শুক্রবার সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি কম্পিউটার আমদানির জন্য গত এক সপ্তাহ সিঙ্গাপুর অবস্থান করেছেন। দেশে ফিরেই তিনি কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার লেনদেন-সংক্রান্ত কাজে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে যান শাহিন। সেখানে বৈদেশিক লেনদের জন্য তার পাসপোর্ট বের করলে দ্বায়িত্ব কর্মকর্তা নিশ্চিত হন তিনি সদ্য বিদেশফেরত। এরপর তার সঙ্গে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে শাখা ব্যবস্থাপক বিষয়টি সমাধান আনেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহিন হোসেন ঢাকা টাইমসকে জানান, ‘ব্যবসায়ী কাজে প্রায় বিদেশে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন আগেও গিয়েছি। গত শুক্রবার দেশে ফিরেছি।’

দেশে ফিরে কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমার ব্যবসায়িক বেশকিছু কাজ ব্যাংকে ছিল এ কারণে গিয়েছিলাম। এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। একটু বাসা থেকে বের হয়নি।’

বেশ কয়েকজন ব্যাংকার ঢাকা টাইমসকে জানান, ‘আমরা সরকারি ছুটির মধ্যেও অফিস করব, এতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা খুবই আতঙ্কে রয়েছি। কারণ গ্রাহকরা বিদেশ থেকে এসেই ব্যাংকে আসছেন। আবার অনেক ব্যাংকরারও বিদেশ থেকে ফিরে অফিস করছেন। এটা সচেনতার অভাব। সচেনতা না বাড়লে আমরা তথা আমাদের দেশের মানুষ ঝুঁকিতে পড়বেন।’

এদিকে, রাজশাহীর পুঠিয়ায় গত ১৯ মার্চ ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে ব্যাংকের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন এখন ব্যাংক কর্মকর্তা। অথচ নিয়ম অনুযায়ী তার ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ছিল। গত সোমবার ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে ব্যাংক থেকে ধরে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুমানা আফরোজ।

সিটি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চলমান রাখতে আমি ক্লান্তিকালীন সময়েও অফিস করব। দেশের মানুষ অর্থের সংকটে যেন না পড়ে এ জন্য। তবে দেশের জনগণকে সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার এ ক্লান্তিকালীন সময়ে দেশের মানুষের স্বার্থে ১০ দিনের ছুটির ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবারের চিত্র দেখে মনে হলো এটি ঈদ বা কোনো আনন্দ উৎসবের ছুটি। এখনো মানুষ সচেতন না। তারা ঈদের ছুটির আমেজের মতো গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন গাদাগাদি করে। কিন্তু একবারও ভাবেনি এখানে কেউ আকান্ত থাকতে পারে।

আতঙ্কের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, বিদেশ থেকে ফিরে হোম কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন না থেকে ব্যাংকে আসা বা ঘুরে বেড়ানো অবশ্যই অন্যদের জন্য আতঙ্কের বিষয়। প্রসাশন কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে কাজ করছেন এটি আরও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ব্যাংকারসহ দেশের মানুষ সহজেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবে।