স্বাধীনতা দিবসে করোনার হানা

এই ঘাতককেও পরাজিত করতে হবে

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২০, ১২:৫৩ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০, ১৩:৫৭

আরিফুর রহমান

আজ ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিকে যাচ্ছি আমরা। এই মহান দিনে জাতি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছে একাত্তরের শহীদদের। স্বাধীনতার এই প্রাক-সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত (আসলে পালিত) হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে, যার ডাকে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে। তার প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আমরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই লাল সালাম। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে সম্ভ্রম হারানো লাখো মা-বোনের প্রতি সমবেদনা ও শ্রদ্ধা।

আজ এমন এক দিনে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ নামের করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এই অদৃশ্য ঘাতকের আক্রমণে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর গত প্রায় তিন মাসে সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এখন চিকিৎসা নিচ্ছে তিন লাখের বেশি রোগী। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। এই ভাইরাস মোকাবিলায় সারা বিশ্ব আজ লকডাউন। মানুষের জীবন, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির। মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে বিশ্বে।

এমনই এক ভয়ের কাল তৈরি হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে। বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী লেলিয়ে দিয়েছিল তাদের হানাদার বাহিনী। অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে তারা হামলে পড়েছিল নি1রস্ত্র বাঙালির ওপর। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অতর্কিত আক্রমণ প্রতিহত করে বাঙালি দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। দীর্ঘ নয় মাসের মরণপণ লড়াই আর এক সাগর রক্ত পেরিয়ে  স্বাধীনতার লাল সূর্যের আলোয় অবগাহন করে বাঙালি।

আমরা একটু পেছন ফিরে তাকাই। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি পাকিস্তানি জান্তারা। তারা উল্টো নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে বাঙালিদের। এরপর চরম আঘাত হানে ২৫ মার্চের কালরাতে। ভারী অস্ত্রের মহুর্মুহু গর্জনে হায়েনারা রক্তের বন্যা বয়ে দেয় শহরে, নগরে, বন্দরে।

শুরু হয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, তিন লাখ নারীর সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলার বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে লাল-সবুজ পতাকার স্বাধীন বাংলাদেশের।

স্বাধীনতার ৫০ বছরের দুয়ারে এসে আরেক যুদ্ধের সামনে বাংলাদেশ। সারা বিশ্ব এক মহাযুদ্ধ মোকাবিলা করছে। এমন বিশ্ব দেখেনি কেউ কখনো। ধনী-গরিব সব রাষ্ট্রের একই শত্রু- একটি অণুজীব- করোনাভাইরাস। মানবজাতির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া এই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ার কোনো অস্ত্র বিশ্বের কাছে নেই। তাই অসহায় কাল পার করছে মানবজাতি। এর মধ্যেই যুদ্ধ চলছে। আমাদের পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র যুদ্ধ ও অস্ত্র। বিচ্ছিন্নতার বিরহই এখন ঐক্য। এই ঐক্যই পারে মানবজাতিকে বাঁচাতে।

অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যত দিন না কার‌্যকর ভেকসিন তৈরি হচ্ছে, কিংবা একে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়, তত দিন আমাদের নিরস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে পালন করতে হবে কিছু স্বাস্থ্যবিধি ও শিষ্টাচার।  

স্বাধীনতার এই দিনে আমরা শপথ নিই, বিশ্বজুড়ে প্রাণসংহারী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সতর্কতা, স্বাস্থ্যবিধি ও শিষ্টাচার মেনে চলার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে এই ঘাতক ভাইরাসকে পরাজিত করতেই হবে। তা না হলে হেরে যাবে মানবজাতি।

আমাদের পাঠক, লেখক. বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।

সম্পাদক: দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকাটাইমস২৪.কম ও সাপ্তাহিক এই সময়।