এসএমইর জন্যও সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন
প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২০, ১৪:৩৮ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০, ১৪:৪৬
আমরা যারা দেশীয় পণ্যের উৎপাদনশীল ব্যবসা করি, বছরের এ সময়টাতে আমাদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। উৎসব প্রিয় বাঙ্গালীর সামনে অনেক বড় দুইটা উৎসব, পহেলা বৈশাখ এবং ঈদ। এই উৎসব গুলোকে সামনে রেখে অন্য আর সবার মত আমাদের কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়া ও চলছিল ব্যাপক ভাবে। পরিকল্পনা ছিল চামড়াজাত পণ্য সাপ্লাইয়ের পাশাপাশি, আমাদের নিয়মিত ও নতুন গ্রাহকদের জন্য নতুন ও আকর্ষণীয় বেশ কিছু পণ্য নিয়ে বাজারে আসার।
সারা বছর লাভ ক্ষতি মিলিয়ে টিকে থেকে এ সময়টার জন্য আমরা অপেক্ষা করি, আগের লস কভার করে সামনে দিকে এগিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু এবার বছরের ঠিক এ সময়েই বিশ্ব জুড়ে দেখা দিল ভয়াবহ ব্যাধি করোনা ভাইরাস। যার সংক্রমণে সারা বিশ্বের মধ্যে নেমে এলো যেন এক স্থবিরতা। বেঁচে থাকতে হলে মানুষ থেকে মানুষ দূরে থাকতে হবে। এক সাথে থাকা যাবে না, কাজ করা যাবে না।
ছাত্র অবস্থায় যখন থেকে একটা মেশিন আর একজন শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবসা বড় হয়েছে, শ্রমিক সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু কখনোই আমরা আমাদের শুধু নিজেদের জন্য ভাবিনি, পাশাপাশি আমাদের শ্রমিকদের কল্যাণের জন্যও ভেবেছি। এক সাথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এরা সবাই আমাদের পরিবারের মত।
সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমাদের শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে, আজকে থেকে কারখানা’র উৎপাদন বন্ধ করে দিলাম। সে সাথে প্রতিটি শ্রমিক পরিবার যাতে এক মাস খেতে পারে, সে পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী, মাস্ক, সাবান, দরকারী কিছু ওষুধ পত্র, তাদের হাতে তুলে দিলাম। এ সময়টাতে তারা বাসায় থাকবে এবং নির্ধারিত তারিখে স্বশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও বিকাশ বা অন্য কোন মাধ্যমে তাদের বেতন পরিশোধ করার জন্য ব্যবস্থা নিলাম। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যত দিন কারখানা বন্ধ রাখা লাগে, রাখবো। তাদের সকলের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার চেয়ে আমাদের কাছে কখনোই ব্যবসা বড় নয়।
চোখে মুখে অন্ধকার দেখছিলাম, যখন কর্পোরেট অর্ডারসহ নিশ্চিত অর্ডার গুলো বাতিল হয়েছে। জমানো সব টাকা ফ্যাক্টরির পেছনেই খরচ হয়েছে। ট্যানারি স্থানান্তরের সময় ও বিনা দোষে আমাদের ফ্যাক্টরির পানি, বিদ্যুৎ এর লাইন কেটে দিয়েছিল। প্রায় ৩ মাস ফ্যাক্টরির খরচ টানতে হয়েছে তেমন কোন রিটার্ন ছাড়া। জানিনা কতদিন এভাবে ফ্যাক্টরি চালাতে পারব! অনেক ঝড়, ঝাপ্টা পার করেছি কিন্তু এই ১৫ বছরে শ্রমিকদের বেতন দিই নাই, এমন হয় নাই।
আমি পরিতাপের সাথে লক্ষ করি, অনেকেই ব্যবসায়ীদের কটাক্ষ করে, ছোট করে অনেক কথা বলে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কখনোই তাদের শ্রমিকদের বাদ দিয়ে কোন কিছু চিন্তা করে না। শুধু মাত্র নিজেদের জন্য নয় বরং শ্রমিকদের সাথে নিয়েই এরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সচেষ্ট থাকে।
পৃথিবীর এই মহা দূর্যোগ যদি আরো লম্বা সময় চলতে থাকে, তবে অনেক বড় বড় ধণী দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও একটা বড় খারাপ সময় আসবে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর দেশীয় পণ্যের প্রতি ভালবাসাই পারবে এই কঠিন সময় মোকাবিলা করতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আশা করেছিলাম আমাদের এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য দিক নির্দেশনা বা কোন প্রণোদনা থাকবে। সেরকম কোন ইঙ্গিত পেলাম না। আমরা চাই এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকার থেকে গ্রহণ করা হোক।
আমরা বিশ্বাস করি এই দূর্যোগও এক সময় কেটে যাবে। আমরা আবার সুস্থভাবে কাজে ফিরতে পারব। এই শ্রমজীবী মানুষের হাত ধরেই আবার নির্মিত হবে দেশ, আমার বাংলাদেশ।
সবাই নিরাপদ থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
লেখক: তানিয়া ওয়াহাব, উদ্যোক্তা