কোথায় আছেন ফালু?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ মার্চ ২০২০, ২১:৫৬

বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালু এখন কোথায়? তিনি কি দেশে আছেন? নাকি বিদেশে? দীর্ঘ ২৫ মাসের বেশি সময় কারান্তরীণ থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তার মুক্তির সময় বা পরে কোথাও দেখা যায়নি মোসাদ্দেক আলী ফালুকে। এ নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেই এসব প্রশ্ন সামনে আসছে।

দলের একাধিক নেতাকর্মী বলছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দলীয় চেয়ারপারসনের আশেপাশে ছায়ার মতো থাকতেন ফালু। সরকার বা দলের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবধরনের সভাতেও দেখা যেতো তাকে। চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তার পরিচিতি ছিল বেশ। কিন্তু এখন কোথাও তার ছায়াটিও দেখা যায় না।

সরকারের নির্বাহী আদেশে বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ওই হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মুক্তিকে ঘিরে বিএসএমএমইউতে জড়ো হয়েছিলেন দলের মহাসচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসনের এক সময়ের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুকে দেখা যায়নি কোথাও।

হাসপাতাল থেকে বিএনপি নেত্রীকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানে তার বাসভবন ফিরোজায়। সেখানেও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে উপস্থিত থাকলেও ফালু ছিলেন না।

এই মুহূর্তে ফালু কোথায় আছেন, এই তথ্যও দিতে পারছেন না তার ঘনিষ্ঠজনরা। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে গেছেন, বলতে পারছে না কেউ।

এনিয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও প্রশ্ন আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির ঢাকা মহানগরীর একজন নেতা উষ্মা প্রকাশ করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, দল ক্ষমতায় থাকতে দলীয় পরিচয়কে ব্যবহার করে নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য হাতিয়ে নিয়েছেন ফালু। কিন্তু এখন বিএনপি নেত্রীর দুঃসময়ে তার খোঁজ নেই। এটি দুঃখজনক।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা ফালু সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেননি। আলোচনা ছিল তিনি ঢাকা-১২ (তেজগাঁও-রমনা ও শেরেবাংলা নগরের একাংশ) আসন থেকে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে লড়বেন। অথচ ওই নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নপত্রও কেনেননি।

এর আগে ২০০৪ সালে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ফালু ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ছিল। আর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তার পক্ষে ভোটে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না। পরে অবশ্য বর্তমান সরকারের আমলে ফালু কারাগার থেকে মুক্তি পান।

রাজনীতি থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন ফালু। ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট তাকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। কিন্তু পদ পাওয়ার পরপরই জানিয়ে দেন, তার আগ্রহ নেই। পরে পাঠিয়ে দেন পদত্যাগপত্র।

তখন চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই এক ফ্যাক্স বার্তায় তিনি পদত্যাগপত্র দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন। তবে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি।

বিএনপির আগের কমিটিতে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মোসাদ্দেক আলী। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিতি আছে তার।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সমিতি অ্যাটকোর সভাপতি ছিলেন। সিকিউরিটিজ, আবাসন, অ্যাগ্রো, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় জড়িত এই ব্যবসায়ী এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সর্বশেষ ফালুকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ দেশে আসার পর। এরপর থেকে আর হদিস নেই মোসাদ্দেক আলী ফালুর। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ দুদকের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে দায়ের করা এসব মামলায় গত অক্টোবরে তার কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/ ২৬মার্চ/এইচএফ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :