‘মুক্ত’ খালেদাকে আর আদালতে যেতে হবে না

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২০, ২২:০২ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০, ২২:০৫

আমিনুল ইসলাম মল্লিক, ঢাকাটাইমস

জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছর সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মানবিক বিবেচনায় ছয় মাসের সাময়িক মুক্তি পেলেও তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা ঝুলছে। এসব মামলার কয়েকটিতে স্থায়ী জামিনে আছেন, আবার কিছু মামলায় মেয়াদি জামিন।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও আর্থ্রাইটিসের রোগী ৭৫ বছরের খালেদা জিয়াকে কি আর আদালতে যেতে হবে? কী বলেন তার আইনজীবীরা?

এ নিয়ে কথা হয় খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য সগীর হোসেন লিওনের সঙ্গে। ৩৪ মামলায় জামিনে থাকা খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে হবে কি না- জানতে চাইলে এই আইনজীবী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জামিন এক বিষয়। আর আদালতে হাজিরা অন্য বিষয়। সাজা হওয়া দুই মামলায় ছয় মাস আদালতে যেতে হবে না ম্যাডামকে। কিন্তু অন্যান্য কিছু মামলার তারিখের দিন ম্যাডামকে আদালতে যেতে হবে। এটাই সাধারণ নিয়ম।’

এই কিছু মামলার মধ্যে রয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলা, নাইকো ও গ্যাটকো মামলা। বাকি মামলাগুলোর অধিকাংশই স্থায়ী জামিনে আছেন তিনি। কোনোটাতে এক বছরের জামিনেও আছেন। বলেন সগীর হোসেন লিওন।

তবে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জামিন ও জরুরি বিষয় ছাড়া আসামিকে আদালতে হাজির না করতে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সুপ্রিম কোর্টের এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কোনো মামলাতেই খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে হচ্ছে না। এমনটাই মনে করেন খারেদার আইনজীবী প্যানেলের এই সদস্য।

এক প্রশ্নের জবাবে সগীর হোসেন বলেন, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় খালেদা জিয়াকে কারামুক্তি দিয়েছেন। একরকম শর্ত সাপেক্ষে জামিন। শর্ত ভঙ্গ করলেই জামিন বাতিল করা হবে। তাকে কারাগারে যেতে হবে।

দুই বছর ৪৫ দিন কারাগারে থাকার পর গতকাল বুধবার (২৫ মার্চ) মুক্তি পেলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বেলা তিনটা পাঁচ মিনিটের দিকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি দেয়ার পর তাকে গ্রহণ করেন পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালের কেবিন থেকে কড়া নিরাপত্তায় তাকে বের করে এনে গাড়িতে তোলা হয়।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও সে সময় বিএনপির শত শত নেতাকর্মী সেখানে ভিড় করে খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন। সেখান থেকে সরাসরি তাকে গুলশানের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে ২৪ মার্চ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছয় মাসের জন্য খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তি দেয়ার পর থেকে এই ছয় মাস গণনা শুরু হবে।

দুটি শর্তে তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান আইনমন্ত্রী। এই ছয় মাস খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

আইনমন্ত্রী বলেন, ''বেগম খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায়, মানবিক কারণে, সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।''

খালেদা জিয়ার মুক্তির ঘোষণা আসার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, এতে দল ও নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি বোধ কাজ করছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। পরে দুদুক আপিল করলে হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় নিম্ন আদালত। মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর।    

(ঢাকাটাইমস/২৬মার্চ/মোআ)