কণ্ঠশিল্পী অভির মৃত্যুরহস্য অন্ধকারে, ময়নাতদন্ত রিপোর্টই হয়নি

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২০, ০৮:৪৫ | প্রকাশিত : ২৭ মার্চ ২০২০, ০৮:৪২

গত বছরের ১৩ জুন সকালে বংশালের মকিমবাজার কবরস্থানে কণ্ঠশিল্পী মাহমুদউল্লাহ অভিকে রক্তাক্ত উদ্ধার করা হয়। ১৯ জুন রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। এরপর কেটে গেছে নয়টি মাস। পুলিশ এখনো অন্ধকারে এই মৃত্যুর রহস্য নিয়ে।

একে একে পাঁচজন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে এই মামলায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আনতে পারেননি। ফলে আজও জানা যায়নি অভির মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে প্রায় পাগলপ্রায় অভির বাবা। মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন না হওয়ায় পরিবারের অন্য সদস্যরাও একরকম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা অভির মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যা হিসেবে সন্দেহ করে অঙ্গুলি তুলছেন তার প্রেমিকার দিকে।

কণ্ঠশিল্পী অভির স্বজনরা বলছেন, কবরস্থান থেকে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে চিকিৎসক তাদের জানান, ভারী কিছু দিয়ে অভির মাথায় আঘাত করা হয়েছে। এর পরও মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দিহান থাকার সুযোগ নেই।

একটি পক্ষ মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে অভির স্বজনরা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরের দাবি করেন।

অভির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি প্রথমে বংশাল থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে তা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এ মামলার তদন্ত চলছে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভির মৃত্যু দুর্ঘটনা, না হত্যা- তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

গত ১৩ জুন সকালে বংশালের মকিমবাজার কবরস্থানে অভিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতাল) নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৯ জুন রাতে মৃত্যু হয় তার।

অভির মৃত্যুর পর তার বাবা বাদি হয়ে বংশাল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান বংশাল থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নুরে আলম ও উপপরিদর্শক রসূল সামদানী। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্¦ দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইফুল ইসলামকে। তিনি বগুড়ায় বদলি হয়ে গেলে তদন্তের দায়িত্ব পান গোয়েন্দা পরিদর্শক রবিউল ইসলাম। তিনি ধানমন্ডি থানায় বদলি হয়ে গেলে মামলা এখন তদন্ত করছেন গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম মৃধা।

চার তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে তার হাতে আসা মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা ও কবে নাগাদ প্রতিবেদন দেওয়া হবে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম মৃধা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত তার নিয়মেই চলছে। সময় দিয়ে কী তদন্ত নির্ধারণ করা যায়! আমরা এখনো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাইনি।’

অভির পরিবারের একটি সূত্র জানায়, প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে তার ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যেটি বিচ্ছেদের দিকে যাচ্ছিল।

মৃত্যুর পর অভির ট্যাব খুলে মেসেঞ্জার বক্সে ঢুকে দেখা যায়, শেষের কথোপকথনে দুজনের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। অভি কোনো কারণে মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইছিলেন না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারী তাকে 'দেখে নেওয়া'র হুমকি দেন। এই ছিল তাদের ম্যাসেঞ্জারে সর্বশেষ কথোপকথন।

অভির স্বজনরা জানান, কবরস্থানের পাশেই ওই নারীর বাসা। ধারণা করা হচ্ছে, অভিকে বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করার পর কবরস্থানে ছুড়ে ফেলা হয়। ঘটনার পর 'আ' আদ্যক্ষরের ওই নারীর বাসায় গিয়ে শুকনো রক্তের দাগও দেখা গেছে। এমনকি অভিকে রক্তাক্ত উদ্ধারের দিন সকালে তিনি বাসায় গিয়ে অভির 'নিহত' হওয়ার খবর জানান বলে দাবি অভির স্বজনদের।

অভি হত্যার তদন্তের ব্যাপারে তার বোন তাসনুহা আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, থানা-পুলিশের কাছে সব তথ্য-প্রমাণ তুলে দেওয়ার পরও তারা নাকি কিছুই খুঁজে পায়নি। পরে মামলা ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। অভিযুক্ত নারীকে বাঁচাতে একটি মহল এই অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তাসনুভা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুর নয় মাস পরেও পুলিশ ময়না তদন্ত প্রতিবেদন আনতে পারেনি। এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে প্রায় পাগল হতে চলেছেন আমার বৃদ্ধ বাবা।’

(ঢাকাটাইমস/২৭মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :