মজবুত হোক সম্পর্ক হোম কোয়ারেন্টিনের দিনে

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২০, ১১:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বলতে গেলে হোম কোয়ারেন্টিনে এখন আমরা সবাই। কারো সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। সবাই নিজ নিজ ঘরে অবস্থা করছি। এসময়টা কিছু ক্ষেত্রে অনেক বড় সুযোগ। যেমন পুরাতন ধুলোপড়া  সম্পর্ক ধুয়ে মুছে ফেলার যায় এখন। কীভাবে?

ব্যস্ততার কারণে বহুদিনের পুরোনো বন্ধুকে কল করে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, কেমন আছিস? কিংবা যে বান্ধবীর সঙ্গে অনেকদিন অভিমান জমে আছে। এবার সুযোগ হলো ইগোর জ্যাম ছাড়িয়ে তাকে বলা, প্লিজ নিরাপদে থাকিস। বাসার বাইরে যাস না।

যে গীটার, বাঁশি, বেহালা কিংবা প্রিয় হারমোনিয়ামের সাথে বহুদিন যুগলবন্দী হয় না। এবার তাদের সাথে আড্ডা হোক। ইন্টারনেট ঘেঁটে দারুণ কোনো কিছু শিখে ফেলুন। কে জানে, আপনি হয়ত আবার আপনার স্বপ্ন ফিরে পাবেন।

শেষের কবিতার অমিত লাবণ্যের প্রেমের মতো, যে প্রেমের শুরু, সেখানে লাবণ্য আর অমিত সংসার নামক চক্রে দুটো সমান্তরাল রেললাইনের মতো পাশাপাশি থেকেও জড়াজড়ি করে নেই। এই সময়টা না হয় অমিত, লাবণ্যের জন্য ভোরের ধোঁয়া ওঠা চায়ের সারপ্রাইজ প্ল্যান করুক। ইউটিউবের কুকিং ক্লাস থেকে প্যান কেক বানিয়ে বলুক, তোমাকে ভালবাসি লাবণ্য।

আর লাবণ্য তার গয়নার বাক্স খুলে অমিতের প্রিয় লাল চুড়ি আর আর লাল টিপে সাজুক। অমিতের গীটার আর লাবণ্যের গুনগুন এক হয়ে মিশে যাক সন্ধ্যার বাতাসে।

চাকরিজীবী দম্পতির জীবনে রোমান্স মেলে ছুটির দিনে। এবার পুরো ক্যালেন্ডার জুড়ে ছুটির দিন হোক। বাচ্চাদের চোখ লুকিয়ে চুটিয়ে প্রেম হোক। সময়ের অভাবে যা কিছু 'তার' অজানা রয়ে গেছে আপনার কাছে, এবার কাছাকাছি থেকে জেনে নিন।

ছেলে-মেয়ে বড় হলে বাবা মায়ের সাথে দূরত্ব বাড়ে। কথাটা আসলে পুরোপুরি সত্যি না। সত্যিটা হলো, ছোট বেলায় যে দূরত্ব বাবা-মা তৈরি করে। সেটা বড় বেলায় ছেলে-মেয়ে বাবা মায়ের উপরেই প্রয়োগ করে। বাচ্চা ভুল করেছে বলে চড় দেবেন। তাহলে বড় হয়ে সেই বাচ্চা আপনাকে বন্ধু কেন ভাববে?

এই সময়টাতে বাচ্চাদের জানার বোঝার সবেচেয়ে বড় সুযোগ, কীভাবে ভাবছে বাচ্চারা, তাদের মধ্যে বাবা মায়ের প্রতি কি ধরনের অনুভূতি তৈরি হয়েছে, হচ্ছে, সেটা জানুন, দূরত্ব থাকলে মিটিয়ে ফেলুন। বুঝতে চেষ্টা করুন আপনার সাথে তাদের ভালোবাসার বন্ধন কতটা শক্ত।

বাচ্চা যা বলে তাই শুনি টাইপের সম্পর্ক না, সম্পর্ক হবে দায়িত্ব শেয়ারের। বাচ্চাকে শেখান রুম গোছাতে, আপনাকে কাজে সাহায্য করতে। সে ভালো কিছু করলে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে উৎসাহিত করুন। বাচ্চারা এবং আপনি মিলে দারুণ কিছু বানিয়ে। স্মৃতিতে ফ্রেম করে রাখুন।

এই মুহূর্তে আসলে আপনার কাজের বুয়া, দারোয়ান দরিদ্র আত্মীয়, প্রতিবেশির কিংবা পাশের বস্তির মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর সময়। আপনার একটু সাহায্য, একটু আন্তরিকতা হয়ত একজনের জীবন বাঁচাবে। মানুষ হওয়ার দায় মেটানোর সুযোগ এখন।

সব শেষে বলি, আপনার আশেপাশে পশুপাখিদের কথা ভুলবেন না। গলির মোড়ের চা পুরির হোটেল বন্ধ তাই কুকুরগুলোর খাওয়া হচ্ছে না। সম্ভব হলে খাবার দিবেন। এই পৃথিবীর জন্য আমরা মানুষেরা ক্ষতিকর। ওই সব প্রাণীরা না। ওদের একটু খাবার দিলেই চলবে।

পৃথিবী টিকে আছে ঘৃণায় না, ভালোবাসায়। এই ভালোবাসার টানে নিজের পোষা বিড়ালকে সমস্ত সম্পদ লিখে দিচ্ছে কোনো বৃদ্ধ, কিংবা নিজের একটা অঙ্গ দিয়ে অন্য একটা প্রাণ বাঁচাচ্ছে কেউ। অথবা মাঝরাতে, কোনো এক তরুণী, একটা কলের অপেক্ষায় বালিশ ভেজাচ্ছে অকারণে।

আজ পৃথিবীর সঙ্কটে, শারীরিক দূরত্ব বাড়লেও ভালোবাসা যেন না কমে। আর তাতেই সবার মাঝে সুস্থতা আসবে।

ঢাকাটাইমস/২৭মার্চ/এসকেএস