আর্থিকখাত স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের যত উদ্যোগ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২০, ১৬:১৫ | প্রকাশিত : ২৭ মার্চ ২০২০, ১৫:৫০

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের আর্থিক খাত ভয়াবহ মন্দার মধ্যে পড়েছে। এর ধাক্কা বাংলাদেশও পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশের আমদানি-রপ্তানি কমে গেছে। দোকান, শপিংমহলসহ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক অবস্থা বন্ধ রয়েছে। এতে করে দেশের আর্থিক খাতে বড় ধরণের প্রভাব পড়তে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আর্থিক খাতকে স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশে ব্যাংক।

এর মধ্যে রয়েছে আগামী জুন পর্যন্ত অর্থ ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি না দেখানো, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ও বিকাশ-রকেটের ক্ষেত্রে চার্জ না নেওয়া, মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন সীমা বাড়ানো, বন্ড বিক্রি করার অনুমতি, একই ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী টাকার ব্যবস্থাপনা, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বা কলমানির সুদহার কমানো ও সিআরআর কামানো ইত্যাদি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব মন্দার কারণে বাংলাদেশের আর্থিক খাত যেন ভেঙে না পড়ে এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- আগামী জুন পর্যন্ত কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, আগামী ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত ওই মানেই রাখতে হবে। এর চেয়ে বিরূপ মানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবিলায় গ্রাহকদের জন্য নানা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ও বিকাশ-রকেটের মতো সেবায় কোনো মাশুল দিতে হবে না। পাশাপাশি জরুরি কেনাকাটায় লেনদেন সীমাও বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে জরুরি সেবা চালুর জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো মাশুল কাটা যাবে না। এভাবে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ও প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার জরুরি পণ্য কেনা যাবে। এর বেশি কেনাকাটায় মাশুল দিতে হবে।

একইভাবে বিকাশ-রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে জরুরি কেনাকাটাতে কোনো মাশুল কাটা যাবে না। পাশাপাশি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে প্রতি মাসের লেনদেন সীমা ৭৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। একইসঙ্গে দিনে একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলন করলে কোনো মাশুল কাটা যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রপ্তানির অর্থ দেশে আনার সর্বোচ্চ সময়সীমা ১২০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আমদানি পণ্য দেশে আনার সময়সীমাও বাড়িয়ে ১৮০ দিন করা হয়েছে। এতদিন এলসি’র দেনা পরিশোধের পর সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে পণ্য দেশে আনার বাধ্যবাধকতা ছিল।

স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১৮০ দিন করা হয়েছে। বিদ্যমান নিয়মে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংকগুলো এক বছরের বাকিতে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎ খাতের পণ্য আমদানি করতে পারে। আর শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের বাকিতে আনা যায়। তবে উভয় ক্ষেত্রে ৬ মাস বৃদ্ধির ফলে এক বছর এবং দেড় বছর সময় পাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।

এছাড়া রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল-ইডিএফের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ৬ মাস মেয়াদে ঋণ নেওয়া যায়। পরে সময় বাড়িয়ে ৯ মাস করা যায়। এ নির্দেশনা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এ সংক্রান্ত অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।

অপর এক সার্কুলারের মাধ্যমে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিল করা খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যাংকগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আগের সার্কুলারে বলা হয়েছিল, বিশেষ নীতিমালায় পুনঃতফসিল করা ঋণ এসএমএ মানে শ্রেণিকরণ করতে হবে। আর এসব ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হবে। প্রকৃত আদায় তথা ঋণের যে পরিমাণ আদায় হবে; আনুপাতিক হারে রক্ষিত প্রভিশনের সে পরিমাণ আয় খাতে নেওয়া যাবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশেষ নীতিমালায় পুনঃতফসিল করা ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হবে। যদিও এসব ঋণ এসএমএ মানে শ্রেণিকরণের নির্দেশনা অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণ বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কোনো ব্যাংক চাইলে এসএলআর সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত বন্ড বা সরকারি সিকিউরিটিজ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারবে। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তারল্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঋণপত্র খোলার পর শিল্প কাঁচামাল আমাদানির সর্বোচ্চ সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন এসব পণ্য আমাদানির ক্ষেত্রে মোট ৩৬০ দিন সময় পাবেন রপ্তানিকারকরা। এর আগে এই সময়সীমা ছিল সর্বোচ্চ ১৮০ দিন।

তফসিলি ব্যাংকগুলোর (শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকসহ) নগদ জমা সংরক্ষণের হার বিদ্যমান দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৫.৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৫ শতাংশ হতে কমিয়ে করে দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৪.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ তলবি ও মেয়াদি দায়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারা ও ইসলামি ব্যাংকগুলোকে দৈনিক ভিত্তিতে গড়ে সাড়ে ৪ শতাংশ এবং দ্বি-সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ হারে সিআরআর রাখতে হবে।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার বিদ্যমান বার্ষিক শতকরা ৬ ভাগ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে করে শতকরা ৫.৭৫ ভাগে পুননির্ধারণের বিষয়েও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, আগামীকাল ২৪ মার্চ হতে কার্যকর হবে।

শুধুমাত্র নগদ জমা ও উত্তোলনের জন্য অনলাইন সুবিধা সম্বলিত ব্যাংকসমূহের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের লেনদেনের সার্বিক সুবিধা নিশ্চিত করতে শাখাসমূহের মধ্যে দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শাখা খোলা রাখতে হবে। অনলাইন সুবিধা বহির্ভূত ব্যাংকের শাখাসমূহ শুধুমাত্র নগদ জমা ও উত্তোলনের জন্য খোলা থাকবে। শুধুমাত্র জরুরি বৈদেশিক লেনদেনের জন্য এডি শাখাসমূহ খোলা রাখা যাবে। উপরোক্ত সবক্ষেত্রে দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সূচি হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত। লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বিভাগ দুপুর দেড়টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এছাড়াও এটিএম ও কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন চালু রাখার সুবিধার্থে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ সার্বক্ষণিক চালু রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগামী জুন পর্যন্ত নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। অর্থাৎ মার্চ এবং জুন এই দুই প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে অর্থের চলাচল কমে গেছে। এর প্রভাবে ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকা জমা হচ্ছে কম। ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। এ কারণে বাজারে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, বাজারে নগদ টাকার চাহিদা কমাতে ব্যাংকগুলোকে অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও অনুমোদিত বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। এতে নগদ টাকার ওপর চাপ কমে যাবে। একই সঙ্গে বাড়বে অর্থের লেনদেন। এ ধরনের লেনদেন উৎসাহিত করতে বিভিন্ন খাতে সার্ভিস চার্জ ইতোমধ্যে কমানো হয়েছে। দেয়া হচ্ছে ক্যাশব্যাক সুবিধা।

ঢাকা টাইমস/ ২৭ মার্চ/ আরএ/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

সোনালী লাইফের অফিস ভাড়াকে ভবনের ক্রয়মূল্যের অগ্রিম পরিশোধ দেখানোর দাবি

ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি ডিভাইস বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

পাটজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজারকে কাজে লাগাতে হবে: পাটমন্ত্রী

অধ্যাপক খলীলী ব্যাংক এশিয়ার বোর্ড অডিট কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত

স্বর্ণের দাম কমল ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা

জনতা ব্যাংকের ম‌্যানেজার্স ইন্ডাকশন প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে স্থানান্তরিত হলো ন্যাশনাল ব্যাংক ডিজাস্টার রিকভারি সাইট

ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন

টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে ওয়ালটন, মুনাফা বেড়েছে ৫১২ কোটি টাকা

মিনিস্টারের শতকোটি টাকার ঈদ উপহার জিতে আনন্দিত ক্রেতারা 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :