‘আমগরে জন্য খুব ভালো হইছে’

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২০, ১৪:২১

‘কাজ-কাম নাই। ঘর থ্যাইক্কা বাহির হইতে পারি না। কী খামু, কার কাছে যামু, কোথায় পামু, এ নিয়া খুবই চিন্তায় আছিলাম। আল্লায় অহন একটা ব্যবস্থা করছে। আমগরে জন্য খুব ভালো হইছে।’ কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর সদর উপজেলার শেখহাটি এলাকার হতদরিদ্র আলফাজ আলী।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে শেরপুর অঘোষিত লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও লোকসমাগম বন্ধ থাকায় নিম্নআয়ের মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আর আলফাজের মতো খেঁটেখাওয়া হাজারো মানুষ খাদ্যাভাবে পড়েছেন।

রবিবার সকালে সরকারের তরফ থেকে মানবিক সহায়তা হিসেবে চাল-ডাল, আটা, লবণ-তেল ও সাবানসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে খুশি আলফাজ। এ সময় তিনি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে শেরপুর জেলায় ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ নয় লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে দুই দফায় ওই বরাদ্দ পাওয়া যায়। এখন কর্মহীন মানুষের বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। এলাকায় এলাকায় গিয়ে কর্মহীন দরিদ্র-অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল-ডাল, আটা, লবণ-তেল ও সাবান পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।

রবিবার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবসহ জেলার পাঁচ উপজেলার ইউএনও এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।

এর আগে শনিবার বিকালে ও রাতেও কিছু এলাকায় ওইসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে দুই দফায় মোট ২০০ মে.টন চাল ও নয় লাখ টাকা প্রদান করেছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে জেলার ৫টি উপজেলায় ১১১ মে.টন চাল ও পাঁচ লাখ ১৫ হাজার টাকা উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় শুক্রবার ও শনিবার এ বরাদ্দ দেয়।

বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই শনিবার বিকাল থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান শুরু করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ছাড়াও পিআইও, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবিএম এহসানুল মামুন জানান, এদিন সদর উপজেলায় ২০টি, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১৫টি, নকলা উপজেলায় ১৫টি, শ্রীবরদী উপজেলায় ১৫টি এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার ১০টি দরিদ্র-অসহায় পরিবারকে মানবিক সহায়তা হিসাবে চাল-ডাল, আলু, তেল-লবণ ও সাবান দেয়া হয়।

তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও গৃহে অবস্থান নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী টহল শুরু করেছে। জনস্বার্থে সেনাবাহিনীর এ টহল অব্যাহত থাকবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পাঁচ কেজি করে চাল, ডাল, আটা, লবণ, তেল ও সাবান বিতরণ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও লোকসমাগম বন্ধ থাকায় নিম্নআয়ের মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে দরিদ্র মানুষের মাঝে এসব খাদ্য বিতরণ শুরু করেছি। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।

অন্যদিকে করোনা আতঙ্কে ঘরে অবস্থানকারী পৌর এলাকার দুস্থ-অসহায় মানুষদের বাড়ি বাড়ি চাল-ডালসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন।

মেয়র লিটন বলেন, যারা দিন আনে দিন খায় এবং দিনমজুর তাদের বাড়িতে বাড়িতে ১ এপ্রিল থেকে সীমিত আকারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রতি ওয়ার্ডে ৫০ জন করে মানুষের ঘরে এ খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি অনুদান পেলে এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া করোনাভাইরাস থেকে সচেতন থাকতে স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করে সঠিক তথ্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের এবং যারা গত দুই-তিন দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে শেরপুর এসে অবস্থান করছেন, তাদের তথ্য চান মেয়র লিটন। এছাড়া পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগতভাবে এবং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র পরিসরে নিম্নআয়ের কর্মহীন মানুষের সহায়তায় খাদ্যসামগ্রী ও বিভিন্ন সেবা নিয়ে এগিয়ে আসার সংবাদও পাওয়া যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :