আবেগ নিয়ন্ত্রণ না হলে, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ হবে না

শাহাবুদ্দিন শুভ
| আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২০, ১৬:০৯ | প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২০, ১৫:১৭

জাতি হিসেবে আমরা আবেগী। তা না হলে সরকার ১০ দিনের ছুটি দিয়েছেন যেন সবাই করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকেন। আমরা যেন নিজেকে ঘরে বন্দি রাখি কিন্তু তা না করে লক্ষ লক্ষ মানুষ যে ভাবে এক সাথে ঢাকা ছাড়লেন তাতে বিপদে বাড়ার ছেয়ে কোন অংশে কমেছে বলে মনে হয় না। অন্য একজন সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন নিজে কে হোমকোয়ারেন্টাইনে না রেখে পরিবারের সাথেই থেকেছেন ফলশ্রুতিতে ৭ মাসের শিশু সহ সবাই আইসোলিশনে। তাও হয়েছে অতিরিক্ত আবেগেরে কারণেই।

১.

আমরা যদি পত্রিকার পাতায় একটু চোখ রাখি তাহলে দেখতে পাই ‘ঢাকা টাইমস’-এ ২৪ মার্চের খবরের শিরোনাম ‘‘যেন ঈদের ছুটিতে ছুটছেন সবাই ”খবরে বলা হয়েছে‘‘ করোনাভাইরাস যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য লোক সমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হচ্ছে শুরু থেকে। কারণ এতে সংক্রামিত হওয়ার সুযোগ কমবে। এজন্য দেশে ঘোষণা করা হয়েছে পাঁচ দিনের সাধারণ ছুটি। সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি নিয়ে যা দশ দিন। এসময় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে বের হতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়ে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করা অনেকেই পরিবার নিয়ে ছুটছেন গ্রামে। মঙ্গলবার সকাল থেকে লঞ্চ, ট্রেন আর বাস স্ট্যান্ডে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। যেন ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে ছুটছেন সবাই। পরিস্থিতি দেখে ভাবার উপায় ছিল না এদের কারো করোনা নিয়ে কোনো আতঙ্ক আছে। সচেতনতা তো দূরের কথা।”

ডেইলি অবজারভার তাদের অনলাইন ভার্সনে লিখেন ‘বাড়ি ফেরার ঢল নেমেছে সড়কপথে বিস্তারিত খবরে বলা হয়েছে - করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে সারাদেশে রেল, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করা হবে। তাই শেষ মুহূর্তে সড়কপথে মানুষের বাড়ি ফেরার ঢল নেমেছে। এতে চাপ পড়েছে সড়কের ওপর। লেগেছে দীর্ঘ যানজট। বুধবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। সাধারণ ছুটি পেয়ে ঢাকা ছাড়ছেন হাজার হাজার মানুষ।’

এ খবর পড়ার পর ও ছবি দেখে আমি শংকিত। আমরা কি করছি? বুঝে নাকি না বুঝেই নিজের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারছি। নিজে যেমন আক্রান্ত হচ্ছি ঠিক তেমনি গ্রামে গিয়ে পরিবার আত্বীয় স্বজন ও এলাকা বাসীকে আক্রান্ত করছি নাতো? অনেকে যখন বাসে, ট্রেনে, বা লঞ্চে গাদাগাদি করে গ্রামের বাড়িতে ছুটে গেছেন এর ফলে যদিও বাসে ও ট্রেনের কামরায় যে কোন একজন কোভিড-১৯ পজিটিভ থাকেন তাদের দ্বারা পুরো পরিবার যেমন সংক্রমিত হবে সাথে সাথে এলাকাবাসী এবং আত্বীয় স্বজনকেও সংক্রমিত করবেন। লঞ্চেতো সেই সংখ্যা আরও বেশী। যারা যাচ্ছেন তাদের আবেগী যুক্তি ছিল যদি কোন কিছু হয় তাহলে পরিবারের সাথে নিয়ে হোক। কয়েকজন আরও খোলস করে বললেন মরতে হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মরবো। আমার কাছে কথা গুলো আবেগিই মনে হয়েছে। বাস্তবতা বা পরিবারের কথা চিন্তা করলে কেউই নিজেকে বা নিজের পরিবারকে এরকম বিপদের সম্মুখীন করতেন বলে আমার মনে হয় না।

সিঙ্গাপুর প্রবাসীর ৭ মাসের শিশু আইসোলেশনে, বাড়ি লকডাউন সংবাদ মাধ্যমের খবর থেকে জানা যায় হাম, ঠাণ্ডা ও জ্বর নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি এক শিশুকে করোনা সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। শিশুটির বসয় মাত্র ৭ মাস। তার বাবা গত ৯ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে ছিলেন। এ ঘটনার পর পলাতক থাকা বাবাকে ধরে এনে পরিবারের ৫ সদস্যের সঙ্গে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে ‘নানা জটিলতা নিয়ে শিশুটি হাসপাতালে আসে। গত সোমবার জ্বর, ঠাণ্ডা নিয়ে হাসপাতালে আসার পর তাকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হামও হয়েছে তার। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তার অবস্থার অবনতি হয়। শিশুটির বাবার বিদেশ থেকে আসার খবরটি তারা গোপন করেছিলেন। এটি জানার পরপরই করোনা সন্দেহে শিশুটিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। ” (সমকাল ২৬.০৩.২০২০)

আমার ধারণা সিঙ্গাপুর প্রবাসী দেশে আসার পর নিজেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা উচিত ছিল নিয়মও তাই কিন্তু তিনি তা না করে পরিবারের সবার সাথে থেকেছেন, খেয়েছেন ঘুরে বেড়িয়েছেন। নিশ্চয়ই তার আত্বীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, এমনকি এলাকাবাসীর সাথেও দেখা করেছেন। যা সচরাচর হয়ে থাকে। উনার দ্বারা যে ভাবে নিজের শিশু সহ পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে তা আবেগের জন্যই হয়েছে। একইভাবে ইতালিতে মহামারি আকার ধারণের পর যেভাবে প্রবাসীরা এসেছেন এবং নিজে কে হোম কোয়ারেন্টাইনে না রেখে ঘুরে বেড়িয়েছেন তার ফলে দেশে সংক্রামকের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে পরিবারকে যেমন সচ্ছল রাখছেন তেমনি দেশের অর্থনীতির চাকাও গতিশীল রাখছেন। আমার বিশ্বাস হয়তো তারা না বুঝে কিংবা অতিরিক্ত আবেগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না রাখার কারণেই সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা যে জায়গাতে ব্যর্থ হয়েছি তা হচ্ছে সরকারি ছুটি ঘোষণার আগে জেলা ও বিভাগীয় সদরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ না করা। বন্ধ করলে লক্ষ লক্ষ মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারতো না। অন্যান্য দেশ যখন সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারত ও উদ্যোগ নিয়েছে। তখন আমারা নীরব থেকেছি সীমান্ত ও এয়ারপোর্ট খোলা রেখেছি। যার ফলে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির আশংখা দেখা দিয়েছে। উপরোক্ত ঘটনা সামনে এসেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি কিন্তু অনেক ঘটনা আমাদের আড়ালেই রয়ে গেছে যা হয়তো প্রকাশিত হয়নি বা জানাও হবে না। তাই আসুন আমাদের যার যার অবস্থান থেকে আবেগকে সংযত করে নিজেদের বাঁচার জন্য ঘরে থাকি, নিজে বাঁচি, দেশকে বাঁচাই।

শাহাবুদ্দিন শুভ

প্রধান সম্পাদক, সিলেটপিডিয়া

[email protected]

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :