অনামন্ত্রিত অতিথি বদলে দিল ভাবনা

প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২০, ২১:০৭ | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০, ২১:৩১

সৌধ চন্দ

বিখ্যাত ক্রীড়াসাংবাদিক উৎপল শুভ্র তার ছেলের একটা লেখা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তার আগে তিনি গৌরচন্দ্রিকা দিয়েছেন: সামনে কী আছে, কবে এবং কীভাবে এর শেষ-- এটা ভেবে একটু উদ্বেগ ছাড়া অবরুদ্ধ এই জীবন আমার খারাপ লাগছে না। টানা ৭/৮ দিন বাসায় থাকা আমার আগে থেকেই অভ্যাস আছে। দুই ছেলে ও তাদের মায়ের সঙ্গে সময় কাটানো বরাবরই আমার পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে। আমার দুই ছেলের কেমন লাগছে? অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছোট ছেলে সৌধ তার উপলব্ধির কথা লিখেছে। লেখাটা পড়ে মনে হলো, এটা শেয়ার করা যায়।

সৌধ বাংলা টাইপ করতে পারে না বলে আমি শুধু লেখাটা টাইপ করেছি। দু'একটা জায়গায় পরামর্শের (সেটাও যেখানে ও চেয়েছে) বাইরে আমার কোনো অবদান নেই এখানে। আমার সহকর্মীরা আমার এডিটিং সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। লেখাটা পড়ার সময় সেই সম্পাদক সত্ত্বাটাকে একদমই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি। সত্যি বললে সেটির খুব একটা প্রয়োজনও বোধ করিনি। সৌধর লেখাটা পোস্ট করার একটাই কারণ। বড় যে একটা উপলব্ধির কথা লিখেছে ও, সেটা বোধ হয় সর্বজনীন।]

‘করোনাকালে এলেমেলো ভাবনা’ শিরোনামে সৌধ চন্দের লেখাটি নিচে হুবহু দেওয়া হলো:

‘স্কুলকে সব সময় অপছন্দই করতাম আমি। এমনকি স্কুলে কেন যেতে হবে, তার কোনো যথাযথ কারণও খুঁজে পেতাম না। একজন ছাত্রের জন্য মনে হয় এটিই স্বাভাবিক। এটা বলব না যে, এখন আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য একেবারে পাগল হয়ে গেছি। না, এখনো স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু আজীবন বাসায় থাকার যে উৎসাহ মনে খুঁজে পেতাম, সেটি আর পাচ্ছি না। করোনাভাইরাস নামে অনামনন্ত্রিত এক অতিথির জন্য এখন আমরা সবাই-ই ঘরে বন্দি। ইচ্ছামতো খাওয়া, ইচ্ছামতো ঘুম, নামেমাত্র পড়াশোনা---প্রথম কয়েকদিন বেশ লেগেছিল। কিন্তু কয়েকদিন ধরে আর ভালো লাগছে না। পড়াশোনা করার চেষ্টা করে দেখলাম, মন বসছে না। এখন শুধু বাইরে যেতে ইচ্ছা করে, ঘুরতে ইচ্ছা করে।

‘মানুষ যখন যা পায়, তখন সেটা আর চায় না। সব সময় সে উল্টোই চায়। সে জন্য সে যেটা বর্তমানে পেয়েছে, সেটা উপভোগ করতে পারে না। আমি তাই ঠিক করেছি, আর এটা নিয়ে হাহুতাশ করব না। যে অবস্থায় আছি, সেটাই উপভোগ করব। ভবিষ্যতেও এটা মনে রাখব। তাহলেই সত্যিকার আনন্দ পাওয়া যাবে। মানুষ বড় বিচিত্র জীব। এ জন্যই তো সব সময় ঘরে থাকতে চাওয়া সৌধ এখন বাইরে যেতে চায়। এমনকি স্কুলেও যেতে চায়। আসলে এক কাজ অবিরাম করতে কারোরই ভালো লাগে না। এই অবিরাম ছুটিও যেমন আর ভালো লাগছে না। এখন তাই মন চাচ্ছে বাইরে যেতে, স্কুলে যেতে। এমনকি বাবা অনেক করে বললেও যে নোংরা কাঁচাবাজারে আমি পা রাখতাম না, মনে হচ্ছে সেখানে যেতে পারলেও কত ভালো লাগত! মরে গেলেও যা যা করতে চাইতাম না, সেসবও এখন করতে ইচ্ছা করছে। সকালে আবার শুনলাম, বাসা থেকে নাকি কেউ বেরোতে পারবে না, কেউ ঢুকতেও পারবে না, এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মানে বাসা থেকে বের হওয়ার যে কিঞ্চিৎতম সম্ভাবনা ছিল, সেটিও শেষ।

‘আচ্ছা, এত কথার দরকার নেই। এখন পড়াশোনা কম করতে হচ্ছে, সেটাই তো ভালো, না কি? সব সময় এরকম সুযোগ হাতে আসে না। তাই এটা উপভোগ করা উচিত। অকারণে এসব ভেবে মনকে ভারাক্রান্ত করার প্রয়োজন নেই। এখনকার জীবনই আমি সব সময় কামনা করে এসেছি এবং সবাই তাই করে। আবার স্কুলেরও দরকার আছে। স্কুল না থাকলে ছুটি এমন ভালো লাগত না। অন্ধকার না থাকলে যেমন আলো এত ভালো লাগত না। পরিশ্রম না থাকলে অবসর এত ভালো লাগত না। এটাই জগতের নিয়ম। পৃথিবীতে সবকিছুরই দরকার আছে। খারাপ না থাকলে ভালোকে আমরা ভালো বলতাম না।

আচ্ছা, অনেক কথা বললাম। এখনকার মতো অখন্ড অবসর তো আর সব সময় পাওয়া যায় না। অন্য সব চিন্তা সরিয়ে রেখে এই সময়টাকে বরং উপভোগ করি। কতদিন তা করতে পারব, সেটাই প্রশ্ন। এই অনামন্ত্রিত অতিথির আদৌ খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে কি না, কে জানে!’

(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/মোআ)