সংসদ টিভির পর্দায় ক্লাস হলো যেভাবে

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২০, ০৭:৫২ | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০, ০৮:০৯

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস

টিভির পর্দায় ভেসে উঠলেন শিক্ষক। সাদা বোর্ড, গোলটেবিলের মাঝে ল্যাপটপ। ক্লাস রুমের নীল দেয়ালে মেঘের ছবি। ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ের উদ্ভিদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে শাড়ি পড়া নারী শিক্ষকের সুমিষ্ট কন্ঠে শুরু হলো পাঠদান পর্ব।

রবিবারের সকালে এমনই এক পাঠদান পর্ব দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের 'আমার ঘরে আমার স্কুল' নামে ষষ্ঠ থেকে দশমের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রমের প্রথম ক্লাস শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়ানো প্রণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের স্কুল বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার যেন ক্ষতি না হয় তা পোষাতে এইভাবে পাঠদান করা হয়।

টিভি পর্দায় দেখা যায়, ছোট ছোট বাক্য আর সাবলীল ভাষায় বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিয়েছেন শিক্ষক। আর বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ছবিগুলো দেখানো হয়েছে নীল দেয়ালে।

প্রথম দিনের পাঠদানে কোনো জটিলটা ছিল না। সহজভাবেই পাঠদান করেন শিক্ষক। গল্প, পরামর্শ আর চমৎকার উপস্থাপনায় 'আমার ঘরে আমার স্কুল’ নামে শ্রেণি কার্যক্রমের প্রথম দিন পার হয়।

রবিবারের প্রথম দিনে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের ৮টি ক্লাস করানো হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে ক্লাস চলে দুপুর বারোটা পর্যন্ত। শুধু পাঠদানই নয় শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় বাড়ির কাজও। স্কুল খুললেই এই বাড়ির কাজের ওপর প্রাপ্ত নম্বরগুলো বিবেচিত হবে ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাখতে হচ্ছে প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা খাতা। কারণ এই খাতাগুলোই সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে জমা দিতে হবে।

বাড়ির কাজের পাশাপাশি কুইজের মাধ্যমেও রয়েছে খেলার ছলে শিখতে পারার আনন্দ। সকালে টেলিভিশনের সামনে কেউ না বসলেও ক্লাসগুলো তার মিস করার সুযোগ ছিল না। কারণ কেউ সকালে ক্লাস না দেখে থাকলে পুনরায় দেখার সুযোগ ছিল। তাদের জন্য দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্লাসগুলো পুনরায় প্রচার করা হয়েছে।

সকাল বা দুপুর ছাড়াও ক্লাসগুলো অন্য সময়েও দেখার সুযোগ রয়েছে। প্রচার হওয়া সবগুলো ক্লাস থাকবে কিশোর বাতায়নে। আরও আছে 'আমার ঘরে আমার স্কুল' ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে। তাই যেকোনো সময় চোখ বুলিয়ে নেয়া যাবে ক্লাসগুলো।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাসগুলো দেখার এবং আত্মস্থ করার জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রথম দিনে দেশের শীর্ষ স্কুলের সেরা শিক্ষকদের রেকর্ডকৃত ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের ৮টি ক্লাস করানো হয়েছে। আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।

করোনাভাইরাসের কারণে ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পরপরই সংসদ টিভির মাধ্যমে সেরা শিক্ষকদের রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয় মাউশি। এ জন্য গত সপ্তাহেই ক্লাস রেকডিং করা হয়। করোনার কারণে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার প্রথমে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা হলেও পরে সেটি বাড়িয়ে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। একই সঙ্গে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর তারিখও স্থগিত করা হয়।

বন্ধের এই সময়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী অনেকটা ঘরবন্দী অবস্থায় আছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী পৌনে দুই কোটির মতো। আর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী এক কোটির ওপরে।

একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অন্যদিকে কোচিং বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর প্রভাব পড়ছে। পরিস্থিতি অবনতি হলে এই বন্ধের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে। এমন অবস্থায় আগামী তিন মাসের পরিকল্পনা নিয়ে সংসদ টিভিতে পাঠদানের উদ্যোগ নেয় মাউশি।

তবে করোনার পরিস্থিতি উন্নতি না হলে ছুটি দীর্ঘ হলে বাড়তে পারে পাঠদানের পরিধিও।

পাঠদান কার্যক্রমগুলোর সিলেবাস অনুযায়ী দ্বিতীয়দিন আজ সোমবার সকালেও ক্লাস নেয়া হবে। সকাল ৯টা‌য় এই পাঠদান পর্বে আবারও টিভির পর্দায় ক্লাসগুলো চলতে থাকবে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সেরা শিক্ষকদের সাথে। তাই বন্ধের সময়গুলোতেও চলবে ঘরের ভেতরেই স্কুলের আবহে পড়ালেখা।

(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/টিএটি/এমআর)