আটকে ছেলে, ভাঙা সাইকেলে ৫৫৩ কিমি যাত্রা বাবার

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২০, ১৪:১৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

ভারতে চলছে ২১ দিনের লকডাউন। এমন অবস্থায় কলকতার অদূরে দূর্গাপুরে আটকা পড়েছে ১২ বছরের ছেলে। তাই ছেলেকে ঘরে ফেরাতে বিহারের আড়াড়িয়া থেকে ভাঙা সাইকেলে যাত্রা শুরু করেছেন বাবা। গুগল ম্যাপে বিহারের আড়াড়িয়া শহর থেকে কলকাতার দূর্গাপুরের দূরত্ব দেখাচ্ছে ৫৫৩ কিলোমিটারেরও বেশি।

রবিবার বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে একদিনে প্রায় দু’শো কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে রায়গঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছান তিনি। খাবার বলতে সাইকেলে বাধা ছোটো একটি মুড়ির বস্তা। রাস্তায় রাত কাটানোর জন্য নিয়েছেন পাতলা কম্বল আর একটা চাদর।

রবিবার রাতটুকু ঘুমিয়ে নিয়েছেন রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগর এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া একটা পরিত্যক্ত একচালার নীচে। সোমবার ভোর হতেই রওনা দিয়েছেন দুর্গাপুরের দিকে। পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর ঠিক কত দুর, বা কতটা বড় শহর, তার কিছুই জানা নেই মুস্কিল ঋষিদেবের। শুধু জানেন, সেখান থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে ১২ বছরের ছেলেটাকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পাড়ার কয়েকজন যুবকের সঙ্গে কাজের জন্য ছত্তিশগড়ের দিকে রওনা হয়েছিল ১২ বছরের নরেশ ঋষিদেব। হঠাৎ লকডাউন হওয়ায় আটকে পড়তে হয় কোনো এক অজানা শহরে। ট্রেনেই হারিয়ে গিয়েছিল নরেশের মোবাইল ফোন। লকডাউনের জেরে গন্তব্যে যাওয়া যাবে না বুঝতে পেরে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় শ্রমিকের দলটি। পথে পুলিশের নজরদারি বাঁচিয়ে চলার সময় বয়স্ক সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলে নরেশ৷

পকেটের টাকাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। খালি পেটে হাঁটতে হাটতে দু’পায়ে ফোস্কা পড়ে যায় তার। হেঁটে কোথায় পৌঁছেছে সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা ছিল না। তার কাতর অবস্থা দেখে এক সহৃদয় ব্যক্তি নরেশকে ডেকে খাবার দেন। দেহাতি হিন্দিতে নিজের অসহায় অবস্থার কথা খানিকটা বোঝাতে পারে নরেশ৷ সেই ব্যক্তির মোবাইল ফোন থেকেই বাড়িতে ফোন করে নরেশ৷ নিজের দুর্দশার কথা জানায়৷ সঙ্গে জানায় কলকাতার কাছে দুর্গাপুরে রয়েছে সে।

এইটুকু তথ্য সম্বল করে অসহায় ছেলেকে ঘরে ফেরাতে সাইকেল নিয়ে রওনা দেওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো রাস্তা খুঁজে পাননি বাবা৷ পাশে দাঁড়াতে এক আত্মীয়ও চলে এসেছেন তার সঙ্গে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের সীমান্ত সিল করার নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেকথা কানে এসেছে। সব জেনেও এখন ছেলের কাছে পৌঁছতে মরিয়া বিহারের এই গরীব কৃষি শ্রমিক।

রবিবার রাতে রায়গঞ্জের কিছু যুবক ওই দুই অসহায় ব্যক্তির পাশে দাঁড়ায়। একটা মশারি, পানি এবং ভাত-ডাল-সবজির ব্যবস্থা করেন তাদের জন্য। রাত কাটে সেখানে। সোমবার কাকভোরেই বেরিয়ে পড়েছেন। অসহায় ছেলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে ঠিক কতদিন লাগবে, তা জানেন না বাবা।

ঢাকা টাইমস/৩০মার্চ/একে