নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে ইটভাটা শ্রমিকদের কাজ করানোর অভিযোগ

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২০, ১৬:৫৩ | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০, ১৬:৫৬

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জামালপুরের সব ধরনের দোকানপাট ও গণপরিবহণ, জনসমাগম বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে বন্ধ হয়নি ইটভাটা শ্রমিকদের কাজ। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই মারপিট ও মামলার ভয় দেখিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ইট ভাটাগুলোতে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, কাজের সময় তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আর জেলা প্রশাসক বলছেন, করোনার ঝুঁকি এড়াতে মালিকদের স্ব উদ্যোগেই ইটভাটা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে।

জামালপুর জেলায় প্রায় ৯০টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে টানা ছুটি চললেও ইটভাটার শ্রমিকরা বসে নেই। তারা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে। কয়েকজন পেটের দায়ে কাজ করলেও অনেককেই মালিকরা জোরপূর্বক ও মারপিট করে মামলার ভয় দেখিয়ে কাজ করতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।  

সোমবার দুপুরে জেলার মেলান্দহ উপজেলার চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়নের শিহাটা এলাকার মেসার্স এম এম এইচ ব্রিকস-এ গিয়ে দেখা যায় কোনো রকম সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করছে শ্রমিকরা। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও সে বিষয়ে কিছুই জানেন না শ্রমিকরা।   

সেই ইটভাটার শ্রমিক  হাফিজুর বলেন, হাত মোজা কিনার টাকা নাই, আমাদেরতো কেউ কোনো কিছু দেয় না। কাজ না করলে টাকা পাওয়া যায় না। সংসার চালাতে হবে না। সংসার না চালিয়ে বাড়িতে বসে থাকলে চলবে। সরকার আমাদের অনুদান দেয় না। সরকার থেকে কিছু এলেও আমরা পাই না।

সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গামেন্টসসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকলেও ইটভাটা খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স এম এম এইচ ব্রিকসের স্বত্তাধিকারী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন,  ইটখোলা বন্ধ নাই। সারা বাংলাদেশে ইটখোলা বন্ধ নাই। আগুন বন্ধ নাই। শ্রমিকের মাস্ক কিনে দেয়ার দায়িত্ব আমার না। তাদের মজুরি দেয়া হয়। তারা নিজেরা না কিনলে আমার কিছু করার নেই। আপনাদের যা মনে চায় আপনারা লিখেন। লিখে যদি কিছু করতে পারেন, করেন।

অন্যদিকে একই উপজেলার ফুলকোচা ইউনিয়নের জটিয়ারপাড়া  এলাকায় অবস্থিত মেসার্স মা ব্রিকস-এ গিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়, সেখানে শ্রমিকরা ছুটি চাইলেও ছুটি না দিয়ে মারধর করে মামলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক কাজ করাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

মা ব্রিকসের শ্রমিক সাগর বলেন, করোনা ভাইরাসের জন্য  ইটভাটার মালিক পক্ষের কাছে ছুটি চাওয়া হলে কর্তৃপক্ষ ছুটি না দিয়ে মারধর করে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে রাখে। আরেকজন শ্রমিক  আব্দুর রশিদ বলেন, ছুটি চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মারধর করে মালিকপক্ষ। মারধরের এক পর্যায়ে তার ডান হাত ভেঙে গেলে মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচদিন ভর্তি ছিলেন তিনি। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর আবারও মামলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক কাজ করাচ্ছে মালিকপক্ষ।

আরো একজন শ্রমিক ময়ের মিয়া অভিযোগ করেন, করোনাভাইরাসের জন্য তারা আতঙ্কিত। যেকোনো সময় যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। তাদের সুরক্ষার জন্য কোনো রকম ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ছুটি চায় তারা। ছুটি না দিয়ে মালিকের ছেলে আসাদ তাদের মারধর করে। এমন কাজের বিচার চান তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স মা ব্রিকস এর স্বত্তাধিকারী ইটভাটায় না থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মালিকের ছেলে আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কাউকে কোনো মারধর করা হয়নি। এরকম  কোনো অভিযোগ করে থাকলে সেটা ভুল ও মিথ্যা। করোনাভাইরাসের জন্য  শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে ইটভাটা সচল রাখার জন্য কিছু শ্রমিক রাখা হয়েছে বলে দাবি তার।

করোনার ঝুঁকি স্বীকার করে জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা: গৌতম রায় বলেন, সংক্রমিত কোনো ব্যাক্তি ইট ভাটায় প্রবেশ করলে শ্রমিকদেরও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানান।  

এ বিষয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এই ভাটা বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে করোনার ঝুঁকি এড়াতে মালিকরা স্ব উদ্যোগেই ইটভাটা বন্ধের উদ্যোগ নিতে পারেন।   

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/কেএম)