করোনার প্রভাবে টু‌রিস্ট স্পটগু‌লো এখন ভুতুড়ে নগরী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২০, ১৮:১৬ | প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০২০, ১৭:০৪

চারিদিকে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক আর লকডাউনে প্রায় সব দেশের পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের আকাঙ্ক্ষিত স্বর্গরাজ্যগুলোর বিখ্যাত সব শহর ও অঞ্চল এখন ভুতুড়ে নগরী। করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষের নেই কোনো আনাগোনা।

ভাটা পড়েছে বিশ্বে বিভিন্ন দেশের পর্যটন শিল্পেও। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ শিল্পের মধ্যে পর্যটন অন্যতম। পর্যটকদের স্বর্গরাজ্যগুলো এখন মানবশূন্য হয়ে পড়েছে।

সারা পৃথিবীতে পর্যটকদের ভ্রমণ বাতিল ও বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এই খাতে। প্রতিটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পর্যটন নগরী ভেনিস এখন জনশূন্য। আগ্রার তাজমহলসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ধস নেমেছে।

ইতালির সবচেয়ে নান্দনিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক একটি নগরী হলো ভেনিস। বছরজুড়ে শহরটিতে লেগে থাকে পর্যটকের আনাগোনা। তবে করোনার হানার পর থেকেই ভেনিস আর মিলান যেন পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে নগরিতে। ইতালি সরকারের অন্যতম আয়ের উৎস ভেনিসে নেই আর রূপের ঝলক। পার্ক আর দর্শনীয় স্থানগুলোতে মিলছে না দর্শনার্থীর দেখা।

করোনার কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এমন ঘোষণার পর থেকেই বন্ধ ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটনসহ বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থান। আর তাতে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভ্রমণপ্রেমীরা।

এদিকে জীবনযাপনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বসবাসযোগ্য তালিকায় রয়েছে অষ্ট্রেলিয়ার ভিয়েনা। রোমান্টিক ক্যাফে আর ইতিহাসে অপরূপ ভিয়েনা যেন জনশূন্য। দর্শনীয় স্থানগুলোতে বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয়েছে। ফ্রান্স তার ব্যতিক্রম নয়। করোনার ভয়াবহতায় বিশ্বের দৃষ্টি নন্দন সব স্থাপনা আর জায়গাগুলো আজ নীরব নিস্তব্ধতার নিনাদ। শিল্পের শহরে আজ কেবলই শূনতা। জনমানবহীন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার। রাতে এখানে নেই আলোর ঝলমল। যেন অন্ধকার নগরী। সবকিছু থেমে গেছে, চারিদিকে শুধু নীরব আর মৃত্যুর হাতছানি দিচ্ছে।

প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার পর্যটক চোখের তৃষ্ণা মেটাতে খুঁজতেন আয়রণ লেডি অব প্যারিসের সৌন্দর্য্য। আইকনিক এই স্থাপনার এতটা রিক্ত অবস্থা খুব কমই দেখেছে পৃথিবী।

পশ্চিমের যুক্তরাষ্ট্র থেকে পূর্বের অস্ট্রেলিয়া। আইফেল টাওয়ার থেকে তাজমহল। পর্যটকদের স্বর্গরাজ্যগুলো এখানেও আজ জনমানবহীন, শূন্য। ভারতজুড়ে লকডাউনে ভালবাসার তাজমহলে নেই, কোনো প্রেমিক-প্রেমিকার ঈর্ষা মাখানো দৃষ্টি। সপ্তাশ্চার্যের এই প্রাণশূন্য অবস্থা, আরও নির্মম-হতাশার।

চির শান্তির শহর রোম আজ বড্ড অশান্ত। প্রতিদিনই আসছে মৃত্যু আর করোনার ভয়াল থাবার খবর। তাই হাজার বছরের ঐতিহ্যের ত্রেভি ফাউন্টেইন, ইউফিজি গ্যালারি, কলোসিয়ামের রাস্তায় পর্যটকের বদলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

দ্যা বিগ স্মোক লন্ডনের জীবনযাত্রা করোনায় আচ্ছন্ন। দৃষ্টিহীন যেন লন্ডনের চোখ বিগ বেনের ঘড়ির কাঁটাও থমকে গেছে অনেকের জীবনে। গাড়িশূন্য গোটা টাওয়ার ব্রিজ। কোলাহলের ট্রাফলগার স্কয়ার, বাকিংহাম প্যালেস, হাইড পার্ক, পিকাডেলি সার্কাস, অক্সফোর্ড স্ট্রিটে পিনপতন নিস্তব্ধতা।

স্পেনে মৃত্যুর মিছিলে প্রাণহীন বার্সেলোনা, মাদ্রিদ। চোখ ধাঁধানো পাঁচ তারকা হোটেল এখন করোনা আক্রান্তদের অস্থায়ী ক্যাম্প।

হরর সিনেমার আবহে লস অ্যাঞ্জেলসের হলিউড। জনবহুল নিউয়র্কে টাইম স্কয়ার, ক্যালিফোর্নিয়ার দৃষ্টি নন্দন পার্ক, কলোরাডো বা লাস ভেগাসের বিলাশবহুল রিসোর্টগুলোতে এখন যেন আনাগোনা ভূতের।

নীরব, সিডনির অপেরা হাউজ। কায়রোর পিরামিডে রাজত্ব ফিরে পেয়েছে, অশরীরী ফারাওরা।

এই সংকটে দু হাত প্রসারিত করে, ব্রাজিলের রিওতে রেদিমার দি ক্রাইস্ট কি বলছেন, মানবতা দেখাও বিশ্ব। এক হয়ে লড়াই করো প্রাণঘাতী করোনার।

ফুকেট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত থাইল্যান্ডের অন্যতম একটি দ্বীপাঞ্চল। বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে যেন এক স্বর্গরাজ্য। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এখানে আসেন প্রকৃতির স্বাদ নিতে, সেখানে করোনা আতঙ্কে প্রায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে বিখ্যাত এই স্থানটি।

ঘুরতে আসা এক পর্যটক বলেন, আমি ফ্রান্স থেকে কাতারের দোহা হয়ে এখানে এসেছি। মানুষজন কম, কিন্তু ঘুরতে ভালই লাগছে। দেখুন, যেকোন সময়ই যেকোন কারণে আমাদের মৃত্যু হতে পারে, শুধু করোনাভাইরাসের জন্য মৃত্যুর ভয় করে কি লাভ।

কর্তৃপক্ষ বলে, পর্যটক নেই বললেই চলে। আর তাই আমরা আমাদের প্যারাসেইলিং কর্মীর সংখ্যাও অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি।

একই চিত্র নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আরেক পুণ্যভূমি ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপাঞ্চল বালি। সারাবছরই যেখানে ভিড় লেগে থাকে ভ্রমণ পিয়াসীদের, সেখানে বালির একেকটি সৈকত ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দেখা মিলছে হাতে গোনা কিছু পর্যটকের।

ভিয়েতনামের এক পর্যটক বলেন, আমি ভিয়েতনাম থেকে এসেছি। এখানে খুব একটা ভাইরাসের ভয় পাচ্ছি না, কেননা বালির চেয়ে আমার নিজ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

একই পরিস্থিতি পিরামিডখ্যাত মিশরের গির্জাতেও। করোনা আতঙ্কে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে প্রাচীন সভ্যতার বিশ্ববিখ্যাত এই নিদর্শনটি।

পর্যটকের দেখা মিলছে না ভ্রমণপিপাসুদের আরেক স্বর্গরাজ্য ভারতের কাশ্মীরেও। ভাইরাসের কারণে সেখানেও অলস সময় পার করছেন ভ্রমণ গাইড ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোর কর্মীরা।

এছাড়াও, করোনা আতঙ্কে রাশিয়া, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্সসহ গোটা ইউরোপই একরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পুরো বিশ্বের সাথে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত ডিজনিল্যান্ডও।

করোনা আতঙ্কে ইতোমধ্যেই ক্ষতির মুখে পড়েছে এয়ারলাইনস বা এভিয়েশন শিল্প খাত। কারণ, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ ভ্রমণ স্থগিত রেখেছে। পর্যটন খাত বড় ধরনের বিপদে আছে। মানুষ সফর কম করছে বলে অনেক এয়ারলাইনস এখন আর আকাশে উড়ছে না। বিমান পরিবহনে চীন, হংকং ও তাইওয়ান সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে।

অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা কান্তাস এয়ারলাইনস জানিয়েছে, করোনা সংকটে এই আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ভাগে তাদের কর-পূর্ব মুনাফা দশ কোটি মার্কিন ডলার কম হতে পারে। এছাড়া এয়ার ফ্রান্স- কেএলএম জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে তাদের আয় ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার কমে যাবে।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যপী পর্যটন খাতে স্থবিরতা নেমে আসায় এ খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো। পর্যটন খাতে করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে বলেও ধারণা করছে সংস্থাটি।

(ঢাকাটাইমস/৩১ মার্চ/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :