বেতনের টাকায় চাল-ডাল কিনে অসহায়দের পাশে পুলিশ

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ০৯:১৩ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০, ১০:২৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

প্রাণসংহারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারাদেশ এখন স্থবির। শহুরে কোলাহল আর যান্ত্রিকতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া নগরবাসীর কাছে ঢাকাও এখন অচেনা। রাস্তাঘাট ফাঁকা। হোটেল-মার্কেট বন্ধ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। তাই খেটে খাওয়া মানুষেরা হয়ে পড়েছে কর্মহীন। এসব কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কিছু ‘মানবিক পুলিশ’সদস্য। অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন মানুষকে খুঁজে বের করে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের ধানমণ্ডি জোনের কিছু পুলিশ সদস্যের মানবিকতায় ‘অভুক্ত’নেই রাজধানীর দিন এনে দিন খাওয়া কিছু মানুষ।

উপপরিদর্শক (এসআই) থেকে শুরু করে অতিরিক্ত উপকমিশনার পদমর্যাদার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা তাদের বেতনের টাকা একত্রিত করে পাশে দাঁড়িয়েছেন অসহায় মানুষের। পুলিশ মানেই অমানবিক বলে অনেকে যে ধারণা করেন সেই কথাটা মিথ্যা প্রমাণ করে অসহায় মানুষের পাশে দাাঁড়ালেন ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। গত ছয়দিন রাজধানীর নিম্নআয়ের মানুষের কাছে গেছেন তারা। শৃঙ্খলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দেওয়া হয় চাল, ডাল, তেল, লবন ও সাবান।

এই কাজের প্রধান উদ্যোক্তা ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল্লাহ হিল কাফি। মঙ্গলবার রাতে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাবে খেটে খাওয়া মানুষের কাজ বন্ধ। এমনি তাদের উপার্জন নেই, সঙ্গে কাজ বন্ধ। এতে এসব পরিবারে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা টানা ছয়দিন ধরে এসব মানুষকে সাহায্য করছি। ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, রাসেল স্কয়ার, সেগুনবাগিচা, মগবাজার, কাকরাইল ও বাড্ডা, ভাষাণটেক এলাকার বেদেপল্লী ও বস্তিগুলোতে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ মানুষকে আমরা খাবার দিয়েছি।’

এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে- তিন কেজি করে চাল, আধা কেজি ডাল, আধা লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি আলু, আধা কেজি পেঁয়াজ, এক প্যাকেট বিস্কুট এবং একটি সাবান।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ধানমন্ডি জোনের সাব-ইন্সপেক্টর, ওসি, এসি ও এডিসিদের বেতনের টাকা একত্রিত করা হয়েছে। সেই টাকায় খাবার কিনেই মূলত মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমার কাছের কিছু বন্ধুও সাহায্য করেছে।’এখন যে খাবার আছে তা দিয়ে আরও কয়েকদিন মানুষকে বিতরণ করা সম্ভব হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এই উদ্যোগ কেন জানতে চাইলে এডিসি আবদুল্লাহ হিল কাফি বলেন, ‘বাইরে থাকা নিরাপদ না, এই কথা যখন প্রথম মানুষকে বলি তখন অনেকেই আমাদের বলেছে- আমরা বাসায় গেলে খাবো কী? আমাদের বাড়িতে তো অনেক সদস্য। এই বিষয়টি খুবই মানবিক ছিল। সেখান থেকেই শুরু করেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।’

ঢাকা শহরের নিম্নআয়ের মানুষ কিছুটা পাচ্ছে কিন্তু মফস্বল এলাকায় সেটা তো অনেক কম। সেজন্য এসব অসহায় গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এর আগে রাজধানীর ৫০টি থানায় প্রতিদিন দুই হাজার পাঁচশ ছিন্নমূল মানুষকে এক বেলা করে খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম। রবিবার থেকে প্রতিটি থানায় ৫০ জন করে ছিন্নমূলদের মধ্যে প্যাকেটে করে এই খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। একই দিন রাতে একবেলা খাবার বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএমপির রমনা বিভাগ। প্রতিদিন রাতে ছয় থানায় ছয়শ খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/০১ এপ্রিল/এসএস/এমআর