তারা ‘সমস্যা নাই’ বললেও প্রধানমন্ত্রী ঠিকই জানেন

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ১০:০০ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০, ১০:২৭

আরিফুল আবেদ আদিত্য

আচ্ছা, ডিসি ও জেলা সার্জনরা যেমনে বলতেছেন-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী... আমার জেলায় কোন সমস্যা নাই, কোন সমস্যা নাই। সবকিছু আন্ডার কন্ট্রোল।

তাইলে, সমস্যা কোথায়?

৬ হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় তাহলে কোন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলেন? গণমাধ্যম তাহলে এইসব সংবাদ পায় কোথায়?

অনুষ্ঠান উপস্থাপক এক পর্যায়ে লালমনিরহাটকে ঢাকার পরে সুযোগ দিতে চাইলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একপ্রকার জোর করে প্রান্তিক পর্যায়ে কথা বললেন আগে। আবার তাঁকে শিখিয়েও দিলেন, কাকে আগে সুযোগ দিতে হয়।

ভিডিও কনফারেন্সে দলীয় নেতারা কথা বলার সুযোগ নিয়ে বেশি কথা বলতে চাইলে থামিয়ে দিয়ে মূল কথা শুনতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী। এতে ধারণা হয়, অতিরিক্ত কথার চেয়ে আসল কথা শুনতে তিনি বেশি আগ্রহী। তিনি তথ্য-উপাত্ত ও কাজের হিসাব চান সবার আগে।

বরগুনার সিভিল সার্জনকে নৌ এম্বুলেন্স জোর করে দিতে হয় স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিতে। প্রধানমন্ত্রী পুরোদেশকে যতটা জানেন, একজন জেলা সার্জন তাঁর জেলা সম্পর্কে ততটুকু জানেন কি?

মুজিববর্ষে একজন ব্যক্তিও গৃহহীন থাকবে না। এই অঙ্গীকার বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু তাঁর লক্ষ্য অর্জনের কথাই ব্যক্ত করেন না, এর গুরুত্বও বোঝাতে চেয়েছেন। তাঁরা বুঝলো কী না কে জানে।

আবার ঢাকার কর্মকর্তারা মশা বা ডেঙ্গু প্রতিরোধের আগাম ব্যবস্থার কথা না উল্লেখ করলেও মেয়র আতিক সাহেব ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে মশার গুনগুন গান যেন না শুনতে হয় তাও বলে দেন শৈল্পিকভাবে। ঢাকাবাসী যে এরই মধ্যে মশার যন্ত্রণায় অতীষ্ট তা বুঝিয়ে দেন কথার নিপুণতায়। এখন যথাযথ কর্তৃপক্ষ বুঝলেই হয়।

প্রধানমন্ত্রীর একজন নারী সেনা অফিসারের সাথে কথা বলার আগ্রহ, সত্যি হৃদয়গ্রাহী ছিল। নারীদের অগ্রগামিতায় তাঁর বিপুল আগ্রহ এতে বোঝা গেল।

যাই হোক, প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে--সমস্যা নেই, সমস্যা নেই--জানানো হয় তাহলে উনি সঠিক তথ্য পাবেন কোথা থেকে, কে দেবে উনাকে সঠিক তথ্য-উপাত্ত?

মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আরো পরিষ্কার তথ্য দেয়া উচিত ছিল। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সাথে কুশল-সালাম-আদাব করতে বসেননি। অবশ্য কয়েকজন কর্মকর্তা বেশ গুছিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের সাধুবাদ জানাই।

সামাজিক সুরক্ষা প্রাপ্তির (বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ইত্যাদি) বাইরে প্রতি জেলায় কতজন দিনমজুর, কুলি, কামিন, দিন আনে দিন খায় পেশার লোকজন আছে এই হিসেব কেউ দিতে পারলো না। ইউনিয়ন মেম্বার, চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ব্যক্তিদের দ্বারা এই পরিসংখ্যান বের করা কি খুব কঠিন কিছু? আছে তাঁরা ক্রেডিট নেয়ার তালে, আর ‘সমস্যা নাই, সমস্যা নাই’ কথার ফুলঝুরি সাজাতে।

এই দুর্যোগ ও সংকটকালে ত্রাণ নিয়ে কোনো দুর্নীতি হলে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়ার যে দৃঢ় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন হলেই আমরা আমজনতা খুশি।

পিপিই (PPE) যেসব অস্বাস্থ্য মানে অ-স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজের ভাগ নিয়েছিলেন, তাঁরা জলদি ফেরত দিন। নইলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, আপনাদের করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় পাঠানো হবে।

পরিশেষে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে অনন্য সাধারণ ও পরিপক্ব রাষ্ট্রনায়ক তা আবারো প্রমাণ করলেন। কারণ, সমস্যা নাই দেশে তিনি ঠিকই জানেন, আমাদের সীমাবদ্ধ সম্পদে সমস্যার অন্ত নাই। তাই, তথাকথিত সমস্যা নাই সরকারি চাকুরেদের পাশ কাটিয়ে আমজনতার দরজায় পৌঁছাতে চান তিনি।

আজকের জেলা পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে কর্তা ও কর্মের ব্যবধান কতকত--তা-ই বুঝলাম।

জয়তু প্রধানমন্ত্রী!

(সবাই আরো কিছুদিন গৃহে অন্তরীণ থাকুন, নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করুন।)

লেখক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।