দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার হাল হকিকত

হামিদুর রহমান লিটন
| আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫২ | প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল ২০২০, ১০:১৯

এক নিকটাত্মীয়ের হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। নিয়ে যাওয়া হল রাজধানীর ব্যয়বহুল চিকিৎসাকেন্দ্র স্কয়ার হাসপাতালে। তখন রাত ৮টা। নাকে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে ডাক্তার সাহেবরা বললেন আপনার মূল চিকিৎসা শুরু হবে সকালে। রোগীর স্বজনরা বলল যদি আবার রাতেই রক্ত পড়া শুরু হয় তখন কী হবে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলল আমাদের এখানে এরকমই ব্যবস্থা। আপনারা প্রয়োজনে অন্যত্র চলে যেতে পারেন।

তাই রোগীকে নিয়ে যাওয়া হল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার দেখে বললেন আপনাদের আগের দেয়া ব্যান্ডেজ ঠিক হয়নি এটা যে কোনো সময় ছুটে যাবে। আবারও শক্ত করে ব্যান্ডেজ দিতে হবে। যেই কথা সেই কাজএ আবারও দেয়া হয় কষ্টসাধ্য সেই ব্যান্ডেজ। কিছু ব্যথার ওষুধ দিয়ে বলা হল আপনি তিন দিন পরে আসেন। ব্যান্ডেজ খুলে দেব।

যথারীতি তিন দিন পর যাওয়া হল ডাক্তার বললেন আপনার নাক ভালো হয়ে গেছে আর রক্ত পড়বে না। এরকম বলার এক সপ্তাহ পর আবারও রক্তপড়া শুরু হল। এবার অনেক ভেবে চিন্তে নিয়ে যাওয়া হল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নবনির্মিত নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটে (ইএনটি)।

সুপরিসর এই হাসপাতালটি অনেক টাকা খরচ করে আধুনিকভাবেই তৈরি করা হয়েছে। এখানেও কয়েক দফা ব্যান্ডেজ করা হল। দেওয়া হল মোট ৫টি পরীক্ষা। ডাক্তার সাহেব বললেন ৩টা পরীক্ষা আমাদের হাসপাতালে হবে বাকি দুটা আপনাদেরকে বাইরে থেকে করে নিয়ে আসতে হবে।

জানতে চাওয়া হলো, পরীক্ষাগুলো কোথায় করা যাবে? উত্তর আসল আমাদের পাশেই শমরিতা হাসপাতাল আছে ওখানে করতে পারবেন। রোগীকে নিয়ে যাওয়া হল শমরিতা হাসপাতালে। ওনারা প্রেসক্রিপশন দেখে বলল আমাদের এখানে একটি পরীক্ষা হবে বাকী ১টা পরীক্ষা আপনারা মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে করে নিয়ে আসতে হবে। আবার রোগীকে নিয়ে যাওয়া হল মহাখালীতে। এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতেই চলে গেল ৩/৪ দিন। নাক দিয়ে অনবরত রক্ত পড়া মুমূর্ষ একজন রোগীকে নিয়ে তিন হাসপাতাল ঘুরে পরীক্ষা করা কতটা কষ্টকর তা ভুক্তভোগীরা জানেন।

আরেক রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে গেলে তারাও কিছু পরীক্ষা দিয়ে বলেছিল এটা পিজি (বিএসএমএমইউ) থেকে করে নিয়ে আসেন ওখানকার পরীক্ষাটা ভালো হয়। এরকম আরো উদাহরণ আছে সবগুলো উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

কথা হচ্ছে, কেন একজন রোগীকে নিয়ে ৩ হাসপাতাল ঘুরে আসতে হবে। নবনির্মিত আধুনিক হাসপাতালেও কেন সব পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ থাকবে না। তাহলে কি স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও দেশে কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল গড়ে উঠেনি।

দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে আছে অস্বীকার করার কারণ নেই। বৃহৎ বাজেটের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। টাকার অভাবে কোন প্রকল্পই থেমে যায়নি। তাহলে কেন চিকিৎসা খাতের এই দুরবস্থা থাকবে?

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার আরো করুণ অবস্থা। যেমন মফস্বল শহরে অথবা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের কোন কোনটিতে ১ থেকে ২ জন ডাক্তার দিয়ে চলে। কোন কারণে তারা অনুপস্থিত থাকলে চিকিৎসকের কাজ করেন নার্স অথবা আয়ারা। আর নার্সরা অধিকাংশ সময় রোগীর স্বজনদের শত্রুপক্ষ মনে করেন। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে তারা রূঢ় আচরণ করেন রোগী অথবা রোগীর স্বজনদের সাথে।

তারা ভুলে যান নার্সিং সেবামূলক একটি মহৎ পেশা। এসব নার্সদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। তারা জানেন তাদের চাকরি সরকারি। রোগীর সেবা করুক আর না করুক চাকরি থেকে কেউ তাদেরকে বাদ দিতে পারবেন না। বেপরোয়া আচরণের এটাও একটা কারণ।

চীনের উহান প্রদেশে যখন করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করে তখন ওখানকার কিছু ডাক্তার ও নার্স খাওয়া-দাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে রাত দিন চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। কিছু নার্স পানি খেতেন না বার বার ওয়াশরুমে যেতে হবে বলে। অর্থাৎ তারা চাইত না কোনভাবেই রোগীর কোন অসুবিধা হোক।

কোন ডাক্তারকেই সরকার জোর করে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত করতে হয়নি। তারা স্ব ইচ্ছায় জীবনবাজি রেখে কাজ করে গেছেন। তার ফলও তারা পেয়েছে। যেখান থেকে শুরু হয়েছে করোনার সেই চীনে এখন আর কেউ মরছে না বা আক্রান্ত হচ্ছে না। এটা সম্ভব হয়েছে তাদের মানবতাবোধ আর গভীর দেশপ্রেমের কারণে।

পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি আমাদের কিছু ডাক্তার মহোদয় নাকি রোগীর করোনা উপসর্গ দেখে হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন। মনে প্রশ্ন জাগে আমরা কবে চীনাদের মত মানবতাবাদী হব। কবে আমাদের দেশপ্রেম জেগে উঠবে। আমাদের দেশের লোকজনের যে মানসিকতা তাতে মনে হয় দায়িত্বহীনতার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে সাথে ডাক্তার নার্সদের কনসালট্যান্সি করতে উন্নত মানসিকতা সৃষ্টিতে। আর তা যদি না করতে পারি তাহলে করোনার মতো মহাদুর্যোগ ঝেঁকে বসলে উপায় থাকবে না এ জাতির।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :