করোনা থেকে সেরে ওঠা ৫ রোগী বললেন...

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ১৩:০৫ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০, ১৩:১৯

ঢাকা টাইমস ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে বিশ্বের কোনায় কোনায়। মহামারি রূপ নেয়া এই ভাইরাস রীতিমতো আতঙ্কের নাম। কারণ অনেকেই ভাবছেন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বুঝি মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু আদতে তা সত্যি নয়। সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েও সুস্থ হয়ে ওঠা পাঁচজন রোগী জানালেন তাদের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতার গল্প নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার।

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। করোনাআক্রান্ত পাঁচজনের অভিজ্ঞতা পাঁচ রকমের। কেউ কেউ ভাবছেন করোনায় সেরে ওঠা মানে যুদ্ধকে জয় করা। কেউবা ভাবছেন ফুসফুসের বুঝি বারোটা বেঝে গেলো। স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলো ফুসফুস। এটা নির্ভর করে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণের মাত্রা, বয়স, আক্রান্ত হওয়ার আগে স্বাস্থ্যের অবস্থা ইত্যাদির ওপর।

করোনায় আক্রান্ত হয়েও সেরে ওঠা একজন হলেন, মধ্যবয়সী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ক্লে বেন্টলি। তিনি পুরোনো গ্রন্থিবাত রোগে (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস) ভুগছিলেন। চার্চে একটি প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার পর তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। ১ মার্চ অসুস্থতা বোধ করতে শুরু করেন, ৬ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এতটা দুর্বল লাগছিল যে, নিজে একা উঠে দাঁড়াতে পারছিলেন না।

বিজনেস ইনসাইডারকে বেন্টলি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল আমি শ্বাস নিতে পারব না। এমনকি আমি বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারতাম না।’ 

তিনি জানান, ১৭ মার্চ থেকে তিনি আগের চেয়ে ভালো বোধ করতে থাকেন। তখন চিকিৎসকেরা তাকে বলেন, তার ফুসফুসে যে তরল জমা হয়েছিল, সেটা আর নেই।

বেন্টলিকে এরপর হাসপাতাল থেকে বাসায় পাঠানো হয়; যদিও দুই সপ্তাহ তাকে আলাদা কক্ষে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। 

দ্বিতীয়জন হলেন, নিউইয়র্কের টড হারমান। বয়স ৪৪ বছর। তিনি যখন ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে সেরে উঠছিলেন, তখন শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। পরের দিন তিনি পরীক্ষা করানোর একটা সুযোগ পেয়ে যান। পরীক্ষায় তার করোনা ধরা পড়ে।

হারমান বলেন, তার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট (শর্টনেস অব ব্রেথ) ছিল সবচেয়ে বড় লক্ষণ। এমনকি নিজের অ্যাপার্টমেন্টের এক পাশ থেকে অন্য পাশে হেঁটে গেলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হতো। তার কিছুটা ক্লান্তি বোধ হতো এবং মাথাব্যথা করত।

তৃতীয় জন ওয়াশিংটনের এলিজাবেথ স্নেইডার। ২২ ফেব্রুয়ারি বাসায় এক অনুষ্ঠান থেকে আক্রান্ত হন। তিন দিন পর থেকে তিনি অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। শুরুতে তিনি মনে করেছিলেন, তিনি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত।

এলিজাবেথ বলেন, ‘আমার কোনো কাশি ছিল না। শ্বাস-প্রশ্বাসের কোনো সমস্যা ছিল না। বুকে কোনো সমস্যা অনুভব করিনি। এ জন্য আমি মনে করেছিলাম আমি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত।’

ওই অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের অনেকেই একই ধরনের লক্ষণের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানাচ্ছিলেন। তা দেখে এলিজাবেথ চিকিৎসকের কাছে যান। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর তার পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে। এমনকি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অন্য লোকদের পরীক্ষা করেও করোনা পাওয়া যায়।

এলিজাবেথ বলেন, তার জ্বর চলে গেছে। এখন আর তিনি কোনো ধরনের অসুস্থতা বোধ করছেন না।

করোনায় আক্রান্ত চতুর্থ জন ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুজ শিপের যাত্রী ছিলেন। নাম কার্ল গোল্ডম্যান। বয়স ৬৭ বছর। তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি জানান, শুরুতে লক্ষণ ছিল ব্যাপক জ্বর ও শ্বাসকষ্ট। পরে শুষ্ক কাশি দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘এটা একটা ভিন্ন ধরনের রোগ। ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নয়। আমার নাক বন্ধ হয়নি, গলাব্যথা হয়নি। মাথাব্যথাও ছিল না।’

পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে বিজনেস ইনসাইডার স্কটল্যান্ডের এক নাগরিকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে, যার বয়স ৫০ বছর। যদিও তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ওই ব্যক্তি বলেন, ইতালি থেকে ফেরার ১০ দিন পর পরীক্ষা করে তার করোনা ধরা পড়ে। তিনি জানান, তার শরীরে কোনো লক্ষণ ছিল না। দুই দিন তিনি অফিসেও গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দিন রাতে তার সামান্য জ্বর আসে। শীতে তিনি কাঁপতে থাকেন। শরীরে ব্যথা শুরু হয়, বিশেষ করে পায়ে। পরে শ্বাসকষ্ট আর কাশিও দেখা দেয়। করোনা ধরা পড়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তিনি বলেন, কয়েক দিন পরেই লক্ষণগুলো দূর হয়। এখন তার আর জ্বর, ব্যথা, কাশি বা শ্বাসকষ্ট নেই।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়েও সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের এক একজনের অভিজ্ঞতা এক এক রকম। 

(ঢাকাটাইমস/১এপ্রিল/এজেড)