নানা রঙের প্রজাপতি রপ্তানি করে কোস্টারিকা

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৩৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

ছোট দেশ হলেও কস্টারিকার জীববৈচিত্র্য সত্যি বিস্ময়কর৷ বিশেষ করে প্রায় ১৫ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি দেশটিকে অনন্য করে তুলেছে৷ প্রজননকারীদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে গোটা বিশ্বে প্রজাপতি রপ্তানি করা হচ্ছে৷

মারাত্মক এক রোগে মেরুদণ্ডের ক্ষতির পর কোস্টারিকার জেনি ভিকেস আর  চাকুরির কাজ চালিয়ে যেতে পারেন নি৷ তিনি নিজে প্রজাপতির প্রতি তার ভালবাসা আবিষ্কার করে কাজের নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পেলেন৷ প্রজাপতি প্রজননের কাজে তিনি দিনে প্রায় দশ ঘণ্টা সময় দেন৷ বিশেষ করে পাতার উপর প্রজাপতির ডিম ও শুঁয়োপোকা খুঁজতে অনেক সময় লাগে৷

তিনি বলেন, ‘এগুলি জীবন ও চলমান পরিবর্তনশীলতার প্রতীক৷ প্রজাপতির মধ্যে সবসময় পরিবর্তন ঘটে চলেছে৷ ডিম থেকে শূককীট, তারপর শুঁয়োপোকা এবং শেষে প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায়৷ কিন্তু সেটির জীবনে এই রূপ সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী৷ এর অর্থ, নিজস্ব স্বপ্ন পূরণ করতে কখনো বেশ সময় লাগে৷ তবে সেই লক্ষ্যে সংগ্রাম এবং শেষে সুফল ভোগ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ এর অর্থ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে জীবন কাটানো, প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য কাজ করা৷ গাছপালা ও প্রকৃতি ছাড়া আমরা অপূর্ণ থেকে যাই৷ প্রজাপতি নিয়ে কাজ করে আমি মনে বড় শান্তি পাই৷’’

লাভজনক ব্যবসা

জেনির মতো কোস্টারিকার প্রায় ৪০০ পরিবার উষ্ণমণ্ডলীয় প্রজাপতির প্রজনন করে৷ সেদেশে প্রায় ১৫ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যায়৷ গোটা বিশ্বে জীববৈচিত্র্যের এমন দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই৷ প্রজননকারীরা বিভিন্ন রপ্তানি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেন৷

মূল প্রজাপতি নয়, বরং পুতুলের রূপে সেগুলি গোটা বিশ্বে পাঠানো হয়৷ 'ক্রেস' রপ্তানি কোম্পানির স্যারহিয়ো সিলেস জানান, ‘প্রজাপতি কোথায় যায়, তাদের কীভাবে কাজে লাগানো হয়, আমরা সেদিকে খেয়াল রাখি৷ আমরা শুধু রপ্তানির স্বার্থেই রপ্তানি করতে পারি না৷ প্রাণীগুলির সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয়, তা আমাদের জানতে হয়৷ আমাদের কোম্পানিতে এই নৈতিক মানদণ্ড রয়েছে৷ অন্যান্য রপ্তানিকারীদেরও আমরা সেই মূল্যবোধ শেখানোর চেষ্টা করি৷ প্রজাপতি আসলে সৌন্দর্য ও আমাদের দেশের প্রকৃতির দূত৷ সেকারণে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে, যে দূরের দেশে গিয়েও প্রজাপতি যেন সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে৷’

এই একটি কোম্পানিই সপ্তাহে প্রায় ৭০টি প্রজাতির ৩০,০০০ গুটিপোকা বিমানযোগে রপ্তানি করে৷ মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন বোটানিকাল গার্ডেন ও প্রজাপতি সংগ্রহশালা কোম্পানির প্রধান ক্রেতা৷

গোটা দেশে অসংখ্য প্রজননকারীর সঙ্গে সহযোগিতার কল্যাণে এই কোম্পানি এত প্রজাতির প্রজাপতি বিক্রি করতে পারে৷ স্যারহিয়ো সিলেস বলেন, ‘মূলত যেসব এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে, বা পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কার্যকলাপের সুযোগ রয়েছে, সেখানে প্রজাপতি পালন পরিবেশ সংরক্ষণ করে৷’

বিকল্প পেশা

কোস্টারিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজাপতি গবেষক রিকার্দো মুরিও দেশে চাকুরির একাধিক বিকল্পের সুযোগ সৃষ্টি করতে চান৷ তিনি এই প্রাণী নিয়ে গবেষণা চালিয়ে প্রজননকারীদের পরামর্শ দেন৷ তার মতে, জঙ্গলের সুরক্ষা প্রজাপতি পালনের পূর্বশর্ত৷ যেমন এখানে প্রায় দুই হেক্টর জুড়ে অরণ্য রয়েছে৷ সেটি ছাড়া প্রজাপতি পালন সম্ভবই হতো না৷ আদর্শ পরিবেশ থাকা জরুরি৷

প্রজাপতি একমাত্র অটুট ইকোসিস্টেমের মধ্যে বাঁচতে পারে৷ তবে প্রজাপতি পালন ও রপ্তানি বিতর্কের ঊর্দ্ধে নয়৷ প্রজননের কাজে প্রকৃতি থেকে গাছপালা সরিয়ে নিতে হয়৷ সমালোচকদের মতে, বিমানে প্রজাপতিগুলিকে তাপমাত্রার পার্থক্য ও ঝাঁকুনি সহ্য করতে হয়৷

রিকার্দো অবশ্য বিষয়টির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘প্রজাপতি কোনো ব্যথা অনুভব করতে পারে না৷ এই পোকার শরীরে স্নায়বিক রিসেপ্টর বা গ্রাহক নেই৷ ধাক্কা টের পেলেও মানুষের মতো ব্যথা পায় না৷ প্রজাপতির স্নায়ুতন্ত্র অন্যভাবে তৈরি৷ সে কারণে এ ক্ষেত্রে পশুর উপর নির্যাতনের অভিযোগ ঠিক নয়৷’

নারীদের আয়ের সুযোগ

রিকার্দোর সূত্র অনুযায়ী প্রজাপতি পালনকারীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি৷ তিনি এরেরা মুরিওর মতো বোনেদের পরামর্শ দেন৷ তাদের জীবন জুড়ে ছেয়ে রয়েছে প্রজাপতি৷ তারা শুধু দুই প্রজাতির প্রজাপতি পালন করেন৷ দুই বোন মাসে প্রায় ৮০০ ডলার আয় করেন৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকা সত্ত্বেও দুজনের ভালই আয় হয়৷ সিলভিয়া এরেরা মুরিও বলেন, ‘আমরা কোনো কাজই পেতাম না৷ ভালো আয়ের চাকুরি তো নয়ই৷ আর এখানে পরিশ্রম করলেই ভালো আয় হয়৷ সেইসঙ্গে আমরাই নিজেদের মালিক৷’

গত প্রায় ৫০ বছর ধরে কোস্টারিকায় জীববৈচিত্র্য ও সেইসঙ্গে প্রজাপতির সুরক্ষার জন্য বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে৷ ফলে প্রজননকারীরা প্রকৃতির ছন্দ নষ্ট না করেই প্রজাপতি পালন করতে পারেন৷ কোস্টারিকার প্রকৃতির বৈচিত্র্য ও ঝুঁকির প্রতীক এই প্রজাপতি৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে

ঢাকা টাইমস/০১এপ্রিল/একে