বৃদ্ধ মহীর মণ্ডলের জীবন কাটে অনাহারে

অরিন্দম মাহমুদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২০, ২২:১৩ | প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল ২০২০, ২১:৫৭

করোনায় স্তদ্ধ পৃথিবী। মৃত্যুর মিছিলের সঙ্গে যোগ হয়েছে নিষ্প্রাণ জনপদ। দিনমজুর আর খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের চাকায় নেমেছে অনিশ্চয়তার দীর্ঘনিঃশ্বাস। ভারসাম্যহীন প্রকৃতির মাঝে ধেয়ে আশা করোনাভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে আতঙ্কিত মানুষ এখন ঘরে ঘরে বন্দি।

অন্যদিকে ধেয়ে আসা করোনা ভাইরাসের অশনিসংকেত অগণিত মৃত্যুর মিছিল হোম কোয়ারেন্টাইনে আটকে রাখতে পারেনি ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মহীর মন্ডলকে। বয়সের ভারে জরাজীর্ণ বৃদ্ধের শরীরে তাকালেই দেখা যায়, মাথায় চুল নেই। কপালের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে সেই কবে। চোখে তেমন দেখতেও পাননা। কুচকে গেছে শরীরের চামড়াও। হাঁটাচলা তেমনটা করতে পারেননা। করতে পারেননা কোনো কাজও। নিজের প্রয়োজনে অনেকটা সময় তাকে নির্ভর করতে হয় লাঠির উপর ভর করে। দুটো টাকা পাবার আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে নিরন্তর ছুটে চলেন দীর্ঘপথ ।

কিন্তু বৃদ্ধ মহীর মন্ডল এমন ছিলেন না। এক সময় তিনি দাপিয়ে কাজ করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। তার একটি মাত্র ছেলে নাম বুদু। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যে টাকা রোজগার করেন তাতে নিজের সংসারই চলে না। তাই বৃদ্ধ বাবা এখন জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে পরিচিত অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে দুয়েক টাকা অথবা চাল চেয়ে নিতে দেখা যায়।

করোনাভাইরাসের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁর ধামইরহাট পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মঙ্গলকোটা কলোনির বাসিন্দা বৃদ্ধ মহীর মন্ডল বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে অর্থ সংগ্রহের জন্য সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে পরেন। দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপে লকডাউন, হোমকোয়ারেন্টাইন চললেও তার জানা নেই এর সঠিক উত্তর। সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাওয়া বৃদ্ধ মহীর মন্ডল হাট-বাজারে মানুষের কাছ থেকে দু'এক টাকা চেয়ে নেবেন বলেই ঘর থেকে বাইরে বের হন। এসে দেখেন গ্রামের ঐতিহ্য বহনকারী ধামইরহাটের সবচাইতে বড় (ধামইরহাটের হাট) হাট-বাজার ক্রেতাশূন্য। এমন দৃশ্য দেখে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। প্রাণহীন নিথর দেহ নিয়ে পড়ে থাকা হাটের এমন দৃশ্য তিনি তার ৯০ বছর বয়সেও দেখেননি। তিনি মনে মনে হয়ত ভাবছিলেন আজ হয়তো রবিবার নয়, তার ভাবনা ভুল হয়ে গেছে।

চোখের জল মুছতে মুছতে মহীর মন্ডল বললেন, বড়ই দুঃসময় যাচ্ছে আমার। বয়সটাও কেড়ে নিয়েছে শরীরে সব শক্তি। আজ টাকা না পেলে বুড়াবুড়ি না খেয়ে মরতে হবে। অনেকের নামের তালিকা হলেও আমাদের মতো মানুষের নাম খাতায় লেখা পরে না। বয়স বেড়ে গেলেই বুঝি মানুষ এভাবেই আস্তাকুড়ে পড়ে থাকে। হায় কপাল, এই বৃদ্ধের দিকে কেউ চেয়েও দেখেনা।

একমাত্র ছেলে বুদু বলেন, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে নিজের সংসারই চলে না। বাপ মায়ের ভরণ-পোষণ কেমনে করি।

সমাজের আনাচে কানাচে এমন অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে সরকারের সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের ধনী শ্রেণির সব মানুষের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন।

(ঢাকাটাইমস/১এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :