আদালত খুললেই ১৪ যুক্তিতে রিভিউ করবেন আজহার

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ২২:২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলেও আদালত বন্ধ থাকায় তা দাখিল করতে পারেননি তিনি। তবে ১৪টি যুক্তিতে প্রস্তুত তার রিভিউ আবেদন আদালত খুললেই দাখিল করা হবে।

এ টি এম আজহারের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, তারা তামাদি মওকুফ চেয়ে আদালতে আবেদন করবেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার ৩০ মার্চ ছিল রিভিউ আবেদনের শেষ সময়সীমা। গত ২৫ মার্চ থেকে সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি চলছে। এর সঙ্গে করোনাভাইরাসের কারণে সরকার গত ২৯ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালত বন্ধ।

এ টি এম আজহারের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ’১৪ যুক্তিতে রিভিউ আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু আদালত বন্ধ বলে দাখিল করা যায়নি। আদালত যেদিন খুলবে, সেদিনই আমরা আবেদন দাখিল করব।’

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রিভিউ আবেদনের সময়সীমা ১৫ দিন। তবে এই ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন দাখিল করতে গিয়ে যদি দেখা যায় তা গ্রহণ করার মতো কেউ নেই, অর্থাৎ আদালত বন্ধ, তাহলে আদালত খোলার পর আবেদন দাখিল করার সুযোগ রয়েছে।

এ টি এম আজহারের আইনজীবী বলেন, ‘আইন অনুযায়ী আসামি রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার দিন থেকে রিভিউ আবেদনের জন্য সময় গণনা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত প্রত্যায়িত অনুলিপি পাইনি। যদিও আমাদের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডকে একটি কপি দেয়া হয়েছে গত ১৬ মার্চ। সেই দিনটি ধরেই ৩০ মার্চ ছিল রিভিউ আবেদন করার শেষ দিন। এরই মধ্যে গত ২১ মার্চ এ টি এম আজহারুল ইসলাম আমাদের রিভিউ আবেদন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেভাবেই আমরা রিভিউ আবেদন প্রস্তুত করেছি।’

এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত বছর ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ১৫ মার্চ প্রকাশিত হয়। ওই দিনই এর কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। রায়ের কপি সেখানে বিকেল ৫টার পর পৌঁছায় সেদিন পরোয়ানা কারাগারে পাঠানো যায়নি। এরপর পরোয়ানা প্রস্তুত করে গত ১৬ মার্চ বিকেলে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরোয়ানা পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে।

সেখানে বন্দি এ টি এম আজহারুল ইসলামকে এরই মধ্যে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে। পরে তার আইনজীবীরা কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

রিভিউ না করলে নিয়ম অনুযায়ী সরকার এ টি এম আজহারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সব প্রস্তুতি নিতে পারবে। আর রিভিউ আবেদন করলে তার ওপর আপিল বিভাগে শুনানি শেষে রায় না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।

রিভিউ আবেদন যদি খারিজ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার সুযোগ পাবেন এ টি এম আজহার।তিনি এই সুযোগ নিলে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত রায় কার‌্যকর স্থগিত থাকবে। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে আপিল করেন আজহার। গত বছর ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখেন।

এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ২২ আগস্ট গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কারাবন্দি আজহার।

(ঢাকা টাইমস/৩১মার্চ/এআইএম/মোআ)