করোনায় ইতালিতে একদিনে ৭৬০ জনের প্রাণহানি

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:২৭ | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:৪০

কমরেড খোন্দকার, ইউরোপ ব্যুরো

করোনাভাইরাসে ইতালিতে মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার মোট প্রান হারিয়েছে ৭৬০ জন। বুধবার প্রাণহানির সংখ্যা ছিল মোট ৭২৭ জন। মঙ্গলবার এ সংখ্যা ছিল ৮৩৭ জন। এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ৯১৫ জন। একদিনে নতুন আক্রান্ত চার হাজার ৬৬৮ জন। দেশটিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা চার হাজার ৫৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক হাজার ৪৩১ জন। চিকিৎসাধীন ৮৩ হাজার ৪৯ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজার ২৪২ জন। নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে এ পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৮ হাজার ২৭৮ জন।

ইতালির ২১ অঞ্চলের মধ্যে লোম্বারদিয়ায় করোনার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত (মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়া, ক্রেমনাসহ) ১১টি প্রদেশ। আজ এ অঞ্চলে মারা গেছে ৩৬৮ জন। শুধু এ অঞ্চলেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে সাত হাজার ৯৬০ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৬৫ জন। আজ মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ২৯২ জন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে বুধবার টেলিকনফারেন্সে সাংবাদিকদের ভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, লকডাউন ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পূর্বঘোষিত পদক্ষেপে ‘জরুরি’ সরবরাহ ব্যবস্থা ছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল, সড়ক ও রেলপথ বাদে সব ধরনের নির্মাণ কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বাড়ির বাইরে সব ধরনের খেলাধুলা ও ব্যায়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দেশের এই দুর্যোগময় সময়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং দেশের জনগণের পাশেই আছেন তিনি বলে জানান। করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির ৬০ মিলিয়ন জনতার অর্থনৈতিক জীবন চাকা সচল রাখতে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যও পৃথক সুসংবাদ দিয়েছেন।

দেশের সকল মিউনিসিপালিটির স্যোশাল (সলিডারিটি) ফান্ডের জন্য মোট ৪.৩ বিলিয়ন ইউরো আগাম বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দেন। দীর্ঘদিন যাদের কাজ নেই,খাবার কেনার অর্থ নেই এমন হতদরিদ্র লোকদের জন্য সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে আলাদা করে আরও ৪০০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দিয়েছেন বলে তিনি জানান। যাদের কাজ নেই কিংবা কাজের স্থানে পর্যাপ্ত কাজ না থাকায় দীর্ঘদিন বাসায় বসে আছেন- তারা নিজ নিজ পৌরসভার মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে আবেদন করতে পারবেন।

এদিকে গত সপ্তাহে ঘোষিত ৫০ বিলিয়ন ইউরোর মধ্যে ২৫ বিলিয়ন ইতোমধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে দেশের সকল ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও চাকরিজীবীদের জন্য যারা মহামারির কারণে এখন বাধ্যতামূলক ঘরে বসে আছেন। প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ এই ২৫ বিলিয়ন ইউরো এপ্রিলের শুরু থেকেই পৌঁছতে শুরু করবে যার যার একাউন্টে। করোনা মহামারিতে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জন্য ইতালিয়ান সরকার পেশাভিত্তিক বিভিন্ন বোনাসও ঘোষণা করেছেন বলে তিনি জানান।

লোম্বারদিয়ার প্রেসিডেন্ট আত্তিলিয়ো ফোনতানা বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বেরগামো ফেয়ারাকে নতুন হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে হাসপাতাল উদ্বোধন করা হবে। বাণিজ্যিক রাজধানী মিলানের বিখ্যাত ফিয়েরা মিলানো সিটি পরিণত হয়েছে ইতালির সবচাইতে বড় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। ২০০ আইসিইউ বেড সংবলিত অত্যাধুনিক এই হাসপাতালটি পলি ক্লিনিকের তত্ত্বাবধানে ২০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৫০০ অভিজ্ঞ নার্স এবং ২০০ স্বাস্থ্যকর্মী চব্বিশ ঘণ্টা নিয়োজিত থাকবেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচাতে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের এই দুর্দিনে ৭ হাজার ২২০ জন অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স কর্মী স্বাস্থ্যসেবা দিতে করোনা আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়াও করোনায় আক্রান্তদের সহযোগিতায় আলবেনিয়া, চীন, কিউবা এবং রাশিয়া থেকে আগত মেডিকেল টিম ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রাণ হারানোর সংখ্যা: স্পেন  ৬১৬ জন, জার্মান ৬৬ জন, ইংল্যান্ড ৫৬৯ জন, সুইজারল্যান্ড ৩৪ জন, বেলজিয়াম ১৮৩ জন, হল্যান্ড ১৬৬ জন, অস্ট্রিয়া ১২ জন, পর্তুগাল ২২ জন, নরওয়ে চারজন, সুইডেন ৪৩ জন, ডেনমার্ক ১৯ জন, পোল্যান্ড ৮ জন, রোমানিয়া ২ জন, গ্রিস ২, ফিনল্যান্ড ২ জন, স্লোভেনিয়া ২ জন।

(ঢাকাটাইমস/৩এপ্রিল/এলএ)