করোনাভাইরাস বাতাসেও ছড়াতে পারে!

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১০:৩০

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস নিয়ে বিশেষজ্ঞদের গবেষণার শেষ নেই। ছোঁয়াচে এই রোগের সংক্রমণের মাধ্যম নিয়ে এখনও চিন্তিত বিজ্ঞানীরা।

গবেষক বা বিজ্ঞানীরা এখনও উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি যে, এটি ঠিক কীভাবে ছড়ায়, কখন ছড়ায়, সংক্রমণের লক্ষণ কী। ফলে রহস্যময় এই ভাইরাসটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী এখনও চলছে গবেষণা।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষক দল একেক রকম তথ্য দিচ্ছে। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে সক্ষম। এখন পর্যন্ত এটাই সবাই জানতো যে, শুধুমাত্র মানুষের মাধ্যমে কিংবা আক্রান্তের স্পর্শ করা স্থান থেকেই করোনা ছড়াচ্ছে। কিন্তু নতুন ওই গবেষণায় উঠে এসেছে বাতাসের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস।

করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। এমনই জানিয়েছেন আমেরিকার নেবার্সকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন আমেরিকায় আক্রান্ত রোগী ঘর থেকে চলে যাওয়ার পরেও সেখানে দীর্ঘক্ষণ রয়ে গিয়েছিল করোনা ভাইরাস। এই তথ্য প্রকাশ্য আসার পরেই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। যার কারণে করোনা চিকিৎসার কেন্দ্রগুলিতে রয়ে যাচ্ছে ভাইরাস। হাসপাতালের করিডর, লিফট, রোগীর ঘর থেকে শুরু করে হাসপাতালের বাইরেও দীর্ঘক্ষণ রয়ে যাচ্ছে এই সংক্রামক মারণ ভাইরাস।

বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের নেবরাস্কা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। গত সপ্তাহে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়। এতে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, সার্স-কোভ-২ বা কোভিড ১৯ বাতাসে ভাসতে পারে।

গবেষণায় তারা ১১ করোনা আক্রান্তের কক্ষ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তাদেরকে অন্য রোগিদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল তাদের কক্ষের প্রায় সব স্থানেই এই ভাইরাসের উপস্থিতি।

গবেষকরা যখন কক্ষের বাতাসের নমুনা নিলেন, সেখানেও করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছেন তারা। তাদের গবেষণাপত্রে আরো উঠে এসেছে যে, চিকিৎসকরা যেই হলরুম দিয়ে চলাচল করে থাকেন তার বাতাসেও করোনা ভাইরাস ছিল। তবে এই ভাইরাস বাতাসে কতদূর উড়ে যেতে পারে সেটি এখনো জানা যায়নি। এ নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণা শুরু করেছে দলটি।

করোনাভাইরাস বাতাসে ৩০ মিনিটের মতো ভেসে থাকতে পারে এবং চার দশমিক পাঁচ মিটার (১৪ দশমিক সাত ফুট) যাতায়াত করতে পারে বলে জানিয়েছে চীনের সরকারি এপিডেমিওলজিস্টের একটি দল।

গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে নির্গত হওয়ার পর ভাইরাসটি কঠিন পৃষ্ঠে কয়েকদিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে এবং স্পর্শের মাধ্যমে অন্যের শরীরে চলে যেতে পারে। তাছাড়া কেউ সেই পৃষ্ঠে অবচেতনভাবে হাত রাখার পর নিজের নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করলে তারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সেকারণে স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন করোনা আক্রান্ত রোগীর যাঁরা চিকিৎসা করছেন তাঁরা যেন অবস্যই সুরক্ষিত পোশাক এবং সব রকম সুরক্ষা বলয় মেনে চলেন। নাবার্সকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন আইসোলেশনে থাকা কোনও ব্যক্তি যদি সত্যি করোনা সংক্রামিত হন তাহলে সেক্ষেত্রেও অন্যদের সতর্ক হয়ে থাকতে হবে। কারণ রোগীর ব্যবহৃত শৌচাগারেও পাওয়া গিয়েছে করোনা ভাইরাস।

ভাইরাসটি কতোক্ষণ সক্রিয় থাকবে, তা নির্ভর করছে পৃষ্ঠের ধরন ও তাপমাত্রার ওপর। প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাসটি কাঁচ, কাপড়, ধাতু, প্লাস্টিক ও কাগজের ওপর দুই থেকে তিন দিন টিকে থাকতে পারে।

গবেষকরা জানিয়েছে ধাতু এবং প্লাস্টিকে প্রায় ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এই মারণ ভাইরাস। বিশেষ করে ড্রপলেট, দরজার হাতল, জানালার হাতল, মোবাইল, কাঁচজাতীয় জিনিস, খাট, শৌচাগারে ব্যবহৃত একাধিক প্লাস্টিকের সামগ্রিতে থেকে যায় করোনাভাইরাস।

(ঢাকাটাইমস/৩এপ্রিল/আরজেড/এজেড)