সবাই ঘরে থাকুন, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা নিন

বিধান সাহা
| আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৩৯ | প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৪:০৯
বিধান সাহা

একটা সময় সমাজকর্মী, মনোবিজ্ঞানী সকলেই সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং এর বিষয়ে বড়ই চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। সকলেই খেলার মাঠ ছেড়ে, বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে ঘরে বসে শুধু ফেসবুক চালান। কিন্তু কি আজব ব্যাপার দেখুন এখন একটা সামান্য ভাইরাস আমাদেরকে দিয়ে জোড় করে তাই করাচ্ছে। সারা বিশ্ব কাঁপছে এই ভাইরাসের ভয়ে। আজ পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত। আর মারা গেছেন প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ। এই অবস্থায় দেশে দেশে ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউন। বন্ধ করা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। থমকে গেছে অর্থনীতির চাকা। ধারনা করা হচ্ছে এই করোনা লকডাউনে এশিয়ান অর্থনীতি ০.৫% পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে। তারপরও আমাদের আগে বাঁচতে হবে আর এখন বেঁচে থাকার মূলমন্ত্রই হচ্ছে ঘরে থাকা।

আপনি হয়ত বলবেন ঘরে থাকুন বললেই তো আর ঘরে থাকা যায় না। ব্যাংক থেকে টাকা না তুলতে পারলে, বাজার কিভাবে করব? খাবই বা কি? অনেক ত্রাণ সরবরাহকারী আবার ত্রাণ নিয়ে ছুটছেন নানা দিকে। আর এসব কিছুরই সমাধান দিতে পারে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা।

বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতই সরকারের নির্দেশনা অনুসারে সীমিত পরিসরে খোলা রেখেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। কিন্তু হলে কি হবে বিভিন্ন ব্যাংকে দেখা যাচ্ছে আগের মতই ভিড়। মানছেন না কোন সামাজিক দূরত্ব। কিন্তু আপনি যদি একটু সচেতন হন ঘরে বসেই পেতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারির মাধ্যমে সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী করেছে।

ব্যাংকের প্রতিটি এটিএম বুথ, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সার্বক্ষণিক পর্যাপ্ত টাকার যোগান নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি লেনদেন ফ্রি করা হয়েছে। এসব লেনদেনের সীমাও ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সকল প্রকার ক্যাশ আউট ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ফ্রি করা হয়েছে। দেশের ভেতরে ডেবিট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে Merchant Discount Rate (MDR) এবং Interchange Reimbursement Fee (IRF) প্রযোজ্য হবে না। এক্ষেত্রে দৈনিক ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং মাসিক ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করা যাবে।

এছাড়া Near Field Communication (NFC) সুবিধাযুক্ত কার্ডে NFC লেনদেন সীমা ৩ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ইলেক্ট্রনিক KYC চালু করার মাধ্যমে।

এখন আপনি ঘরে বসেই আপনার স্মার্ট ফোনটি ব্যবহার করে একটি মোবাইল ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনি বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল প্রদান বা মোবাইল রিচার্জ থেকে শুরু করে অনেক ধরনের কেনাকাটা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ দিয়েই ঘরে বসে করতে পারেন।

তাছাড়া অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চাইলেই আপনাদের সাহায্য উপকারভোগীর মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে সরাসরি পাঠাতে পারেন। সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তাও মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা চলমান আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমকে আরও তরান্বিত করবে।

সবশেষে আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ করোনা ঝুঁকি এড়াতে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করুন, নিজে ঘরে থাকুন অন্যকে ঘরে থাকতে সাহায্য করুন। নিজে ভাল থাকুন, দেশকে ভাল রাখুন।

বিধান সাহা: উপপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :