আসুন পরিমিত খরচ করি, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই

সারওয়ার আলম
| আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৩৯ | প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৫:২৮
সারওয়ার আলম

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গভীরভাবে অনুধাবন করছি গোটা পৃথিবী করোনা নামক একটি অকোষীয় ভাইরাসের কাছে কতটা তটস্থ। যার কিনা বংশবৃদ্ধির (multiplication) বৈশিষ্ট ছাড়া জীবনীয় আর কোনো বৈশিষ্ট নেই বললেই চলে। যাকে ইলেকট্রন মাইক্রোসকোপ ছাড়া দেখা যায় না। দুনিয়ার সব পরাশক্তিগুলো তার নিকট আজ অনেকটা পর্যুদস্ত।

একসময় মনে হতো পৃথিবী একটি গ্রামের (Global village) মত। কিন্তু আজ একজন থেকে আরেকজন কত দূরে থাকা যায় তারই এক ধরণের প্রতিযোগিতা চলছে। করোনাভাইরাস আজ অনেকটা পৃথিবীর চালকের আসনে। আমরাও বুঝে উঠতে পারছি না এর ভয়াবহতা কতদূর গড়াবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রভাব।

ইতালির সরকার প্রধান বলেছেন আমরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। কি করতে হবে তাও বুঝতে পারছি না, সমাধান একমাত্র আকাশে। আজ পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ৫০ হাজারের অধিক লোক মারা গিয়েছেন। আমরা জানি আমরা সবাই একদিন মরে যাবো। কেউ আগে কেউ পরে। কিন্তু করোনায় মৃত্যুর ট্রাজেডি হচ্ছে প্রিয়জন/স্বজনরা কাছে আসতে পারছে না। যে মাতা-পিতা আদর করে সন্তানদের বড় করলো, যে প্রিয়তমা স্ত্রী তার প্রিয় স্বামীর সান্নিধ্যে জীবন কাটালো, সেই প্রিয় পিতা/মাতা/স্বামী/স্ত্রী/সন্তান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তাদের কাছেও আসতে পারছে না সেই প্রিয়জনরা।

নিশ্চয়ই মরণশীল হওয়ার পরও আমরা কেউই এ ধরণের চিরবিদায় কামনা করি না। এহেন পরিস্থিতিতে পৃথিবীর আস্তিক/নাস্তিক সবাই এক স্রষ্টার উপস্থিতি ও তার নিয়ন্ত্রণ ভালোভাবে বুঝতে পারছেন এবং সবাই মৃত্যুভয়ের আতঙ্কে আছেন। আমাদের প্রিয় স্বদেশেও ৬১ জনের মতো আক্রান্ত হয়েছেন। কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে আমাদের বেশ কিছু সংখ্যক প্রবাসী ভাইও মৃত্যুবরণ করেছেন। আল্লাহ তাদের বেহেশত নসিব করুন। সারাদেশে চলছে লকডাউনের মত পরিস্থিতি। বন্ধ রয়েছে সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতসহ প্রায় সকল কলকারখানা। খেটে খাওয়া মানুষগুলো কষ্ট করে দিনাতিপাত করছেন। যদিও সরকার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে ত্রাণ দিচ্ছেন। কিন্তু কষ্টে আছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। যারা কি-না চাইতেও পারে না বলতেও পারে না।

২ এপ্রিল দুপুরের পর যখন আমার ব্যাংক একাউন্ট থেকে মেসেজ পেলাম যে আমার বেতন জমা হয়েছে তখন অন্য মাসের মতো আনন্দ না পেয়ে অনেকটা বিষাদে মনটা ভরে গেল এই ভেবে যে যারা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে/কলখারখানায় চাকরি করেন বিশেষ করে নিম্নতর পদে তাদের অনেকেই হয়তো সঠিক সময়ে এই মাসে বেতন পাবেন না লকডাউনের কারণে।

কিন্তু শত কষ্ট হলেও আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য লকডাউন/চলাচল সীমিত না করে গতি নেই। তাই যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রয়েছেন তাদেরকে অনুরোধ করব আপনার স্বজন বা এলাকার লোককে যেভাবে পারেন সাহায্য করুন। আমার আপনার সাহায্যে হয়তো কিছু লোকের কষ্ট লাঘব হবে। একইসঙ্গে সবাই চেষ্টা করি পরিমিত খরচ করতে। আসুন আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সাহায্য চাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলি।

কোন ধরণের গুজব না ছড়াই এবং গুজবে কান না দেই। পরিশেষে ধন্যবাদ দিতে চাই এবং দোয়া কামনা করছি আমাদের সম্মানিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী যারা করোনার এই সম্মুখযুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। একইসঙ্গে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারিবৃন্দ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যদের, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য। যারা এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করছেন। আসুন আগামী কয়েকটা দিন ঘরে থাকি, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হই। আল্লাহ আমাদের সকলকে নিরাপদে রাখুন।

লেখক: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :