খামারিদের বাঁচাতে ত্রাণে মিল্কভিটার গুঁড়োদুধ যুক্ত করার উদ্যোগ

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৭:১৯ | প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৬:৫৬

করোনা প্রতিরোধে সরকারি ছুটিতে কর্মঝুঁকিতে পড়া মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে এই কার্যক্রম। জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী। যেখানে আছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। সেই তালিকায় গুঁড়োদুধ যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সমবায় ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা। এটি কার্যকর হলে জনগণের পুষ্টির চাহিদাপূরণের পাশাপাশি প্রান্তিক দুগ্ধখামারিদের ক্ষতি কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ্ কামাল এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. খলিলুর রহমানকে চিঠি দিয়েছেন মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্মসচিব) অমর চান বণিক।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গত ৩১ মার্চ আমরা সংশ্লিষ্ট দুটি দপ্তরে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি। গত ১ এপ্রিল আমাদের সভা ছিল। সেখানেও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। যদি ইতিবাচক নির্দেশনা পাই তাহলে আমাদের গুঁড়োদুধগুলো বিক্রি করতে পারবো।’

এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবে ঘোষিত ছুটিতে বিপাকে পড়েছেন দুগ্ধখামারিরা। কারণ দুগ্ধ প্রসেসর প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দুধ কেনা বন্ধ রেখেছে। এতে দুধ বিক্রিও বন্ধ হয়ে গেছে। অবিক্রীত দুধ হয় ফেলে দিতে হচ্ছে। নয়তো নামমাত্র মূল্যে ১০ থেকে ১২ টাকা লিটারে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এক লিটার দুধ পেতে একজন খামারির কম করে হলেও ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ব্যয় হয়।

দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, একজন খামারি দুধ বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে নিজের খরচ ও গরুর খাবার কিনে আনে। অথচ গত দশদিন ধরে তাদের সব কিছু বন্ধ হয়ে আছে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন জানান, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ লাখ লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে না। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। মাসিক হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

অমর চান বণিক বলেন, ‘সরকারের ত্রাণের তালিকায় মিল্কভিটার গুঁড়োদুধ যুক্ত হলে এদিকে সাধারণ মানুষের শারীরিক পুষ্টি চাহিদাপূরণ হবে। অন্যদিকে দেশের প্রান্তিক খামারিরাও উপকৃত হবে। কারণ এখন তারা দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। দুধের ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছেন না। মিল্কভিটা একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান। প্রান্তিক সমবায়ীরা এই প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। পণ্য বিক্রি হলে প্রান্তিক সেই খামারিরা তাদের দুধের ন্যায্যমূল্য পাবেন। মিল্কভিটা পণ্যের উৎপাদনও সচল থাকবে ‘

জানতে চাইলে মিল্কভিটার অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তোফায়েল আহম্মদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দুগ্ধখামারিরা খুবই দুর্দিন কাটাচ্ছেন। করোনায় তো গরু বা মহিষের দুধ দেওয়া বন্ধ নেই। তারা তো দুধ ঠিক দিচ্ছে। অথচ এই দুধ বিক্রি করার জায়গা নেই খামারির। যে কারণে বাধ্য হয়ে ১০ টাকা লিটারেও দুধ বিক্রি করে দিচ্ছেন কেউ কেউ। আবার ফেলেও দিতে হচ্ছে।’

তিনি মনে করেন, সরকারের ত্রাণ তালিকায় মিল্কভিটার গুঁড়োদুধ যুক্ত করা হলে খামারিরা আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন। তাদের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কারণ মিল্কভিটাও নতুন পণ্য উৎপাদন সচল রাখতে পারবে। খামারিরাও তাদের দুধ ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।

যা বলা হয়েছে মিল্কভিটার চিঠিতে:

ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজধানীসহ সারা দেশের অধিকাংম মানুষই এখন বাধ্যতামূলকভাবে যার যার ঘরে অবস্থান করছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিপাকে পড়েছেন দুঃস্থ, অসহায় ও কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষেরা। এমন দুঃসময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশে ঐ সকল মানুষদের পাশে এসে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘উক্ত ত্রাণ কার্যে মিল্কভিটা কর্তৃক উৎপাদিত গুঁড়োদুধ জি টু জি পদ্ধতিতে জেলা প্রশাসকগণ সরাসরি ক্রয় করে ছিন্নমূল, অসহায় ও দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের মাঝে বিতরণ করলে দেশের সর্ববৃহৎ সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার মাধ্যমে প্রান্তিক সমবায়ীগণ উপকৃত হবেন।’

এ ব্যাপারে সব জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কেনার ক্ষেত্রে কোনো দরপত্রের জটিলতা নেই জানিয়ে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘জি টু জি পদ্ধতিতে আমাদের পণ্যের যা দাম সেই দামেই তারা কিনতে পারবে। সরকারের সঙ্গে সরকারের কেনাবেচায় কোনো দরপত্রের প্রয়োজন হয় না। সরাসরি তারা নির্ধারিত দামে কিনতে পারবে।’

সরকারের সমবায় বিভাগের উপনিবন্ধক তোফায়েল আহম্মদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকারের মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মহোদয় করোনা প্রতিরোধে দুধ ও ডিম খাওয়ার কথা বলেছেন। এতে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের পর্যাপ্ত গুড়ো দুধ আছে। আমরা চাইলে সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারি।’

দুস্থ ও অতিদরিদ্র মানুষের পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুধ কেবল স্বচ্ছল মানুষরা খাবেন, তা তো নয়। সবার জন্যই প্রয়োজন। তাছাড়া মিল্কভিটার পণ্যের গুণগত মান নিয়েও কোনো প্রশ্ন নেই। বাজারে যেসব বিদেশি গুঁড়োদুধ পাওয়া যায় তার বেশির ভাগেই তেজস্ক্রিয় উপাদান থাকে বলে জানা যায়। নিম্নমানের এসব শিশুখাদ্যে বিভিন্ন সময় শিশা ও মেলালিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে শোনা গেছে। যা শিশুর জন্য তো বটেই মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু মিল্কভিটার গুঁড়োদুধ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এতে ক্ষতিকারক কোনো উপাদান নেই। এটি মানবদেহের পুষ্টির চাহিদাপূরণের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার।’

দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের দুগ্ধ শিল্পকে সংকটের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এ খাতে কৃষক পর্যায়ে সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন। তা না হলে গ্রামের গরিব কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে পড়বেন। খামারিরা না বাঁচলে সরকারি দুগ্ধশিল্প ধ্বংস হবে। মানুষ কর্মহীন হবে। কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিবে।

যেসব পণ্য উৎপাদন করে মিল্কভিটা:

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা) উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে তরল দুধ, টোনড মিল্ক, ফ্লেভার্ড মিল্ক, লাবাং, মাঠা, মাখন, ঘি, ননীযুক্ত গুঁড়াদুধ, ননী বিহীন গুঁড়াদুধ, ক্যান্ডি চকলেট, আইসক্রিম, চকোবার, ললিজ, রসমালাই, মিষ্টি দই, টক দই, রসগোল্লা, কাঁচা সন্দেশ, প্যারা সন্দেশ, মোজারেলা চিজ।

বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মিল্কভিটা:

১৯৭৩ সালের কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তরবঙ্গে একটি কর্মসূচি শেষ করে ঢাকায় ফিরছিলেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়িতে ফেরি পারাপারের ব্যবস্থা ছিল তখন। ফেরিতে ওঠার সময় দেখলেন বঙ্গবন্ধু, যারাই হেঁটে যাচ্ছেন তাদের সঙ্গেই একপাল গরু। একজন রাখালকে ডাকলেন, জানতে চাইলেন, ‘গরু নিয়ে কই যাও?’। জবাব আসলো, ‘গরু পালি, দুধ বেচি’। ‘কত করে বেচো?’-সরল মনে জানতে চাইলেন প্রান্তজনের অন্তঃপ্রাণ মুজিব। লোকটি বললো, ‘স্যার গ্রামে গ্রামে বেচি। মহাজনরা যা দেয় তাই পাই।’কথোপকথন শেষ। ফেরিতে উঠেই মুজিব ভাবলেন, মহাজনদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে এই প্রান্তজনদের। কিছু একটা করতে আবু সাঈদকে (আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী) প্রধান করে একটি কমিটি করেন। ওই কমিটিকে ভারতের আমুল ডেইরি ফার্ম দেখার জন্য পাঠালেন। এর আমলে বাংলাদেশেও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার ইচ্ছার কথা বলেন। প্রতিনিধিদল ভারত ঘুরে এসে ধারণা দিল। সেই অনুযায়ী গড়ে তোলা হয় আজকের মিল্কভিটা।

বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত মিল্কভিটার বর্তমান চেয়ারম্যান তাঁরই ভাই শেখ নাদির হোসেন লিপু। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে মিল্কভিটা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে দুগ্ধশিল্পে যুগান্তকারী বিপ্লব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।

(ঢাকাটাইমস/ ৩ মার্চ/ এইচএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

সোনালী লাইফের অফিস ভাড়াকে ভবনের ক্রয়মূল্যের অগ্রিম পরিশোধ দেখানোর দাবি

ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি ডিভাইস বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

পাটজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজারকে কাজে লাগাতে হবে: পাটমন্ত্রী

অধ্যাপক খলীলী ব্যাংক এশিয়ার বোর্ড অডিট কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত

স্বর্ণের দাম কমল ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা

জনতা ব্যাংকের ম‌্যানেজার্স ইন্ডাকশন প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে স্থানান্তরিত হলো ন্যাশনাল ব্যাংক ডিজাস্টার রিকভারি সাইট

ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন

টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে ওয়ালটন, মুনাফা বেড়েছে ৫১২ কোটি টাকা

মিনিস্টারের শতকোটি টাকার ঈদ উপহার জিতে আনন্দিত ক্রেতারা 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :