রোগ গোপন রেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে লাভ নেই ভাই

শেখ মামুনুর রশীদ
| আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ১০:২১ | প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৯:০৬

পুরো পৃথিবী করোনা-জ্বরে টালমাটাল। আমরাও। রোগটি হলে গোপন রাখার কিছু নেই। আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা নেবেন। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধদের কাছ থেকে পুরোপুরি আলাদা থাকবেন। ব্যাস, এটুকুই। এ নিয়ে এত লুকোচুরির কী আছে!

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজা, রানি, বাদশা থেকে শুরু করে রাস্তার ফকির- কেউ বাদ যাচ্ছে না করোনার হাত থেকে। সবাই আক্রান্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করছে। এখানে গোপনীয়তার কিছু নাই।

বিবিসির এক রিপোর্টার লন্ডনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন। তার নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তাকে এবং তার সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে আলাদা করে রাখার পাশাপাশি তাদের চিকিৎসার সেবাও নিশ্চিত করা হয়েছে।

আমরাও গণমাধ্যমকর্মী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অমোদের শহরে একজন সহকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আরেকজন সন্দেহের তালিকায় আছেন। দুজন একই প্রতিষ্ঠানের। দুজনই হাসপাতালে ভর্তি। করোনায় আক্রান্ত বিবিসির রিপোর্টারের নাম প্রকাশ করা হলেও আমরা আছি এ নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে। একপক্ষ মনে করেন, রোগ বিস্তার ঠেকাতে এবং কর্মস্থলের সহকর্মী ও বাসায় পরিবারের সদস্য- সবার স্বার্থে সাবধানতা অবলম্বনের জন্যই আক্রান্তদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা উচিত। এমনকি প্রতিষ্ঠানটিও আপাতত লকডাউন করার পক্ষে একটি পক্ষ।

অন্য পক্ষ তা মানতে নারাজ। তারা নাম-পরিচয় গোপন রাখতে চান, যেমনটা গোপন রাখা হয় এইডস আক্রান্তদের বেলায়। আমি পক্ষ-বিপক্ষ বুঝি না। আমি শুধু এটুকু বুঝি- গণমাধ্যমে এখন বড় দূর্দিন। একটার পর একটা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আরও অনেকে আছে বন্ধের পথে। করোনা তাদের কাছে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার একটি বাহানা মাত্র।

গণমাধ্যমে সংকট আরও আছে। চাকরি নাই। বেকারত্ব বাড়ছে। যারা চাকরি করছেন, তাদের অনেকেরই মাসের পর মাস বেতন বকেয়া। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে কথায় কথায় কর্মী ছাঁটাই। তাও আবার পাওনা পরিশোধ না করেই। মালিকপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের বড় কর্তারা কর্মীদের পেটে লাথি মারছেন। আজ যিনি মারছেন, কাল তিনিও খাচ্ছেন লাথি। তবু্ও শিখি না। শেখেন না তারা।

এই যখন বাস্তবতা, তখন করোনার মুখে হাজারো অসহায় গণমাধ্যমকর্মীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়ার অর্থটা আমি বুঝি না। তথ্য গোপন রাখার বিরুদ্ধে, তথ্য অধিকারের পক্ষে জীবনভর লড়াই করে আসছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এখন তারা নিজেরা নিজেদের অসুখের খবর গোপন রাখতে চান কার স্বার্থে? আমি, আপনি, সে কিংবা উনি- করোনায় আক্রান্তের নাম পরিচয় গোপন থাকলে আতঙ্ক আরও ছড়াবে। সন্দেহ-অবিশ্বাস আরও বাড়বে।

বিশ্ব করোনা-যুগে পা ফেলার পর এমনিতেই এখন কেউ কারও সঙ্গে বসে না। হাত মেলায় না। পরিবারের সদস্য ছাড়া বাইরের কারও সঙ্গে কথা নেই। দেখা নেই। গল্প আড্ডাও নেই। তার ওপর নাম-পরিচয় গোপন মানে, এই মহাগ্রাসী সংকটকে আরও উস্কে দেয়া। ভীতি বাড়িয়ে দেয়া। আর সবচেয়ে বড় কথা- করোনায় আক্রান্ত রোগীর পরিচয় গোপন রাখার অর্থই হলো পুরো গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে কর্মরতদের অরক্ষিত করে রাখা।

খেয়ে না খেয়ে, অভাব-অনটনে থাকা, অনিয়মিত বেতনে এই ইট-পাথরের পাষাণ শহরে জীবনসংগ্রাম করা সহকর্মীকে আপনি এই করোনা-যুগে নতুন করে বিপদে ফেলতে চাইবেন কেন? কী লাভ আপনার? বরং আপনি অসুস্থ হলে বলুন। পাশে দাঁড়াব আমরা। আপনার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করব।

তাই বিনয়ের সঙ্গে বলি, নিজে বাঁচুন। সহকর্মীকে বাঁচান। নিজে নিরাপদে থাকুন। সহকর্মীর নিরাপত্তটুকুও নিশ্চিত করুন। করোনা থাকবে না। আমরা থাকব। আমরা জয় করব একদিন।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক। সদস্য- বিএফইউজে ও পিআইবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :