একমাসের লকডাউনে সিঙ্গাপুর

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৯:৪১ | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৯:৫৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সফলতা দেখিয়ে প্রশংসা পাওয়া সিঙ্গাপুর এবার ৪ মে পর্যন্ত লকডাউনে যাচ্ছে। এই এক মাস সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনাবশ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

প্রথমদিকে যে কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, সিঙ্গাপুর তার মধ্যে একটি। জানুয়ারি থেকে যখন বিশ্বব্যাপী করোনা ছড়াতে থাকে তখনও স্বাভাবিক ছিল এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও বিশ্বের প্রধান সমুদ্র বন্দরের দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা নগরায়িত দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। কিন্তু গত একমাসে সেই সাফল্যে যেন কিছুটা ভাটা পড়েছে।  মার্চের শুরুতেও দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন একশোর কাছাকাছি।  কিন্তু মাস শেষ না হতেই সেই সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একারণে করোনার বিস্তার ঠেকাতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনাবশ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করল সিঙ্গাপুর সরকার।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, খাদ্যপ্রতিষ্ঠান, বাজার, সুপারমার্কেট, হাসপাতাল, ক্লিনিক, জরুরি পরিবহন ও প্রধান ব্যাংকিং সেবাগুলোই শুধু চালু থাকবে।  এর বাইরে যাবতীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, অনুষ্ঠান বন্ধ।  তবে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বিকল্প উপায়ে (অনলাইনে) শিক্ষার্থীদের গৃহশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

এই নির্দেশনা আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে এর সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে।

এদিন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে পর্যাপ্ত খাবারের মজুত রয়েছে।  নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কোনও কিছুর সংকট হবে না।

দেশবাসীকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রয়োজনে গৃহস্থালী ও ব্যবসাক্ষেত্রে সহায়তা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রতি দিয়েছন তিনি।

এর আগে, গত মাসেই গৃহস্থালী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজের কথা জানিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরের অর্থমন্ত্রী।

দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১১৪ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন পাঁচজন।

জানা যায়, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে চীনের গুয়াংশি শহর থেকে ২০ জন পর্যটকের একটি দল চীনা নববর্ষ উদযাপনের জন্য সিঙ্গাপুর সফর করে। দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কয়েকটি জায়গা ভ্রমণ করে তারা।

তারা চীনা প্রথাগত একটি ওষুধের দোকানও ভ্রমণ করেছিলেন যেখানে কুমিরের তেল ও বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ বিক্রি করা হয়। চীনের মূল ভূখণ্ডের পর্যটকদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় দোকান।

ঐ সময়ে সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছিল ১৮ জনের মধ্যে, যেগুলোর সবগুলোই চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আসা মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল।

কিন্তু ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ সিঙ্গাপুরের সরকার জানায় যে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেও ভাইরাস ছড়িয়েছে, যার প্রথম গুচ্ছটি ইয়ং থাই হ্যাং চাইনিজ ঔষধের দোকানে ছিল। প্রথম দুইজন অসুস্থ হওয়া ব্যক্তি ছিলেন স্থানীয় একজন ট্যুর গাইড ও একজন বিক্রয়কর্মী।

ঐ একটি দোকান থেকে নয় জন সংক্রমিত হয়, যার মধ্যে বিক্রয়কর্মীর স্বামী, তার ছয় মাস বয়সী সন্তান এবং তাদের ইন্দোনেশিয়ান গৃহকর্মী ছিলেন। ঐ দোকানের আরো দু'জন কর্মীর মধ্যেও ভাইরাস ছড়ায়।

সূত্র: বিবিসি।

ঢাকাটাইমস/০৩ এপ্রিল/ইএস