ফরিদপুরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, সেবা বঞ্চিত রোগীরা

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২০, ১৬:২০

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুরে এখনো হয়নি ভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা। এ অবস্থায় করোনা সন্দেহে এখানকার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার রোগীদের ভরসা এখনো ঢাকামুখী। অনেক রোগীকে এজন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে হচ্ছে। আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেকের নমুনা ঢাকায় পাঠিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এতে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা করোনা সন্দেহভাজনদের ভোগান্তির পাশাপাশি আতঙ্ক কাটছে না এখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসকদের।

তারা বলছেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা এলেই করোনা আক্রান্ত কিনা সেটি নিশ্চিত না হওয়ায় করোনা আক্রান্ত নন- এমন রোগীদের কাছে যেতেও তারা বিব্রত বোধ করছেন। এতে নির্বিশেষে ভোগান্তিতে পরেছেন এখানকার অধিবাসীরা।

গত মার্চ মাসের ফমেকে একটি পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়। এ পর্যন্ত এখানে পাঁচজন করোনাভাইরাস সন্দেহভাজনকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তারা প্রকৃতই করোনা আক্রান্ত কিনা সেটি পরীক্ষার ব্যবস্থা না হওয়ায় বিপাকে পরেন কর্মরত চিকিৎসকেরা।

প্রথম পর্যায়ে ভর্তি হওয়া দুজনের একজন ছিলেন একজন মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র ও অপরজন একটি ১৩ বছরের শিশু। তারা দুজনেই এখানে কোন ভরসা না পেয়ে ঢাকায় নিজ উদ্যোগে রোগীদের ঢাকায় নিয়ে যান।

গত ২৫ মার্চ করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির প্রেক্ষিতে সরকার সকলকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেয়ার পরপরই ফরিদপুরের প্রায় সবক’টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসা প্রদান একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চিকিৎসক তাদের প্রাইভেট চেম্বারের সামনে নোটিস টাঙিয়ে রোগী দেখা বন্ধ করে দেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসময় থেকে সাধারণ রোগীরা ডাক্তার না পেয়ে অনেকে ফিরে আসেন। তবে অপারেশনের রোগীসহ এখনো অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে বিপাকে পরেন।

ফরিদপুরের সদর আসনের সংসদ সদস্য ও এলজিআরডি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ প্রেক্ষিতে ফরিদপুরের চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখার জন্য তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুরের সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগের নিরসনে জেলার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। তার এ প্রচেষ্টার পর বর্তমানে কিছু কিছু চিকিৎসক অবশ্য সীমিত আকারে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু করেছেন। তবে এখনো ফরিদপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের পরীক্ষার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতাল মালিকদের সাথে এ ব্যাপারে কথা প্রসঙ্গে তারা জানান, নিজেদের সুরক্ষার পাশাপাশি এখানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পরীক্ষার ব্যবস্থা না হওয়ার কারণেই মূলত চিকিৎসকরা একপ্রকার শঙ্কায় রয়েছেন।

ফরিদপুরের বেসরকারি একটি হাসপাতালের মালিক মহসিন শরীফ বলেন, ফরিদপুরে এখনো করোনাভাইরাস শনাক্তের কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ কারণে ফরিদপুরের চিকিৎসকদের মাঝে এক ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। তাদের কাছে ঠান্ডাজনিত কোন রোগী আসলে তারা তার চিকিৎসা করতে বিব্রত বোধ করছেন। এ পরিস্থিতির অবসান হতে হলে এখানে করোনা শনাক্তের পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

তিনি দাবি করেন, অবিলম্বে ফরিদপুরে করোনা রোগে যেসব সন্দেহভাজন রোগী আসছেন- তাদের যেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেই শিগগির পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান বলেন, আমরা গত মাসেই করোনার জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করে এখানে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি।

সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি- দ্রুতই ফরিদপুরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে। ফমেক হাসপাতালে করোনা টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানও পরিদর্শন করেছি। আশা করছি, আগামী পনের দিনের মধ্যে ফরিদপুরে করোনাভাইরাসে সন্দেহভাজনদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারব।

বর্তমানে (শনিবার) ফমেক হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে কোন রোগী ভর্তি নেই। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে মধুখালী উপজেলা হতে গত মঙ্গলবার রাতে ফমেক হাসপাতালে ভর্তি করা স্বামী-স্ত্রী করোনা আক্রান্ত নন বলে জানা গেছে।

গত বুধবার সকালে তাদের শারীরিক বিভিন্ন নমুনা ঢাকার আইইসিডিআরে পাঠানোর পর শনিবার ঢাকা হতে রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

(ঢাকাটাইমস/৪এপ্রিল/এলএ)