ত্রাণের টাকা চাইলেন এমপি, ব্যাগে থাকবে নিজের ছবি

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
| আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০১ | প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ২১:৫৫

ত্রাণ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী সংগঠনের কাছে প্রকাশ্যে চাঁদা দাবি করেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। শনিবার দুপুরে তিনি তানোর উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে ব্যবসায়ী, শিক্ষক সমিতি, দলিল লেখক সমিতিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য বিভিন্ন অংকের টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে তানোরজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও সরকারি ত্রাণ উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিতরণেরও নির্দেশ দিয়েছেন এমপি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক আহ্বান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো। এতে স্থানীয় এমপি ফারুক চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন। এ সময় তানোরের গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উপস্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের নিকট থেকে এমপি চাঁদা দাবি করেন। সেই টাকা তিনি কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের তানোর শাখায় ব্যক্তিগত একটি হিসাব নম্বরে (চলতি হিসাব নম্বর-৬১৯) দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

প্রথমে এমপি ঘোষণা দেন প্রয়োজনে তিনিও এক লাখ টাকা দেবেন এই অ্যাকাউন্টে। এরপর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি জিল্লুর রহমান প্রথমে এক লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিলে এমপি তাকে ধমক দেন। পরে জিল্লুর রহমান দুই লাখ টাকাই দিতে রাজি হন।

এরপর প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কাছে আড়াই লাখ টাকা, চালকল মালিক সমিতি থেকে এক লাখ টাকা, আলুর হিমাগার প্রতি এক লাখ টাকা, বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তানোরে থাকা প্রায় ৫৫৩টি গভীর নলকূপ অপারেটর প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। শেষে সবচেয়ে মোটা অংকের চাঁদা দিতে নির্দেশ দেন তানোর দলিল লেখক সমিতিকে। কিন্তু সমিতির নেতারা এতে অস্বীকৃতি জানালে এমপি তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

এ সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো, তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে তানোর উপজেলায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত চাল সরকারি নিয়মমাফিক ইউএনও বিতরণ করার থাকলেও সেটি উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিতরণের নির্দেশ দেন এমপি। এছাড়াও এখন থেকে তানোর উপজেলায় যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে সেই ত্রাণ বিতরণের জন্য এমপি ফারুক চৌধুরীর ছবি সম্বলিত চটের বস্তায় বিতরণ করতে হবে। ওই বস্তার ওপরে কোণায় থাকবে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি।

তানোর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, এমপির দাবিকৃত অর্থ দিতে হলে উপজেলার সব প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা নিতে হবে। তবেই ওই টাকা দেয়া যাবে। তাছাড়া এই টাকা আমরা কিভাবে দেবো?

তানোরের একটি হিমাগারের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ বছর এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। এর ওপর প্রতিটি হিমাগার থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা আমরা কিভাবে দেবো? এটি অন্যায় হবে।

এদিকে ত্রাণের নামে এমপি এভাবে বিভিন্ন সংগঠন ও পেশাজীবীদের নিকট থেকে চাঁদা দাবি করতে পারেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে তারাও চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন ওই সভায়।

জানতে চাইলে তানোর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে যথেষ্ট ত্রাণ আছে। কিন্তু এমপি কেন চাঁদা দাবি করলেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।

ইউএনও সুশান্ত মাহাতো বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সভা ডেকেছি আমি। উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো চাঁদা কারো নিকট থেকে দাবি করা হয়নি। তবে এমপি মহোদয় কী কারণে চাঁদা উঠানোর কথা বলেছেন সে প্রসঙ্গে তিনিই বলবেন। এটি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না জানান, এমপি কারো কাছে চাঁদা চাননি। দুস্থদের সহায়তায়, যে যা পারবে, সেটি ওই ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা দেবে। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ হবে। ছবি সম্বলিত ব্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব জায়গাতেই এমন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানেও সেটি বলা হয়েছে।

এদিকে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, স্থানীয় গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতেই পেশাজীবীদের ইচ্ছামতো চাঁদা দিতে চেয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যৌথ হিসাব নম্বরে চাঁদার টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। কারো নিকট থেকে জোর করে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে না। যারা দিবেন স্বেচ্ছায় দিবেন।

(ঢাকাটাইমস/৪এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :