করোনার সঠিক বিশ্লেষণ ও আশাবাদ জরুরি এখন

ফিচার ডেস্ক
ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৩৬

অনেকেই বাসায় থাকার এই সময়টাকে সুন্দরভাবে কাজে লাগিয়েছেন নিজের কল্যাণে তৎপর হয়ে। আর মানুষের কল্যাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ও প্রার্থনা করে। অনেকেই আবার এই সময়টাকে নষ্ট করেছেন- অহেতুক দুশ্চিন্তা করে, ভয় পেয়ে, নেতিবাচক কথা বা ভাবের আদান-প্রদান করে। অথবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভার্চুয়াল জগতে কাটানোর মাধ্যমে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে, নিজেকে আরও ভয় এবং আতঙ্কে ভাসিয়ে।

বিশ্লেষণের আলোয় করোনা-আতঙ্ক!

আসলে গুজবের যেমন হাত-পা নাই- আতঙ্কেরও হাত-পা নাই। ভুতের অস্তিত্ব যেরকম কল্পনায়, ভয়ের অস্তিত্বও বিস্তার করে কল্পনার জগতে। কল্পনা থেকে মনোরাজ্যে এবং মনোরাজ্য থেকে দেহে। এবং ভয় সবসময়ই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, নষ্ট করে দেয়, দুর্বল করে দেয়।

ভয় যেরকম বিশ্লেষণের আলো সহ্য করতে পারে না; করোনা-আতঙ্কও এই বিশ্লেষণের আলোয় উধাও হয়ে যাবে। আতঙ্ক মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে পারবে না। অনুভব করা যাবে নিরেট বাস্তবতাকে। কারো কারো মনের অবস্থা এখন এরকম যে, ‘করোনা’ যেন ক্ষুধার্ত বাঘের মতো চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে- আপনাকে পাওয়ামাত্র টুকরা টুকরা করে খেয়ে ফেলবে- আপনার আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না! এই ভয়কে জয় করতে আসুন বিশ্লেষণের আলো ফেলি বাস্তবতার ওপর।

আসল বাস্তবতা : পৃথিবীতে প্রতিদিনের গড় মৃত্যু এক লাখ ৫৩ হাজার বনাম করোনায় ৮২১

আমরা যদি তাকাই বাস্তব সত্যের দিকে, তাহলে আমরা কী দেখি? করোনা-আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর যে হার- ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা হচ্ছে ৫৯,১৬৫ জন। অর্থাৎ যদি আমরা গড় করি- ৭২ দিনে গড়ে মৃত্যুর হার হচ্ছে প্রতিদিন ৮২১ জন। আর প্রত্যেকদিন সারা পৃথিবীতে মারা যাচ্ছেন প্রায় এক লাখ ৫৩ হাজার মানুষ। এর মাঝে শুধু হৃদপিণ্ডের সাথে সম্পর্কিত রোগে ও স্ট্রোকে মারা যান প্রতিদিন প্রায় ৪১, ৬৪৩ জন (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী)। এই দেড় লক্ষ মৃত্যু আতঙ্ক সৃষ্টি করছে না বা ৪১ হাজার মৃত্যু নিয়ে কোন সাড়া শব্দ নেই কিন্তু এই আটশ মৃত্যু আতঙ্ক সৃষ্টি করছে! কেন? এই প্রশ্নের উত্তরটাও এখন অনেকে আঁচ করতে পারছেন। আগামীতে আরও পরিস্কারভাবে বোঝা যাবে। যাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে তাদের ধারণা যে- ‘করোনা’ পেলেই হলো! করোনা মানেই যেন নির্ঘাত মৃত্যু। আসলে কি তাই?

‘ডায়মন্ড প্রিন্সেস’-সমুদ্রের বুকে নির্বাসিত জাহাজের আশাবাদী বার্তা

ডায়মন্ড প্রিন্সেস- একটা লাক্সারি ক্রুজ শিপ এবং এই ক্রুজ শিপ জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে পৌঁছায় ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখে। জাপানিজ কর্তৃপক্ষ যখন খবর পান যে এখানে করোনার রোগী আছে; পুরো জাহাজটাকে কোয়ারেন্টাইনে ঘোষণা করেন। অর্থাৎ সেখানে কেউ যেতেও পারবে না; বেরুতেও পারবে না। ১৬ই মার্চ পর্যন্ত জাপানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ৩,৭১১ জন প্যাসেঞ্জার এবং ক্রু'র সবাইকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। সেখানে ৭১২ জনকে পাওয়া গেল যাদের শরীরে করোনার জীবাণু রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ৩৩৪ জনের ভেতর রোগের কোনো লক্ষণই পাওয়া যায় নি। রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় ৩৭৮ জনের শরীরে। অর্থাৎ মোট যাত্রী ও ক্রুর মধ্যে অসুস্থতার হার হচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ! একসাথে এক জায়গায় একমাস থাকার পরও আক্রান্তের হার মাত্র ১০ শতাংশ! আর ২৪শে মার্চ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১০ জন। যাদের প্রত্যেকের বয়সই ছিলো ৭০ বা তার ওপরে।

মৃত্যু- করোনায় না অন্য কারণে?

করোনায় মৃত্যু নিয়েও রহস্য রয়ে যাচ্ছে। বয়স্ক যারা মারা যাচ্ছেন এই ‘ফ্লু’র সময়ে; তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন না অন্য রোগ তাদের মৃত্যুর কারণ- এটা নিয়ে যুক্তরাজ্য, ইটালি এবং বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের সংশয় রয়েছে, সন্দেহ রয়েছে।

ইটালিতে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, ৯৯ শতাংশ আগে কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলেন (সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার ২৩ মার্চ ২০২০)। ইটালিতে যারা মারা যান ‘করোনা-আক্রান্ত’ বলে কথিত তাদের মাত্র ১২ শতাংশের ডেথ সার্টিফিকেট হচ্ছে যে তারা সরাসরি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ৩০ মার্চ ২০২০)। অতএব এ থেকে বোঝা যায় যে- যারা মারা গেছেন তারা অধিকাংশই বয়স্ক এবং তারা আগে থেকেই নানান রকম জটিলতায় ভুগছিলেন।

একজন বিশেষজ্ঞের মন্তব্য

এ ব্যাপারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে বক্তব্য দিতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিজ এনালাইসিস এর প্রফেসর নীল ফার্গুসন খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, “আসলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা গেছেন যুক্তরাজ্যে এটা বলা মুশকিল। কারণ যারা এসময় মারা গেছেন তাদের দুই-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেক, তাদের বয়স এতটাই ছিল যে তারা যে-কোনোভাবেই এসময়ে মারা যেতে পারতেন। ‘করোনা’ না হলেও তারা মারা যেতে পারতেন। এদের বয়স ৭০ এর ওপরে।”

যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং ইটালির মৃত্যুর হার ও কারণ খুব সুস্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, করোনায় তারাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন যারা আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। বয়সের কারণে যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছিল।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: প্রত্যেকের ভেতরে থাকা আসল শক্তি

ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস কাউকে আক্রমণ করবে কি করবে না- এটা সবসময় নির্ভর করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরে। আমাদের চারপাশে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস-এলার্জেন-ফাঙ্গি এগুলো রয়েছে এবং প্রতিদিন আমরা এই কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস-এলার্জেন-ফাঙ্গির সাথে লড়াই করেই আমরা বেঁচে আছি, সুস্থ আছি, ভালো আছি।

কেন? কারণ একটাই। আমার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম যদি ঠিক থাকে, তাহলে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের আক্রমণ খুব সহজেই ঠেকানো সম্ভব। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পাশ্চাত্যের যে-কোনো মানুষের চেয়ে, যে-কোনো জাতির চেয়ে অনেক বেশি! এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আমরা অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এবং আমরা অধিকাংশই প্রতিদিন স্বাভাবিক পানি, ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করি ছোটবেলা থেকে। যার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রবল। এবং আমাদের দেশে করোনার অবস্থান দেখেও আমরা বুঝতে পারি এ কথার সত্যতা। এতদিনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ৬১ জন।

করোনা-আক্রান্ত রোগীর ভবনে থাকলেই আপনি করোনা-আক্রান্ত হবেন না

আক্রান্ত রোগীর ভবনে থাকলেই আপনি করোনা-আক্রান্ত হবেন- এই ভয় করার কোনো কারণ নাই। কারণ একটি জাহাজের মধ্যে চার হাজার মানুষ থাকার পরও মাত্র ১০ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাতে যত লোক আক্রান্ত হয়ে যতজন মারা গেছেন, তার চেয়ে আরও অনেক অনেক বেশি পরিমাণ মানুষ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। অতএব করোনাকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই।

তাই এখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবার উদ্যোগ নিতে হবে

কিন্তু যে-কোনো রোগ থাকুক, খারাপ জিনিস থাকুক, অসুস্থতা থাকুক সেটার ব্যাপারে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। এবং বাসায় থেকে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের সবচেয়ে বেশি উপকার করা সম্ভব এখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্যে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়ে। এক্ষেত্রে ধ্যান (মেডিটেশন), যোগ ব্যয়াম, ভয়ের বদলে সেবার মনোভাব, ইতিবাচক চিন্তা কথা ও কাজ, সব সময় আশাবাদী ও সাহসী থাকা, সুন্দর ঘুম, সুষম প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাস - এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

অ্যামেরিকানদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। কারণ তাদের খাদ্যাভাসে রয়েছে ফাস্টফুড, চিনিজাত খাবার এবং সফট ড্রিংকস, এলকোহল, সিগারেট ইত্যাদি। এই জিনিসগুলো একজন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। নানানরকম জটিল রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি করে। সেখানেও দেখা গেছে যে, যিনি ধ্যান করেন না তিনি যে সময়ে ডাক্তারের কাছে চারবার যান, সেসময়ে একজন ধ্যানী যান মাত্র একবার। কাজেই, যারা ধ্যান করেন, তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। এটা যদি আমেরিকার প্রেক্ষাপটে হয়ে থাকে তো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই বেশি এবং যারা ধ্যান করেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও আরও অনেক বেশি। যারা ধ্যান করেন, তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম, যদি তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি সুন্দরভাবে পালন করেন। এখন যেহেতু বাসায় পর্যাপ্ত সময় পাওয়া গেছে, এই সময়টাকে নিজের ইমিউন সিস্টেমটাকে আরও শক্তিশালী করার জন্যে কাজে লাগাতে হবে।

ব্যায়াম, ধ্যান, প্রাকৃতিক

এইজন্যে নিয়মিত দুবেলা/তিনবেলা মেডিটেশন করা ভাল। এর সাথে যোগ ব্যায়াম। এসময়ে বিশেষভাবে যোগ ব্যয়ামের কিছু আসন যেমন উষ্ট্রাসন, মৎস্যাসন, পবন-মুক্তাসন, হলাসন, শশাঙ্গাসন, গোমুখাসন এবং ভুজঙ্গাসন- ইত্যাদি নিয়মিত করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।

এবং যত প্রাকৃতিক খাবার খাওয়া যায় তত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকবে। চিনিজাতীয় খাবার পুরোপুরি বর্জনের মধ্য দিয়েও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। ক্যান্সার, স্থূলতা, ডায়াবেটিস- আরও অন্যান্য জটিল রোগ-ব্যাধির ঝুঁকিও কমবে।

সঠিক বিশ্লেষণ, সাহস, সমমর্মিতা ও আশাবাদ থাকুক অব্যহত...

সবাই যেন গুজব ও বাস্তবতা, আতঙ্ক ও সত্য, রটনা ও তথ্য- এর গভীরে ঢুকতে পারি। সত্যকে উপলব্ধি করে সবাই যেন সাহসী হয়ে উঠতে পারি। আমাদের যে জাতিগত সাহস এবং বীরত্বের পরিচয় আমরা যুগে যুগে দিয়েছি; সেই সাহস সমমর্মিতা এবং বীরত্ব নিয়েই আমরা জেগে উঠতে পারব বলে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস, আশাবাদ, সাহস ও সমমর্মিতা অটুট থাকুক, অব্যহত থাকুক সবার মাঝে।

(ঢাকাটাইমস/৫এপ্রিল/ এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :