ফেস মাস্ক কি করোনা থেকে সুরক্ষা দেয়?

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:০২ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:১১

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

সারাদেশে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চারিদিকে মৃত্যুর হাতছানি, এ ভাইরাস থেকে কেউ নিরাপদে নেই। যে কোনো সময় যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন ড্রপলেটের মাধ্যমে। আবার ফেস মাস্ক পরিধান করে আপনি যে আক্রান্ত হবেন না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি থেকে নির্গত জলীয়কণা সঠিকভাবে মাস্ক প্রতিহত নাও করতে পারে।

করোনাভাইসের প্রধান ট্রান্সমিশন রুট হলো হাঁচি কাশি থেকে নির্গত জলীয়কণা। কোনো কোনো গবেষণায় মাস্ক পরে পাঁচগুণ সুরক্ষার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, করোনার সংক্রমণ দ্রুত প্রসার করে মানুষের মুখ থেকে বের হওয়া জলীয়কণা। আর এই জলীয়কণাগুলো কয়েক ঘণ্টা ধরে বাতাসে ভাসতে পারে। পরে মেঘের মতো বায়ু যে দিকে যায় সেদিকে যেতে পারে। এটি প্রায় ২৩ ফুট থেকে ২৭ ফুট পর্যন্ত দূরে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার সহায়ক হতে পারে, যদি সঠিক আবহাওয়া ও সঠিক উপায়ে এটি ব্যবহার করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে যথাযথভাবে হাত ধোয়ার মতো শর্ত পূরণ হলে তবেই সাধারণ মাস্ক পরা যাবে। তবে আপনার যদি সংক্রমিত কারও সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে অবশ্যই আপনাকে মাস্ক পরতে হবে। করোনাভাইরাসের নূন্যতম লক্ষণগুলোও থাকে তবুও মাস্ক পরবেন।

লকডাউনে বাসায় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে থাকাকালীন আপনি অথবা আপনার পরিবারের যে কেউ করোনাভাইসের যেকোনো লক্ষণ সন্দেহ করলে আপনারা মাস্ক পরবেন অন্যদের সুরক্ষার জন্যে।

জর্জিয়ার আটলান্টার ইমোরি ইউনির্ভাসিটি স্কুল অব মেডিসিনের সহকারী প্রভাষক মেরিবেথ সেক্সটন জানান, সর্বাধিক পরিহিত, সস্তা এবং ডিসপোজেবল মাস্ক, যা সার্জিক্যাল মাস্ক হিসেবে পরিচিত, এটি করোনা ভাইরাসকে আটকাতে পারে, তবে নির্মূল করতে পারে না। এমনকি নিখুঁতভাবে ব্যবহারের পরও, এই মুখোশগুলো থেকে কোনো ভাইরাস বা রোগ সংক্রামক জীবাণু পাশ দিয়ে পিছলে যেতে পারে বা চোখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এ ধরনের সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণত হলুদ বা নীল রংয়ের হয়ে থাকে। যা রাবারের মাধ্যমে শক্তভাবে কানের মধ্যে আটকানো যায়। এর মাধ্যমে মুখ, চিবুক ও নাক ঢাকা সম্ভব হয়। আর এসব মাস্কের ওপরে একটি লোহার স্ট্রিপ থাকে, যা সহজে মুখ-নাক ঢেকে রাখে।

তবে ব্যবহারের পাশাপাশি এ ধরনের মাস্ক সঠিকভাবে খোলার বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খোলার সময় খেয়াল রাখা উচিত যেন এতে কোনো ময়লা না লাগে এবং একবারে খোলা যায়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক অথবা মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতে  পরামর্শ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।

বিশেষজ্ঞরা বার বারই বলছেন, সুস্থ থাকলে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। তবে সর্দি-কাশি-হাঁচির উপসর্গ থাকলে অথবা এমন কোনও ব্যক্তির সান্নিধ্যে থাকেন, যার ফ্লু হয়েছে কিংবা করোনায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ, তা হলে অবশ্যই আপনাকে মাস্ক পরতে হবে। এন-৯৫ মাস্ক এ ক্ষেত্রে আদর্শ হলেও একান্ত তা না পাওয়া গেলে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বা ত্রিস্তরীয় কাপড়ের মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) কিংবা সিডিসি আটলান্টার মতো সংস্থা এন-৯৫ র মতো মাস্ক একবার ব্যবহারের পরামর্শই দিয়েছে এ পর্যন্ত। যদিও, সম্প্রতি আমেরিকার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখিয়েছেন, নির্দিষ্ট পদ্ধতি মানলে দ্বিতীয়বারও ব্যবহার করা সম্ভব এন-৯৫ মাস্ক। তবে, বাজারে প্রচলিত অন্য মাস্ক (এন-৯৫ নয়), সার্জিক্যাল মাস্ক এমনকী ত্রিস্তরীয় কাপড়ের মাস্কও দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা সম্ভব।

এক্ষেত্রে গবেষকরা বলছেন, মাস্ক একবার পরলে তার পর পারতপক্ষে সেটির সামনে হাত দেবেন না। বাড়ি ফিরে অত্যন্ত সাবধানে মাস্ক খুলে তা সাবান পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। পরের দিন সকালে ভালো করে পানিতে ধুয়ে ডেটল পানিতে ভিজিয়ে ওই মাস্ক তুলে নিন। মাস্ক বেশি ঘষবেন না বা চিপবেন না। এতে মাস্কের মধ্যে থাকা ফিল্টার (যে মাস্কে থাকে) নষ্ট হতে পারে। কড়া রোদে শুকিয়ে নিয়ে ফের ব্যবহার করুন মাস্ক।

হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করার সময় মাস্ক ব্যবহারে কিছু নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে ৩ ফুটের মধ্যে আসার সময় অত্যাবশ্যকীয়। প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

মাস্ক ব্যবহারকালীন এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। মাস্ক ব্যবহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে আসলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলতে হবে এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলতে হবে এবং সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

হাত ধোয়া সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না। সাবান-পানি ব্যবহারের পর টিস্যু দিয়ে হাত শুকনো করতে হবে। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে/ গামছা ব্যবহার করতে হবে এবং গামছা ভিজে গেলে তা বদল করতে হবে।

মাস্ক ব্যবহার করার চেয়ে খুব প্রয়োজন না হলে ঘরে থাকুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন, নিয়মিত আপনার হাত পরিষ্কার রাখুন।

(ঢাকাটাইমস/৫এপ্রিল/আরজেড/এজেড)