১৪ বছরে অনাথ হওয়া আরশাদের উত্থানের গল্প

বিনোদন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:৫৬

বলিউডের প্রথম সারির একজন অভিনেতা আরশাদ ওয়ার্সি। অনেক ব্যবসাসফল ও সুপারহিট ছবির অংশ তিনি। অথচ এই অভিনেতাকেই একটা সময় অত্যন্ত অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে অনাথ হয়ে যান। সে সময় পেট চালাতে দরজায় দরজায় কসমেটিকস বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

১৯৬৮ সালের ১৯ এপ্রিল মুম্বাইয়ে জন্ম আরশাদ ওয়ার্সির। দেওলালির একটি স্কুলে পড়াশোনা করতেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যেন খুব ছোটবেলা থেকেই সঙ্গী হয়ে উঠেছিল তার। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা-মা দুজনকেই হারান। তখন তার বয়স মাত্র ১৪। তাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। আরশাদের বাবা ছিলেন একজন মিউজিসিয়ান। সেদিক থেকে পারিবারিক আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট স্বচ্ছল ছিল তাদের।

কিন্তু ওই কম বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে অনাথ হওয়া আরশাদ সে সময় পাশে কাউকেই পাননি। যে বাড়িতে তিনি থাকতেন, সেখান থেকে বাধ্য হয়ে মুম্বাইয়ের অন্য একটি বাড়িতে উঠে আসেন। পারিবারিক সম্পত্তির বেশিরভাগই ভাড়াটিয়াদের দখলে চলে যায়।

এদিকে পড়াশোনাতেও ইতি পড়ে গিয়েছিল। কী করবেন, কীভাবে খাবার জোটাবেন, তা ভেবে উঠতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়েই মাত্র ১৭ বছর বয়সে চূড়ান্ত অর্থাভাবে দরজায় দরজায় গিয়ে কসমেটিকস বিক্রির কাজ শুরু করেন আরশাদ। তারপর কিছুদিন একটা ফটো ল্যাবে কাজ শুরু করেন।

ফটো ল্যাবে কাজ করার সময় পরিচালক-প্রযোজক অর্থাৎ অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের বাবা মহেশ ভাটের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এই পরিচালকের সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে ফটোগ্রাফির কাজ পেয়েছিলেন আরশাদ। সে সময় শুটিং সেটে মহেশ ভাটের মেয়ে অভিনেত্রী পূজা ভাটও আসতেন। গুঞ্জন রয়েছে, পূজার সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল তার।

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই জাতীয় স্তরের জিমন্যাস্ট ছিলেন আরশাদ ওয়ার্সি। তাই ফিটনেস বেশ ভালো ছিল তার। সেটার সুবিধা নিয়েই পরবর্তীতে তিনি নাচের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আকবর শামির নাচের দলে যোগ দেন আরশাদ। বেশ কিছু পুরস্কার জেতার পর ‘অসম’ নামে নিজের ডান্স স্টুডিও খোলেন। তখন থেকেই কোরিওগ্রাফার হিসেবে বলিউডে নিজের কেরিয়ার তৈরি করতে শুরু করেন।

১৯৯৩ সালে ‘রূপ কি রানি চোরোঁ কা রাজা’ ছবির টাইটেল ট্র্যাক কোরিওগ্রাফ করার দায়িত্ব পান আরশাদ। আরশাদের ফোকাস স্থির ছিল। তিনি জানতেন, বলিউডে ভালো কোরিওগ্রাফার হতে গেলে কী করতে হবে, কী ভাবে এগোতে হবে।

কিন্তু ভাগ্য তার জন্য অন্য কিছুই লিখছিল। সে সময়ই ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তেরে মেরে স্বপ্নে’ ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে অফার দেন খোদ জয়া বচ্চন অর্থাৎ মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী। ওই ছবিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল।

এরপর একে একে ‘বেতাবি’, ‘মেরে দো আনমোল রতন’, ‘হিরো হিন্দুস্তানি’, ‘হোগি প্যায়ার কি জিত’, ‘মুঝে মেরি বিবি সে বাঁচাও’-এর মতো জনপ্রিয় ছবিগুলোতে অভিনয় করেন আরশাদ। তবে ২০০৩ সালের ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর ‘সার্কিট’ চরিত্রটি তাকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়।

নিজেকে ধীরে ধীরে বলিউডের প্রথম সারির কমেডি অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন আরশাদ। পাশাপশি ‘চকোলেট’, ‘কাবুল এক্সপ্রেস’-এর মতো অন্য ধারার ছবিতেও তার অভিনয় দেখেছেন দর্শক। তার প্রথম সোলো হিট ছিল ‘জলি এলএলবি’-তে আইনজীবীর চরিত্র।

আরশাদের এই সংগ্রাম-পূর্ণ জীবনে তার পাশে থেকেছেন স্ত্রী মারিয়া গোরেতি। যখন আরশাদ কেরিয়ার তৈরির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলতেন, স্ত্রী মারিয়া তাদের পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব একা পালন করতেন।

১৯৯১ সালে একটি কলেজের অনুষ্ঠানে গিয়ে মারিয়া গোরেতির সঙ্গে আলাপ হয় আরশাদের। আট বছরের সম্পর্কের পর ১৯৯৯ সালে তাদের বিয়ে হয়। এই দম্পতির এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

ঢাকাটাইমস/০৫এপ্রিল/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :