অধিকাংশ কারখানা বন্ধ, ফের ভোগান্তিতে পোশাকশ্রমিকরা

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১৭:০৩

বিজিএমইএর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গাজীপুরে অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করছে কর্তৃপক্ষ। আর কিছু কারখানায় চলছে কার্যক্রম। এরই মধ্যে কারখানা খোলার খবরে যেসব শ্রমিক কর্মস্থলে ফিরেছেন, নতুন করে বন্ধ ঘোষণায় তারা পড়েছেন বিপাকে।

এর আগে কারখানা খোলার মালিক পক্ষের সিদ্ধান্তে এক প্রকার বাধ্য হয়েই তারা কর্মস্থলে ফেরেন। দুই দিন নানা দুর্ভোগ সহ্য করে গাজীপুরে আসার পর সকালে কারখানায় গিয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধের নোটিশ পান পোশাকশ্রমিকরা। এখন নতুন করে ফের কারখানা ছুটির ঘোষণা হওয়ায় বিরম্বনা ও আর নানা বাধা উপেক্ষা করে অনেক শ্রমিক ফের ছুটছেন তাদের গ্রামের বাড়িতে। তবে রপ্তানি অর্ডার রয়েছে এবং পিপিই তৈরি করছে- এমন কয়েকটি কারখানা চালু রয়েছে।

কর্মস্থলে ফেরা শ্রমিকরা জানান, নির্ধারিত সময়ে গার্মেন্টেসে পৌঁছাতে না পারলে চাকরি থাকবে না তাদের। মালিক পক্ষের এমন সিদ্ধান্তে বাধ্য হয়েই হেঁটে, ট্রাকে চড়ে ফিরেছেন তারা। অনেকেই রয়েছেন রাস্তায়। এই অবস্থায় হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ ঘোষণায় নতুন করে বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরা। কারখানা বন্ধ থাকায় তারা এখন বেতন-ভাতা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

যেসব কারখানা এখনো খোলা রয়েছে সেসব কারখানার শ্রমিকরা বলছেন, করোনা আতঙ্কে এক সপ্তাহ কারখানা বন্ধ ছিল। এই আতঙ্ক না কাটতেই আবার কারখানা খোলা হয়েছে। সুরক্ষা সরঞ্জাম না থাকা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

গাজীপুর মহানগরীর ইটাহাটা এলাকার পোশাকশ্রমিক রশিদুল বলেন, চাকরি বাঁচাতে শনিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনের স্বল্পতায় হেঁটে, অটোরিকশায়, ট্রাক ও পিকআপযোগে ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুরে আসি। যাওয়ার সময় প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গ্রামের বাড়ি যাই। ঠিক আসার সময়ও দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিয়ে গাজীপুর আসি। সকালে কারখানায় গিয়ে দেখতে পাই ছুটির নোটিস। এই অবস্থায় বাড়ি ফিরতে গেলেও পড়তে হবে নানা বিড়ম্বনায়। ভাড়া বাসায় তাই বাধ্য হয়ে এই কয়দিন বেকার জীবনযাপন করতে হবে।

বাড়ি ফেরা শ্রমিকদের নিয়ে ভোগান্তি: পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত এবং পরে তা বাতিল হওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন গাজীপুরের অধিকাংশ পোশাকশ্রমিক। বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজনীয় গাড়ি না পেয়ে ভোগান্তি বেড়েছে তাদের। সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ফেরার জন্য অপেক্ষা করেন দলে দলে পোশাকশ্রমিক। মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এখন তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, কাভার্ডভ্যানে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। এই সময় ঘরে থাকার সরকারি নির্দেশনাও তারা মানছেন না।

বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষমান শ্রমিকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ এবং বিজিএমই্এ’র সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এখন দুর্ভোগ বেড়েছে তাদের। কারখানা খোলার খবরে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে এবং কারখানা ফের ছুটি দেয়ায় তারা দুর্ভোগ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

এদিকে, গাজীপুরের শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল মিলে শ্রমিক বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে।

সেখানকার শ্রমিকরা জানায়, সরকারিভাবে ছুটির ঘোষণা পেয়ে ২৫ মার্চ তারা নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি চলে যায়। পড়ে রবিবার সকালে কাজে যোগদান করতে গেলে তাদের কারখানায় ঢুকতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। পরে পুলিশ গিয়ে মৃদু লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কে যানবাহন শুরু হয়।

কর্মস্থলে ফেরা শ্রমিকদের তাদের ভাড়া বাসায় অবস্থান করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহবান জানিয়ে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, হাজার হাজার শ্রমিক চলাচলের কারণে সামাজিক দূরত্ব বলতে আমরা যা বুঝি- তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এখন ৫ তারিখ কারখানা খোলার কথা ছিল এবং যারা বাড়ি ফিরে গিয়েছিল- তারা ফেরত এসেছে। আমরা অনুরোধ করব, তারা যেভাবেই আসুক না কেন- তারা যেন বাড়ির ভেতরে থাকে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তারা যেন বাসা বাড়ির বাইরে না আসে।

(ঢাকাটাইমস/৫এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :