ঘরে থাকুন, রাতে বাড়িতে ত্রাণ দিয়ে আসুন: শামীম ওসমান

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ২১:০৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। পাশাপাশি ত্রাণদাতের দিনে গণজমায়েত করে ত্রাণ না দিয়ে রাতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।  

রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে ছেলে অয়ন ওসমানের ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তা তিনি এসব কথা বলেন। 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন আরও একজন।

ভিডিওবার্তায় শামীম ওসমান বলেন, ‘আমরা নারায়ণগঞ্জে লকডাউন চেয়েছি, শুধু লকডাউন না জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ গত বেশ কিছুদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। মাইকিং করছেন। রাজনীতিবিদরা মাইকিং করছেন, মসজিদ থেকে মাইকিং হচ্ছে, তারপরও কিছু সংখ্যক মানুষ সচেতনতার অভাবে রাস্তায় বেরিয়ে আসছেন এবং দলবদ্ধভাবে বেরিয়ে আসছেন, প্রয়োজন ছাড়াই। আমি স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, প্রশাসনের সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা উচিত।’ 

নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্পাঞ্চল উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘এখানে প্রচুর ভাসমান লোক থাকেন। সেই ভাসমান লোকদের কারণে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জে একটি আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই ভাইরাসটিকে ঠেকানোর জন্য যে প্রয়াস আমরা চালাচ্ছি নেই প্রয়াস বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’ 

তিনি জনগণকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি জনগণের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, আমাদের জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সাহায্যের কোনো অভাব নেই। সরকার থেকে সাহায্য আসছে। আমরাও যারা আছি তারাও সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছি। আমরা অনুরোধ করবো, ঘরে থাকুন। যদি ঘরে না থাকেন তাহলে সরকারের প্রশাসনের শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প পথ আর আছে বলে মনে করি না।’

ত্রাণদাতাদের উদ্দেশে নারায়ণগঞ্জের ডাকাবুকো এই রাজনীতিক বলেন, ‘যারা ত্রাণ দিচ্ছেন, সাহায্য দিচ্ছেন তাদের কাছেও অনুরোধ থাকবে, আপনারা দিনের বেলা কোথাও সাহায্য দেবেন না। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, নারায়ণগঞ্জে কোরবানির সময় যেমন গরুর গোশত নেওয়ার জন্য দলবদ্ধভাবে যারা ছুঁটে বেড়ায়, একদম বিত্তহীন মানুষগুলো, ঠিক ওই ভাবে তারা এখন ছুঁটে বেড়াচ্ছে। এতে এই রোগের আরও বিস্তার ঘটার ঝুঁকি আছে।’ 

প্রশাসনকে অবগত করে ত্রাণ বিতরণের আহ্বান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘প্রশাসনকে অবগতকরণ ছাড়া কেউ কোথাও কোনো ত্রাণ দিবেন না। সেটি জানিয়ে দেবেন। দরকার হলে কষ্ট করে স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে রাতের বেলায় ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবেন। যদি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে সমস্যা হয়, আপনাদের কর্মীর সমস্যা হয়, আমাদের জানাবেন। আমাদের কর্মীরা আপনাদের সাহায্যটা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবে।’ 

এর আগে রবিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে লকডাউন বা কাউফিউ জারি করার অনুরোধ জানান। নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক  প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

প্রসঙ্গত, শনিবার (৪ এপ্রিল) সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কাশীপর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুচিন্তানগর এলাকার এক বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পরে রাতে সদর উপজেলার ইউএন নাহিদা বারিক ওই এলাকার তিনশ পরিবারকে লকডাউন ঘোষণা করেন। তবে নারায়ণগঞ্জে প্রথম ৩০ মার্চ করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার রসুলবাগ এলাকার পুতুল (৫০) নামের এক নারী। ঘটনার দুইদিন পর ২ এপ্রিল তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্তের বিষয়টি শনাক্ত হয়।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জে আরো এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে। তিনি ঢাকার বাসিন্দা এবং মানিকগঞ্জের তাবলীগ জামাত থেকে ফিরে শনিবার  নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় মেয়ের বাড়িতে এসে উঠেন। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতে আইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। রবিবার দুপুরে তার করোনা টেস্টের রিপোর্টে পজেটিভ শনাক্ত হয়।

এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ জন। মারা গেছেন ৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন। 

(ঢাকাটাইমস/ ৫ এপ্রিল/ এইচএফ)