প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজের সহায়তা চান সমবায়ীরা

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২০, ০০:০৪ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫৪

মো. আবুল খায়ের

করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব পরিমণ্ডলের জন্য সবচাইতে কঠিন সংকট । বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিগুলো পরাস্ত হয়েছে এ ভাইরাসে । পৃথিবীর বিগত ৭৫ বছরের অর্থনৈতিক অর্জন করোনা মহামারিতে আজ হুমকির সম্মুখীন। এ মহামারির পর বিশ্ব অর্থনীতির চিত্র বদলে গেছে । করোনার কারণে সৃষ্ট মহামারিতে বিশ্বের মতো বাংলাদেশের লাফিয়ে চলা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে থামিয়ে দেবে নিঃসন্দেহে।

করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ এর কারণে সৃষ্ট মহামারি পরবর্তী বাংলাদেশের লাফিয়ে চলা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চলমান রাখার জন্য সরকার ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে সাথে নিয়ে এ প্যাকেজ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ সংবিধানে মালিকানার তিনটি খাত রয়েছে। এই তিনটি খাতের মধ্যে সমবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। এ খাতে এক কোটিরও অধিক লোক ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের এক লাখ ৭৭ হাজার নিবন্ধিত সমবায় সমিতিগুলো বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন বিপনন ও সেবাসংক্রান্ত কাজে জড়িত রযেছে। এ সকল সমবায় সমিতি কৃষি উৎপাদন ও বিপণন, মৎস্য উৎপাদন ও প্রসেসিং, দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন ও সমবায় দুগ্ধ ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ ও নানা ধরনের কাজের সাথে জড়িত ।

করোনার কারণে সকল সেক্টরের ন্যায় এ খাতও থেমে গেছে। নিবন্ধিত সমবায় সমিতিগুলো সাধারণত নিজেদের পুঁজি দিয়ে এ সকল কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে। দেশের সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সকল উৎপাদন ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে কিন্তু আজ তারা দিশেহারা। করোনা মোকাবেলায় সরকারের ঘোষিত প্যাকেজ -২ এর আওতায় দেশের নিবন্ধিত এক লাখ ৭৭ হাজার সমবায় প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে। ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় সমবায়ীদের সমবায় ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ইন্টারমিডিয়ারি হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের নিজস্ব প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে যা বিভিন্ন ব্যাংকে এফ ডি আকারে জমা রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ভূমিকা রাখতে পারে। এ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সচিব , সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক ,জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন, সমবায় ব্যাংক , পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও মিল্ক ভিটা একটি একটি সমন্নিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে সমবায় সমিতিগুলো করোনার কারণে সৃষ্ঠ মহা অর্থনৈতিক সমস্যা হতে উত্তরণ লাভ করতে পারবে। এ জন্য একটি সমন্বিত সুপারিশমালা তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর প্রেরণ করলে সমবায়বান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তা বিবেচনা করবে বলে সমবায়ীদের বিশ্বাস।

জাতির এ দুর্যোগে নিবন্ধিত সমবায় সমিতিগুলো তাদের কৃষি, মৎস্য, দুগ্ধ, ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প, মৃশিল্প, ক্ষুদ্রঝণ ও বিভিন্ন উৎপাদন ও সেবাধর্মী কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে। আজকের এ প্যাকেজ ঘোষণা অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশীয় পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সমবায় প্যাকেজ-২: ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান- ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এ প্যাকেজের সুবিধা সমবায় সমিতিগুলো পেলে এ দেশের ২৯ ধরনের সমবায় প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কৃষি, দুগ্ধ, মৎস্য, মহিলা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্রঝণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের জনগণকে সহায়তা করতে সক্ষম হবে।

এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহীতা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সমবায় প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। এতে করে ব্যাংক ও স্টেকহোল্ডাররা লাভবান হবে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন সকল সেক্টরের লোকজন এ খাত হতে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।

সরকারের এ মহৎ উদ্যোগের ফলে কিছুটা হলেও সকল সেক্টর লাভবান হবে। সেইসাথে লাভবান হবে বঙ্গবন্ধুর সমবায় খাত।

লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, সমবায় অধিদপ্তর ট্রেজারার, ৩১তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন