এপ্রিল '৭১ এর প্রথম সপ্তাহ

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১১:১৮ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১১:৩৮

মজিবর রহমান খোকা

২৫শে মার্চ মধ্যরাতে ঢাকায় পাকবাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার পর সারা দেশের মানুষের মতো আমরাও উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার মধ্যে প্রতিটি দিন কাটাতে লাগলাম । ঠিক এখন যেমন করোনা আতঙ্ক নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে । তখনও সামনে ছিল অনিশ্চিৎ এক ভবিষ্যৎ । পাকহানাদারদের ভয়ে তটস্থ ছিলাম ।

আমরা তখন আব্বার চাকরির সুবাদে নাটোর উত্তর বড়গাছার ওয়াপদার এসডিও বাংলোটিতে থাকতাম । (এটি প্রায় দু'দশক যাবৎ পরিত্যাক্ত।) একমাত্র রেডিও এবং পত্রিকা ছাড়া খবর সংগ্রহের আর কোনো মাধ্যম ছিল না।

২৬ মার্চের পর সব পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলে রেডিও তখন সংবাদের একমাত্র ভরসা হলো । আমাদের একটি ৪ ব্যান্ডের মাঝারি আকৃতির ব্যাটারী চালিত ফিলিপস্ রেডিও ছিল ।

আমরা প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বাসার সামনে কাঁঠাল গাছের (গোলাকার চিহ্নিত স্থানে) নিচে অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ ও মহল্লার কয়েকজন উৎসুখ ব্যক্তি আকাশবাণী, বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার খবর শোনার জন্য একত্রিত হতাম । খবর শেষে নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা হতো ।
নাটোরসহ পুরো উত্তরবঙ্গ তখন বাঙালি পুলিশ, আনসার, সেনাসদস্যদের প্রবল প্রতিরোধে কারণে মুক্ত ছিল । আমরা বিকেলে শহরের কেন্দ্রে নতুন কোনো খবরের আশায় জড়ো হতাম ।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের এক সকালে শহরময় মাইকে প্রচার করা হলো, বিহারী পাড়া লেঙ্গুরিয়া ও জংলীতে পাকসেনারা ছদ্মবেশে অস্ত্রশস্ত্রসহ আশ্রয় নিয়েছে । যাঁদের কাছে বন্দুক বা অন্য কোনো অস্ত্র আছে, তাঁদেরকে শীঘ্র রেলগেটের কাছে চলে আসার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে ।
আব্বার একটি একনলা বন্দুক ছিল । তিনিসহ অন্যান্যরা বন্দুক নিয়ে এবং সাঁওতাল ও আদিবাসীরা তীর-ধনুক নিয়ে সেখানে ছুটলেন । পুলিশ সদস্যরাও রাইফেল নিয়ে ছুটলেন ।

কিছুক্ষণ উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির পর বিহারীরা সাদা পতাকা উত্তোলন করে আত্মসমর্পনের ইঙ্গিত দিলো । একদল পুলিশ এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সেখানে গিয়ে জানতে পেলেন, সেখানে কোনো পাকসেনা নেই । তবুও বিহারীদের বিশ্বাস করা ঠিক হবে না ভেবে, দুটি গ্রামের সকলকে লাইন ধরে হাঁটিয়ে নাটোর জেলখানায় ভরা হলো ।

লেখকঃ মুক্তিযোদ্ধা, আমেরিকা প্রবাসী। প্রকাশক, বিদ্যা প্রকাশ

ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/এসকেএস