বিরুর বীরত্ব আর রইলো না

রিমন রহমান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১১:৩৭

নাম তার বিরু কর্মকার। পেশায় রিকশাচালক হলেও অসহায় নারীদের যৌন হয়রানি করা ছিল তার নেশা। রাজশাহীর কোর্ট স্টেশনে থাকা ভিক্ষুকরা তার শিকার। এদের টাকা-পয়সাও কেড়ে নেন তিনি। স্টেশনের অসহায় নারী ও পথশিশুদের কাছে আতঙ্কের নাম বিরু কর্মকার। তবে বিরুর বীরত্ব অবশেষে শেষ হয়েছে। পুলিশ তাকে এলাকা ছেড়ে নিজের গ্রামে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। অপরাধ স্বীকার করে বিরুও রবিবার দিবাগত রাতের মধ্যেই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কোর্ট স্টেশনপাড়া বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

বিরুর গ্রামের বাড়ি জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম শিরিষ কর্মকার। বিরুর বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর। নগরীর রাজপাড়া থানা সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ওই এলাকার এক অসহায় নারীকে কিছু ব্যক্তি আর্থিক সহযোগিতা করেন। ওই নারীর কাছে টাকা থাকার খবরটি কানে যায় বিরুর। এরপর কয়েকদিন থেকেই বিরু ওই নারীর টাকাগুলো কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। টাকা না দেয়ায় রবিবার ওই নারীকে মারধরও করেন বিরু। তার চোখে সুঁই ঢুকিয়ে দেয়ারও হুমকি দেন।

তবে ওই নারী কোনোভাবেই টাকা দেননি। তিনি বিষয়টি দুই ব্যক্তিকে অবহিত করেন। এরপর তারা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। এরপর বিরুর বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করে পুলিশ। এতে কোর্ট স্টেশন এলাকায় বিরুর নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর রবিবার রাত ৯টার দিকে কোর্ট স্টেশনের প্লাটফরমেই বিরুকে পেয়ে যায় পুলিশের একটি দল। তারা বিরুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় স্টেশনেই থাকা কয়েকজন পথশিশু বিরুর বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করে। বেরিয়ে আসে বিরুর নানা অপরাধের চিত্র। বিরুও তার নানা অপরাধের কথা স্বীকার করে ক্ষমা চান। থানায় বিরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা করবেন এমন কাউকে না পাওয়ার কারণে পুলিশ বিরুকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। বিরু ১০ মিনিটের মধ্যেই ভাড়া বাড়ি ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ার কথা জানান।

স্থানীয়রা জানান, স্টেশনে এতোদিন অসহায় নারী ও কিশোর-কিশোরীদের কাছে বীরত্ব দেখাতেন মাদকসেবি বিরু। তাদের টাকা-পয়সা কেড়ে নিতেন। স্টেশনে রাতে থাকা ভিক্ষুকদের ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কাউকে কাউকে বস্তিতে নিজের ঘরে নিয়েও রাখতেন বিরু। বাধ্য করতেন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়ানোর পর তাড়িয়ে দিতেন।

স্টেশনেই রাতে বিরু কর্মকারের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। বিরু কয়েকজনকে বিয়ে করার দাবি করে বলেছেন, বিয়ের পর ওই নারীরাই পরে আর তাকে পাত্তা দেননি। চলে গেছেন। তবে কোথায় বিয়ে হয়েছে তা জানাতে পারেননি বিরু। তার কাছে কাউকে বিয়ের কাগজপত্র নেই বলেও জানিয়েছেন।

তবে স্টেশনে কয়েকজন ভিক্ষুককে যৌন হয়রানি এবং তাদের টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়ার অভিযোগ স্বীকার করেছেন তিনি। বলেছেন, এসব করা ঠিক হয়নি। আর কখনও করবেন না।

বিরু আগে গ্রামে থাকতেন। ঘর-সংসার সবই ছিলো। প্রায় সাত বছর আগে বিরুর স্ত্রী তাকে ছেড়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। তারপর শহরে চলে আসেন বিরু। কোর্ট স্টেশনপাড়া বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। তারপর এ এলাকায় আলাদা রাজত্ব গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন খান বলেন, বিরুর বিরুদ্ধে প্রথমে এক নারীর কাছ থেকে জোর করে টাকা কেড়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া যায়। তারপর পুলিশের একটি দলের সরেজমিন তদন্তে তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অপরাধের অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা করার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই বিরুকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তিনি গ্রামে চলে যেতে চেয়েছেন। ভবিষ্যতে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/আরআর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :