পড়াশোনা ক্লাস থ্রি, তাকে নিয়ে পিএইচডি করছেন ৫ জন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১২:২২

পরণে সাদা ধুতি আর সাদা কুর্তা। খালি পা, পিঠে গড়িয়ে পড়েছে কোকড়ানো, তেলতেলে লম্বা চুল। সম্বলপুরের রাস্তায় চানা-ঘুগনি বিক্রেতা এই ব্যক্তিকে অনেকেরই চোখে পড়ে না। বা অনেকে দেখেও চোখ ঘুরিয়ে চলে যান হয়তো! তবে তাকে যতটাই হীন মনে করুন না কেন, পোশাক বা বাহ্যিক রূপ দিয়ে কিন্তু এই মানুষটিকে বিচার করা সম্ভব নয়। অত্যন্ত সাদামাটা ভাবে জীবন কাটানো এই মানুষটির মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে এক গভীর প্রতিভা।

ইনি ভারতের এক জনপ্রিয় কবি। নাম হলধর নাগ। পদ্মশ্রী সম্মানও দেওয়া হয়েছে তাকে। তার জীবন সংগ্রাম যত জানবেন, ততই আরও অবাক হয়ে উঠবেন। তার কলমে মুক্তো ঝরে পড়ে, তিনি মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন।

ওড়িষার সম্বলপুর থেকে ৭৬ কিলোমিটার দূরে বরগড় জেলা। এই জেলাতেই ১৯৫০ সালে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান। বাবাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। সে কারণে তৃতীয় শ্রেণির পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। বরং খুব কম বয়সে প্রথমে একটা মিষ্টির দোকানে বাসনপত্র ধোওয়ার কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয় তাকে।

এর দু’বছর পর তাকে কাছের একটি স্কুলে পাঠানো হয়। তবে সেই স্কুলে পড়াশোনার জন্য তাঁকে পাঠানো হয়নি, পাঠানে হয়েছিল স্কুলের রান্নার কাজের জন্য। ১৬ বছর ওই স্কুলের রাঁধুনি হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। ওই এলাকায় যখন আরও অনেক স্কুল খুলতে শুরু করে, হলধর তখন ব্যাঙ্ক থেকে এক হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্কুলের বাইরে একটি ছোট স্টেশনারি দোকান চালু করেন।

ছোট থেকেই তিনি কোসলী ভাষায় ছোটগল্প লিখতেন। যে জন্য তিনি এত জনপ্রিয় হয়েছেন, সেই কবিতা লেখা অবশ্য শুরু করেছিলেন অনেক পরে। ১৯৯০ সালে প্রথম কবিতা লেখার জন্য কলম ধরেন। ‘ধোদো বরগাছ’ অর্থাৎ বুড়ো বটগাছ নামে তার প্রথম কবিতা স্থানীয় ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। আরও চারটি কবিতা লিখে পাঠান তিনি। সেগুলোও পরে ওই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।

তার সবকটি কবিতাই প্রশংসিত হয়। এর পর তিনি আরও কবিতা লিখতে শুরু করেন। ধর্ম, প্রকৃতি, সমাজ- এ রকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি লিখতে শুরু করেন। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এই ছেলের হাতে কলম যেন জাদুর মতো কাজ করে। সমাজে তিনি ‘লোক কবি রত্ন’ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

এই মুহূর্তে তার কবিতা নিয়ে পিইচডি করছেন পাঁচ জন। তার সমস্ত কবিতা একত্রিত করে ‘হলধর গ্রন্থাবলী’ প্রকাশ করেছে সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ‘হলধর গ্রন্থাবলী’-এর দ্বিতীয় পর্বও প্রকাশ করতে চলেছে তারা।

২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ২০১৯ সালে তিনি সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিও অর্জন করেন।

কিন্তু কী আশ্চর্যের, জীবনযাত্রার কোনও বদল ঘটেনি এই কবির। এখনও আগের মতোই সেই অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেন তিনি। এখনও ওই ছোট দোকান থেকেই উপার্জন করে দিন গুজরান করেন। ওড়িষার রাস্তায় সাদা ধুতি গায়ে, খালি পায়ে মাঝে মাঝে চানা-ঘুগনিও বেচতে দেখা যায় তাকে। তার স্ত্রীর নাম মালতি নাগ, তাঁদের একটি মেয়ে রয়েছে।

ঢাকা টাইমস/০৬এপ্রিল/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এখনই প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা নেই: ইরানি কর্মকর্তা

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনায় বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম

ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়ার প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দিয়েছিলো ইসরায়েল: মার্কিন কর্মকর্তা

পাকিস্তানের জাপানি নাগরিকদের গাড়ি লক্ষ্য করে আত্মঘাতি বোমা হামলা, হতাহত ৫

ইরানে প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু

৩টি ইসরায়েলি ড্রোন ধ্বংস করল ইরান

ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের

ভারতে লোকসভার ভোট শুরু

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতায় চরম বিশৃঙ্খলা, যাত্রীদের দুর্বিষহ অবস্থা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :