‘জাল না ফেললে খাব কি’

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১৩:১৩ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১৩:৫৯

মাছুম বিল্লাহ, লালমোহন (ভোলা)

একদিকে নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি এ দুইয়ে মিলে জেলে পল্লীতে বিরাজ করছে হাহাকার। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে দৈনিক মুজুরিতে অন্য কাজ করে সংসার চালান জেলেরা। কিন্তু করোনার এ দুর্যোগকালে অন্য কাজেরও সুযোগ কমে গেছে। এ অবস্থায় পেটের দায়ে কাজের সন্ধানে বাইরে বের হয়েছেন ভোলার লালমোহনের ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ের জেলে নুরুদ্দীন। তার মতো আরও অনেকেই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাধ্য হচ্ছেন নদীতে জাল ফেলতে।

নুরুদ্দীন বলেন, ‘ নদীতে জাল না ফেললে খাব কি, কোন ত্রাণও আমরা পাইনি। জেলে কার্ডের চালও দেওয়া হয়নি আমাদের।’

সরেজমিনে ভোলার লালমোহনের ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ের কামারের খাল জেলে পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপকূলীয় জেলে পল্লীর জেলেরা। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সবমিলিয়ে গত কয়েক দিনে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

জেলেরা জানান, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছ ধরা নিষেধ রয়েছে। এই সময় জেলেদের চার মাস ভিজিএফের চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু মার্চ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাদের চাল দেওয়া হয়নি। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে তাদের যে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল তাও তারা পায়নি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের চেয়ে তাদের কাছে তিন বেলা খাবার খেয়ে জীবন বাঁচানোটাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। তাই পেটের দায়ে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই তাদের কেউ কেউ নদীতে মাছ ধরতে নামছেন।

মেঘনা পাড়ের বেড়িবাঁধের জেলে রিয়াজ মাঝি জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীতে নামছেন না। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে ঘর থেকেও বের হতে মানা করা হয়েছে। এভাবে পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে বাঁচা সম্ভব না। তাই অন্যের জাল বুনে যা পায় তা দিয়েই সংসার চালায় তিনি।

ধলীগৌরনগর ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু জানান, মেঘনা কূলবর্তী এলাকায় মোট ৪৩০০ জেলে রয়েছে। কিন্তু চাল বরাদ্দ হয়েছে ২০৬৩ জনের জন্য। করোনার কারণে চাল দেওয়া দেরি হয়েছে। তবে আগামী বুধ অথবা বৃহস্পতিবার জেলেদের চাল দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৫৩০০ বলে জানান সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস। তবে তাদের সবাই সরকারি সহযোগিতা পান না বলেও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান রুমি বলেন, ‘প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বলে দিয়েছি দু’একদিনের মধ্যে চাল দেওয়ার জন্য।’

ঢাকাটাইমস/০৬এপ্রিল/পিএল