কমার পর ফের ইতালিতে বাড়ল মৃত্যুর সংখ্যা

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২০, ২৩:১৪ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০, ২৩:৩৭

কমরেড খোন্দকার, ইউরোপ ব্যুরো

করোনাভাইরাসের ফলে ইউরোপের দেশ ইতালি এখন মৃত্যুপুরী। টানা কয়েক দিন ধরে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসায় কিছুটা আশার আলো দেখছিলেন দেশটির অধিবাসীরা। তবে আজ আবার বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। সোমবার নতুন আক্রান্ত তুলনামূলক কম হলেও মৃত্যুবরণ করেছে ৬৩৬ জন। রবিবার মারা যায় ৫২৫ জন, যা গত ১৯ মার্চের পরে সবচেয়ে কম।

এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে ৮৭ জন ডাক্তার রয়েছেন। একদিনে নতুন আক্রান্ত তিন হাজার ৫৯৯ জন। দেশটিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। রবিবার ছিল এ সংখ্যা মোট তিন হাজার ৮৯৮ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১০২২ জন। চিকিৎসাধীন ৯৩ হাজার ১৮৭ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৩২ হাজার ৫৭৪ জন বলে জানিয়েছেন নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি।

তিনি বলেন, জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে এ পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ২২ হাজার ৮৩৭ জন।

ইতালির ২১ অঞ্চলের মধ্যে লোম্বারদিয়ায় করোনার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত (মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়া, ক্রেমনাসহ) ১১টি প্রদেশ। সোমবার এ অঞ্চলে মারা গেছে ২৯৭ জন। গতকালের চেয়ে আজ সংখ্যায় বেশি, রবিবার মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৪৯ জন। শনিবার এ সংখ্যা ছিল ৩৪৫ জন। শুধু এ অঞ্চলেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে নয় হাজার ২০২ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৩৪ জন। আজ  মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৮৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪৪৩ জন।

লোম্বারদিয়ার প্রেসিডেন্ট আত্তিলিয়ো ফোনতানা জানান, আজ  থেকে চালু হচ্ছে আপদকালীন অস্থায়ী হাসপাতাল ফেয়ারা মিলানো সিটি। ফেয়ারা মিলানো সিটি পরিণত হয়েছে ইতালির সবচাইতে বড় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। ২০০ আইসিইউ বেডসংবলিত অত্যাধুনিক এই হাসপাতালটি পলি ক্লিনিকের তত্ত্বাবধানে ২০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৫০০ অভিজ্ঞ নার্স এবং ২০০ স্বাস্থ্যকর্মী চব্বিশ ঘণ্টা নিয়োজিত থাকবেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচাতে।

তিনি আরো বলেন, এখনো অনেক লোক অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা করছে। তিনি সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন। এছাড়াও তিনি বলেন, কেউ মাক্স ছাড়া বাইরে বের হবেন না। লোম্বারদিয়া এলাকায় ফার্মেসিগুলোতে সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে জনসাধারণের জন্য মাক্স এবং হাতমোজা ফ্রিতে দেয়া হবে। অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য মাক্স ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ইতালিজুড়েই চলছে লকডাউন। এদিকে স্টার সানডেকে সামনে রেখে ইতালির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেগা নর্দ নেতা মাথেও সালভিনি আবারও দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে সব গির্জা প্রার্থনার জন্য খুলে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন।

তিনি বলেন, দেশের এই দুর্দিনে আমাদের প্রত্যেকেরই প্রার্থনা করা উচিত।

এদিকে ইতালির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বিনা শর্তে ২৫ হাজার ইউরো পযর্ন্ত লোন দেয়ার একটি বিল অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাস করা হয়েছে। আর এ খাতে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাত বিলিয়ন ইউরো।

ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে পোস্ট অফিসে বয়স্কভাতা নিতে যাওয়া লোকজনদের ভিড় সামলাতে ক্যারাবেনেরি ও সেনা মোতায়ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের এই দুর্দিনে ৭ হাজার ২২০ জন অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স কর্মী স্বাস্থ্যসেবা দিতে করোনায় আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে রবিবার চীন থেকে ইতালির পালেরমো এলাকায় ৪০ টন চিকিৎসাসামগ্রী এসে পৌঁছেছে। শনিবার মিশরের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে ইতালিতে এসেছেন। এছাড়াও করোনায় আক্রান্তদের সহযোগিতায় আলবেনিয়া, চীন, কিউবা এবং রাশিয়া থেকে আগত মেডিকেল টিম ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/০৬এপ্রিল/এলএ)