১৫ লাখ বাসিন্দার শেরপুর ধারণ করেছে অচেনা রূপ

সুজন সেন, শেরপুর
 | প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১৯:২৮

শেরপুরে দুই নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এবার খোদ জেলায় লকডাউনে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ বাসিন্দার জেলা শেরপুর ধারণ করেছে এক অচেনা রূপ। বর্তমানে জেলার সদর উপজেলাসহ অন্য চার উপজেলার অভ্যন্তরীণ প্রায় সকল সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসনের জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তিসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নজরদারি এবং পুলিশের কড়া অবস্থানে ওই অবস্থা নেমে আসে। প্রশাসনসহ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবও টহলে নেমেছে। এছাড়া শহরের কয়েকটি এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন কার্যকরে নেয়া হয়েছে স্থানীয় উদ্যোগ।

সিভিল সার্জন ডা. একেএম আনোয়ারুর রউফ জানান, রোগীদের মধ্যে একজন সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্যবয়রা সরকারবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ, আরেকজন শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মী। ৫ এপ্রিল করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে জেলা শহরের খোয়ারপাড়, থানামোড়, নতুন বাস টার্মিনাল ও শেরীব্রিজ এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ওই মোড়গুলোতে অন্যান্য দিনের চেয়ে এদিন শক্ত অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। তাদের ওই অবস্থানের কারণে অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়ি ও হালকা যান ছাড়া ইজিবাইক, রিকশা ও মোটরসাইকেলসহ সাধারণ মানুষের যাতায়াত প্রায় বন্ধ রয়েছে।

ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকারের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ফলে একদিকে শহর যেমন হয়ে পড়েছে জনশূন্য, তেমনি অনেকটাই নীরব ও নিথর। কোথাও দুই একজন করে শহরে প্রবেশ করতে চাইলেই তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন। অনিবার্য সমস্যা ছাড়া তাদের শহরে প্রবেশে ও যাতায়াতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

একই ধরনের চিত্র জেলার নালিতাবাড়ী, নকলা, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলাতে।

এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় শেরপুর-ঝিনাইগাতী, শেরপুর-নালিতাবাড়ী-নন্নী, শ্রীবরদী-বকশীগঞ্জ সড়ক যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি নকলা ও শ্রীবরদীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে কিংবা বাঁশ বেঁধে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

জেলা শহরের নবীনগর, মীরগঞ্জ, রাজবল্লভপুর, মধ্যশেরী বাড়ইপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় উদ্যোগে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ওইসব এলাকায় কাউকে প্রবেশ বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না। ওইসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, করোনা পরিস্থিতি থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতেই তাদের ওই উদ্যোগ।

নবীনগর মহল্লার সোবহান উদ্দিন জিহান বলেন, আমরা সচেতন না বলেই আজ শেরপুরে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে যেন এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে না পড়ে এ বিষয়ে আমাদের মহল্লার শতাধিক মানুষ একজোট হয়ে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। প্রয়োজনে এলাকার সকল দরিদ্রদের দায়িত্ব আমরাই নেব।

সদরের কৃষ্ণপুর গ্রামের নাঈম বলেন, গ্রামটা আমাদের তাই দায়িত্বটাও আমাদের এ স্লোগানকে সামনে রেখে গ্রাম করোনা মুক্ত রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এর অংশ হিসাবে বাঁশের খুঁটি দিয়ে গ্রামে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। যারা গ্রামে ঢুকছেন নেয়া হচ্ছে পরিচয়, জানতে চাওয়া হচ্ছে প্রবেশের কারণ।

কৃষ্ণপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা মোকাদ্দেস হোসেন জানান, ২৪ ঘন্টা পালাক্রমে নিজেদের সুরক্ষার জন্য এই দায়িত্ব পালন করছেন গ্রামবাসী। করোনার প্রকোপ না কমা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। গ্রামে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। আনিছুর রহমান, সোলাইমান কবির, শাহাদাত হোসেন শিপলু, সোহাগ সরকার ও মতিন সরকারসহ গ্রামের অন্যান্য তরুণ গ্রাম সুরক্ষায় বিভিন্নভাবে সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে নাগরিক সংগঠক জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রায় ১৫ লাখ বাসিন্দার জেলা শেরপুর ধারণ করেছে এক অচেনা রূপ। বিলম্বে হলেও লকডাউন কার্যকরে প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার লোকজন স্ব-উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন।

তিনি জানান, ঘরে থাকা ও সচেতন হওয়া ছাড়া আমাদের কোন গত্যন্তর নেই।

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম স্যারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে উপজেলার সব হাট-বাজারে টহল, মাইকিং, জীবাণুনাশক স্প্রে, ওষুধ ও কাঁচামালের দোকানে দোকানে বৃত্ত, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, কর্মহীন শ্রমজীবি অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে। সবার উচিত সরকারের নির্দেশনা মেনে চলা। কেউ তা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, জনগণের অপ্রয়োজনীয় চলাচলকে নিরুৎসাহিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের উদ্যোগে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।

শেরপুর করোনা সেলের ভোকাল পার্সন ডা. মোবারক হোসেন বলেন, দুই করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই স্বাস্থ্য বিভাগ দুটি গ্রামের পাঁচ শাতাধিক বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে। এছাড়া করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় রোগীদের সংস্পর্শে থাকা আরও ২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষার জন্য মঙ্গলবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৭এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :